বিবৃতি
ইউক্রেন সংকট : সিপিআই(এমএল) বিবৃতি
CPIML Statement

রাশিয়া ইউক্রেন সীমান্তে সামরিক আগ্রাসন জাহির করায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। বর্তমান সংকটের নিরসন আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবেই করতে হবে, এবং ইউক্রেনের জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের ভিত্তিতেই তা হতে হবে।

এই সংকটের আশু প্রশমনে রাশিয়াকে ইউক্রেন সীমান্ত থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করে নিতে হবে। রাশিয়া এবং তার সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোকেও ইউক্রেনে হস্তক্ষেপ থেকে বিরত থাকতে হবে। রাশিয়া এবং ইউক্রেন যে দুটো মিনস্ক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে তার ভিত্তিতেই তাদের কূটনৈতিক সমাধানে পৌঁছতে হবে।

ইউক্রেনকে কেন্দ্র করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং গ্রেট ব্রিটেন সরকার যুদ্ধে যে প্ররোচনা দিয়ে চলেছে আমরা তাকে ধিক্কার জানাচ্ছি। ন্যাটোকে তার পূবমুখী সম্প্রসারণ থামাতে হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং গ্ৰেট ব্রিটেন যে ন্যাটোকে আত্মরক্ষামূলক জোট বলে দাবি করছে, তার বিপরীতে বিগত এক প্রজন্মকাল ধরে আফগানিস্তান, যুগোস্লাভিয়া এবং লিবিয়ায় তাদের কীর্তিকলাপ সুস্পষ্ট রূপেই তাদের সাম্রাজ্যবাদী অভীপ্সাকেই প্রতীয়মান করে, ইরাকের ওপর মার্কিন-ব্রিটিশ হানাদারির কথা না হয় না বলাই হল। রাশিয়া সহ সারা ইউরোপের যুদ্ধ-বিরোধী আন্দোলনগুলোর প্রতি আমরা সংহতি জানাচ্ছি, এবং ইউরোপে নতুন করে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তিতে পৌঁছানোর ও পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের দিকে এগিয়ে যাবার যে উদ্যোগগুলো গোটা মহাদেশে চলছে আমরা সেগুলোকে স্বাগত জানাচ্ছি।

- সিপিআই (এম-এল) কেন্দ্রীয় কমিটি

Statement on Ukraine

(পুনশ্চঃ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের দুই অঞ্চল ডোনেৎস্ক ও লুহানস্ক-কে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র বলে ঘোষণা করেছেন এবং এই দুই অঞ্চলে প্রবেশ করতেও রুশ সেনাদের নির্দেশ দিয়েছেন। দুই অঞ্চলে রুশ ভাষাভাষী মানুষের বাস এবং তারা মস্কোর প্রতি অনুগত হলেও এই আগ্ৰাসন মেনে নেওয়া যায় না। রাশিয়ার এই পদক্ষেপ খুব স্বাভাবিক ভাবেই ইউক্রেন পরিস্থিতিকে জটিলতর ও আরও সংকটময় করে তুলেছে।

সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর অন্যান্য আরো কয়েকটা অঞ্চলের মতো ইউক্রেনও সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে ১৯৯১ সালে। এরপর ২০১৪ সালে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত ইউক্রেনের রুশপন্থী প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ সরকারের পতন ঘটানো হয় এবং তার জন্য রাশিয়া আঙুল ওঠায় আমেরিকা এবং পশ্চিম দুনিয়ার চক্রান্তের বিরুদ্ধে। ইউক্রেনে সরকারের এই পরিবর্তনের পর রাশিয়া ২০১৪ সালে ইউক্রেনের অংশ ক্রাইমিয়া দখল করে তাকে রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত করে নেয়। ইউক্রেনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি আবার আমেরিকা-ব্রিটেনের বশংবদ বলেই সমধিক পরিচিত।

ইউক্রেনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে আমেরিকা এবং ব্রিটেন ও পশ্চিম দুনিয়ার অন্যান্য দেশ রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন সংসদে জানিয়েছেন, ইউক্রেনে সেনা ও যুদ্ধ সরঞ্জাম পাঠিয়ে তাঁরা ইউক্রেন সরকারকে সাহায্য করছেন। ইউক্রেনকে কেন্দ্র করে রাশিয়া এবং পশ্চিম দুনিয়ার সংঘাত কি প‌থিবীকে আবার বিপন্ন করে তুলবে? আগামী বৃহস্পতিবার ২৪ ফেব্রুয়ারি জেনিভায় মার্কিন বিদেশ সচিব ব্লিঙ্কেন এবং রুশ বিদেশ মন্ত্রী সের্গেই লাভারভের মধ্যে বৈঠক হওয়ার কথা। আমরা চাই, সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষকে যুক্ত করে আলোচনা হোক এবং সেই আলোচনায় ইউক্রেনের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারকে স্বীকার করে নিয়ে রাশিয়া এবং পশ্চিম দুনিয়া ইউক্রেনে হস্তক্ষেপ থেকে দূরে থাকুক। — সম্পাদকমন্ডলী, আজকের দেশব্রতী)

খণ্ড-29
সংখ্যা-8