সম্পাদকীয়
বিজেপি ব্যস্ত বিদ্বেষী কুৎসায়
BJP is busy slandering

আনিস হত্যাকাণ্ডোর বিচার চাই, হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই দাবিতে কলকাতা থেকে শুরু করে দক্ষিণবঙ্গ থেকে উত্তরবঙ্গ যখন উত্তাল, এই পরিস্থিতি থেকে শাসক তৃণমূল যখন পরিত্রাণ কিভাব মিলবে বুঝে উঠতে হিমসিম খাচ্ছে, তখন রাজ্য বিধানসভায় বিরোধীদল হয়ে থাকা বিজেপিকে এই উথাল পাথাল ইস্যুতে রাস্তায় দেখতেই পাওয়া যাচ্ছে না। বিজেপির বিধায়ক ইতস্তত বলছেন, দলনেতা আনিসের পরিবার চাইলে পাশে থাকবেন। কিন্তু সেটা আসলে চূড়ান্ত ভেক। গত বিধানসভা নির্বাচনে ‘সংখ্যালঘু তোষণমুক্ত’ বাংলা তৈরির বাজি ধরে ব্যর্থ হওয়ার পর কি আনিস হত্যার বিচার চাওয়া যায়? মানুষ সেটা বরদাস্ত করবে না। ওনাদের দলও অনুমোদন করবে না। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিজেপির উত্তর কলকাতা জেলা সভাপতি ভাষা আন্দোলনের দিবসে আনিস হত্যার ইস্যুতে একটা কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে ফেলেছিলেন। কিন্তু তিনি দলের রাজ্য কোর পরিচালনবর্গের অন্তর্ভুক্ত নন এবং যথারীতি সেখান থেকে অনুমোদন পাননি। বরং দলে ছড়ি ঘোরানোর ক্ষমতাবান নেতারা দিবসের কর্মসূচির বিষয়টি দিলেন ঘুরিয়ে। দল অবশেষে আনিস হত্যার ইস্যু খারিজ করে পালন করল সাড়ে তিন বছর আগের দাড়িভিটার আন্দোলনে নিহত ছাত্রদের স্মরণ কর্মসূচি। বিজেপির কাছে ঐ ইস্যুটা ছিল বাংলা মাধ্যমের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উর্দু পড়ানোর শিক্ষক নিয়োগের বিরোধিতার নামে বিদ্বেষ-বিভাজনের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। সেইমতো এবারও একই মনোভাব থেকে বিজেপি আনিস হত্যাকান্ডের ইস্যুতে কুৎসা প্রচার জুড়তে ছাড়েনি। আনিস আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আন্দোলন থেকে উঠে আসা তরুণ তুর্কী। প্রগতি আন্দোলনের সহচর। একইসঙ্গে এনআরসি-সিএএ বিরোধী আন্দোলনে সামনের সারির এক সাহসী পরিচিত মুখ। ২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে বাংলায় রুখে দেওয়ার পেছনেও আনিসের ভূমিকা ছিল নির্ভীক সক্রিয়। বিজেপি এসব যথেষ্ট নজরদারিতে রেখেছিল। আর ওরা ক্ষমতায় আসতে পারলে নিশ্চিতভাবেই আনিসদের নিশানা করত। তাই বিজেপির পক্ষে আনিস হত্যার বিষয়ে বিহিত চেয়ে সরব হওয়া মুশকিল। বরং বিরত থাকার অবস্থান সম্পর্কে দলের প্রভাবিত সামাজিক ভিত্তিকে বশে রাখতে প্রচার করতে হচ্ছে জঘন্য কুৎসা। সামাজিক মাধ্যমে আনিসের ও আনিস সম্পর্কে বিভিন্ন পোস্ট থেকে নাকি বুঝে নেওয়া যায় তার সাথে নাকি ‘ভারতবিরোধী শক্তির যোগাযোগ ছিল!’ সেই একই মিথ্যাচার! ভূয়ো প্রচারের শয়তানি! এইসব বলেই ওরা উত্তরের সীমান্ত উপত্যকার যুবশক্তিকে, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদে আন্দোলনে আপসহীন একরোখা থাকা ছাত্রসমাজকে অহরহ ‘দেশবিরোধী’ ‘দেশকে টুকরো টুকরো করা’র অভিযোগে দাগিয়ে দিতে চায়। তাই বিজেপির কাছে আনিস হত্যার ঘটনায় ন্যায়বিচারের দাবি তোলার কোনও প্রাসঙ্গিকতা নেই। বরং চেষ্টায় থাকবে যাতে আনিসের মৃত্যুকে স্মরণ করে এনআরসি-সিএএ বিরোধী প্রচার যাতে দানা বেঁধে অব্যাহত থাকতে না পারে। এই সময়ে দেখাও গেল, রাজ্য বিজেপি নেতারা বলে বেড়াচ্ছেন, ‘একজন মুসলিম মারা গেছে, তাই সবাই এখন খুব ঝাঁপাচ্ছে ...’। আর জেলায় জেলায় সফরের প্রচারে বিজেপি রাজ্য সভাপতি দর্প দেখাচ্ছেন, আজ হোক-কাল হোক সিএএ-এনআরসি করা হবে।

এর বিপরীতে, তাই সমান নাগরিকত্বের অধিকারকে সংখ্যালঘু বিদ্বেষী কোপে টুকরো করার অভিলাষ কখন কি রূপ নেয় সে বিষয়ে মোকাবিলায় এতটুকু শিথিলতা দেখালে চলবে না। এই চেতনায় আনিস হয়ে থাকুক প্রেরণার নজির।

খণ্ড-29
সংখ্যা-8