এআইকেএম ও এআইএআরএলএ’র আহ্বান দেশ বাঁচাও — দেশের কৃষি ও কৃষক বাঁচাও
Save the country

২৮-২৯ মার্চ গ্রামীণ ভারত বনধ্ সফল করুন

কৃষকদের কর্পোরেটের গোলামে পরিণত করার লক্ষ্যে আনীত তিন কৃষি আইন কৃষক আন্দোলনের চাপে মোদী সরকার প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয়েছে। দীর্ঘ একবছর ধরে চলা সেই ঐতিহাসিক কৃষক আন্দোলনের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে শ্রমিকশ্রেণী ও দেশের সর্বস্তরের মানুষ। গড়ে উঠেছে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মেহনতি মানুষের অভূতপূর্ব সংগ্রামী ঐক্য। মোদী সরকারের হাত থেকে দেশ ও দেশের মানুষকে বাঁচানোর আন্দোলনে সেই একতা আজ আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। কৃষক আন্দোলন পথ দেখিয়েছে। ফ্যাসিস্ট ও কর্পোরেটের দালাল মোদী সরকার হঠাও দেশ বাঁচাও আওয়াজ তুলে দেশের মানুষ পথে নেমেছে।

বর্তমানে মোদী সরকার নয়া শ্রমকোড চাপিয়ে শ্রমিকদের অর্জিত অধিকার হরণ করে ব্যাপক শ্রমজীবী মানুষকে দাস শ্রমিকে পরিণত করতে চাইছে। ৮ ঘণ্টা শ্রমের অধিকার, ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ, ট্রেডইউনিয়ন করার অধিকার এসমস্ত কিছুই ওরা তুলে দিতে চাইছে। ব্যংক, বীমা, রেল, প্রতিরক্ষা শিল্প সহ দেশের সমস্ত সরকারি ক্ষেত্রগুলির বেসরকারিকরণ, ঠিকা-কন্ট্রাক্ট প্রথাকে স্থায়ী রূপ দেওয়া, যখন তখন ছাঁটাই, কর্মসংকোচন, মজুরি কমিয়ে দেওয়া, কাজের সময় বাড়িয়ে দেওয়া, যতটুকু সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা ছিল সবকিছু বন্ধ করা — এসবের মধ্য দিয়ে মোদী সরকার দেশের মানুষের প্রতি যুদ্ধ ঘোষণা করেছে।

এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে আগামী ২৮-২৯ মার্চ সারা ভারত সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে দেশের কেন্দ্রীয় ট্রেডইউনিয়ন ও ফেডারেশনগুলি। দেশের পাঁচ শতাধিক কৃষক সংগঠনগুলির সংগ্রামী মঞ্চ সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা ও সারা ভারত কৃষক সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি এই ধর্মঘটে সামিল হয়ে ঐ দু’দিন গ্রামীণ ভারত বনধের আহ্বান জানিয়েছে।

মোদী সরকার কৃষক আন্দোলন স্থগিত রাখার সময়কালে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পালন করেনি, চরম বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। তাই চলমান কৃষক আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে, ফসলের ন্যয্য দাম গ্যারান্টি আইন প্রণয়ন, কিষাণ আন্দোলনের কর্মীদের উপর থেকে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, গাড়ি চাপা দিয়ে কৃষক হত্যাকারী কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর শাস্তি প্রভৃতি দাবিগুলির পাশাপাশি ঋণমুক্তি, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে কৃষকের ফসলের ক্ষতিপূরণ, কর্মনিশ্চয়তা প্রকল্পে ২০০ দিনের কাজ ও ৬০০ টাকা মজুরি, ভাগচাষি লিজচাষি সহ কৃষকদের কাছ থেকে সরকারি দরে ফসল কেনা, গ্রাম উন্নয়নে বরাদ্দ বৃদ্ধি প্রভৃতি দাবিতে এই গ্রামীণ ভারত বনধ্ সংগঠিত হবে।

স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ব্যবস্থাকে কর্পোরেটদের মুনাফার ক্ষেত্রে পরিণত করে দেওয়া, পেট্রোল ডিজেল সহ সমস্ত নিত্যপণ্যের সীমাহীন মূল্যবৃদ্ধি ও বেকারত্ব সৃষ্টিকারী নীতির বিরুদ্ধে দেশের সর্বস্তরের মানুষ এই সাধারণ ধর্মঘট ও গ্রামীণ ভারত বনধে সামিল হবে। গ্রামবাংলার কৃষক, গ্রামীণ মজুর সহ সর্বস্তরের জনগণের কাছে আমাদের আহ্বান, দেশ বাঁচাতে দেশবাসী বাঁচাতে সাধারণ ধর্মঘট ও গ্রামীণ ভারত বনধ-কে সফল করে তুলুন।

এরাজ্যের বুকে ফসলের ন্যূনতম সংগ্রহ মূল্য আইন প্রণয়ন, দালাল মহাজনদের কাছ থেকে নয় — প্রকৃত চাষি বিশেষত ছোট ভাগচাষি লিজচাষিদের থেকে ধান সহ সমস্ত ফসল কেনা, প্রশাসনের দ্বারা অনথিভূক্ত গরিবদের সরকারি নথিভুক্তি, ফসলের উৎপাদন খরচের দেড়গুণ দাম সুনিশ্চিত করা, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রভৃতি দাবিগুলি তুলে ধরে আমরা তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ময়দানে রয়েছি। এরাজ্যে প্রতিবাদী শক্তির উপর তৃণমূল সরকারের স্বৈরাচারী হামলা, গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধ, দেউচা-পাঁচামীতে আদিবাসী সহ গরিব মানুষদের উচ্ছেদের বিরুদ্ধেও সোচ্চার হওয়ার জন্য আমরা আহ্বান জানাচ্ছি।

খণ্ড-29
সংখ্যা-10