হুগলি জেলায় পুরনির্বাচনে মহিলা প্রার্থীরা
Women candidates

সিপিআই(এমএল) লিবারেশন হুগলি জেলায় উত্তরপাড়া-কোতরং এবং কোন্নগর — দুটি পৌরসভা নির্বাচনে চারজন মহিলা প্রার্থীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে মনোনীত করেছিল। প্রচার অভিযানে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত থাকার সুবাদে যা দেখলাম এবং শিখলাম তা এখানে তুলে ধরার চেষ্টা করছি।

আমাদের পার্টি ‘টিপিকাল’ সংসদসর্বস্ব বা চলতি কথায় ভোটবাজ পার্টি নয়। আমরা নির্বাচন লড়ি গণসংযোগ বাড়ানো, মানুষের কথা শোনা, তাঁদের সমস্যা ও অভিযোগগুলো বোঝা এবং সেইমতো আগামী আন্দোলনের কর্মসূচি তৈরি করা, তাঁদের মধ্যে পার্টির রাজনীতি নিয়ে যাওয়া, জিততে পারলে প্রতিষ্ঠানের মধ্যে থেকে, জিততে না-পারলে বাইরে থেকে মানুষের উন্নয়ন, পরিষেবা ও গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্য কাজ করা আর বৃহত্তর গণআন্দোলনে সামিল করা — এরকম একগুচ্ছ লক্ষ্য নিয়ে। সুতরাং আমাদের কাজ ভোটের পরেই শেষ হয়ে যাবে না। বরং মহিলা সমিতি ও পার্টির কাজের বিকাশে একটা নতুন পর্যায়ের সূচনা ঘটাতে হবে, তা সে যে আকারেই হোক।

পার্টির চারজন মহিলা প্রার্থীর মধ্যে দু’জন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত আসনে আর দু’জন সাধারণ আসনে দাঁড়িয়েছিলেন। প্রধান প্রচার সামগ্রী ছিল পার্টির ও মহিলা সমিতির তরফে পৃথক দুটি লিফলেট।

কোন্নগরে মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত ৬ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী সুলতা রায় মেহনতি পরিবারের সদস্য। পার্টির নানা কর্মসূচিতে সামিল হন‌ এবং এলাকায় পরিচিত মুখ।‌ এই ওয়ার্ডে গত নির্বাচনে যিনি দাঁড়িয়েছিলেন তিনি অসুস্থ হওয়ার কথা শুনে সুলতা নিজে এগিয়ে এসে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব দেন। তিনি পাশের ওয়ার্ডের বাসিন্দা, অতএব নিজের এবং পরিবারের বা প্রতিবেশিদের একটি ভোটও পাবেন না জেনেও এবং ভোটে দাঁড়ানোর কোনও অভিজ্ঞতা না থাকলেও তিনি দ্বিধা করেননি। বরং তিনি ঘরে ঘরে প্রচার করার সময় একজন অভিজ্ঞ রাজনৈতিক কর্মীর মতোই মূল মূল বক্তব্য তুলে ধরছিলেন।

উত্তরপাড়া-কোতরং পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডে (অসংরক্ষিত) প্রার্থী ছিলেন সুদীপ্তা বসু। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সময় থেকেই শ্রমিক আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন, অংশ নিয়েছেন যুব ও মানবাধিকার আন্দোলনেও। এলাকায় খুবই পরিচিত মুখ। দেশভাগের ফলে ছিন্নমূল পরিবার থেকে উঠে আসা মানুষটি গবেষণার বিষয় হিসেবেও দেশভাগকেই বেছে নিয়েছেন। এখন তাঁর মাথায় ঘুরছে লাইনের ধারে বস্তির ছেলে-মেয়েদের পড়ানোর পরিকল্পনা।

উত্তরপাড়া-কোতরং পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের (অসংরক্ষিত) প্রার্থী কৃষ্ণা পাল পার্টির ও মহিলা সমিতির স্থানীয় নেত্রী। অঞ্চলের বিভিন্ন সমস্যায় ও নারী নির্যাতনের বিভিন্ন ঘটনায় হস্তক্ষেপের মধ্যে দিয়ে এলাকায় বিশেষত মহিলাদের মধ্যে তাঁর ভালো পরিচিতি আছে। প্রচারাভিযানে তিনি কখনও প্রচার করেছেন কখনো কমরেডদের সাথে নিয়ে, আবার কখনো একা — তাতে কোনোরকম দ্বিধা দেখা যায়নি।

উত্তরপাড়া-কোতরং পৌরসভার মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত ৩ নম্বর ওয়ার্ডে পার্টি মনোনীত প্রার্থী ছিলেন দুর্গা‌ রায়। মেহনতি পরিবারের মানুষ, পার্টির প্রতি অগাধ আস্থা, শান্ত স্বভাবের দুর্গা অত বলিয়ে কইয়ে না হলেও নির্দ্বিধায় সঙ্গীসাথীদের সাথে ঘরে ঘরে প্রচারের সামনের সারিতে থেকেছেন।

শাসকদল টিএমসি’র প্রবল প্রচারের বিরুদ্ধে সিপিআই(এমএল) প্রার্থীরা জনগণের হাজারো অমীমাংসিত সমস্যা ও বিভিন্ন দাবি-দাওয়ার কথা তুলে ধরেন। একজন ছাড়া বাকি প্রার্থীরা রাজনৈতিক প্রচারে তেমন অভ্যস্ত না হলেও তাঁরা সাবলীলতা ও আন্তরিকতায় মানুষের মনকে ছুঁয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। সাংসারিক বা পেশাগত দায়িত্ব সামলেই এঁরা মৌখিক প্রচার ছাড়াও দেয়াল লিখন, পোস্টারিং, পথসভা, লিফলেট বিলি এবং নিয়মিত নির্বাচনী কাজের পরিকল্পনায় পার্টির আলোচনায় ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশ নিয়েছেন। সব কাজই‌‌ তাঁরা দুবেলা শুরু থেকে শেষ দিন, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ক্লান্তিহীনভাবে চালিয়ে গেছেন।

সবচাইতে বড় যে শিক্ষা বা উপলব্ধি এই কর্মকাণ্ড থেকে উঠে এসেছে তা হল, এমনকি সাধারণ মহিলা কর্মীরাও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিতে পারেন, যদি তাঁরা কিছুটা অন্তত পরিসর পেতে সহযোগিতা পান, তখন তারা নিজেরাও নিজেদের পরিসর করে নিতে উজাড় করে দিতে পারেন। পরস্পরের হাত ধরে পার্টির নেতৃত্বে যারা নির্বাচনে লড়লেন, তাঁরা আন্দোলন ও সংগঠন গড়ে তোলার কাজ করতে চান।

- চৈতালি সেন

খণ্ড-29
সংখ্যা-9