প্রয়াত কমরেড অসীম ব্যানার্জী

কমরেড অসীম ব্যানার্জী যুবক বয়সে নকশালবাড়ি কৃষক আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ হয়ে কমিউনিস্ট কর্মকাণ্ডে যুক্ত হন এবং শেষ দিন পর্যন্ত শারীরিক সমস্ত কষ্টকে অগ্রাহ্য করে কমিউনিস্ট রাজনীতিতে নিজেকে উৎসর্গ করে গেছেন। হুগলি জেলার বলাগড় তথা জেলার তিনি গুরুত্বপূর্ণ সংগঠক ছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ফুসফুসের সংক্রমণ ব্যাধিতে আক্রান্ত ছিলেন। মৃত্যুর কদিন আগেও শ্রমজীবী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তিনি জেলা কমিটির সদস্য হিসাবে বলাগড় ব্লকে দরিদ্র ক্ষেত মজুরদের সংগঠিত করেছিলেন। নানা ব্যাধি তাঁকে ঘিরে ধরলেও, তাঁর বুদ্ধিদীপ্ত রসিকতা, তাঁর বিপ্লবী আশাবাদকে তা রুদ্ধ করতে পারেনি। এহেন কমিউনিষ্ট নেতার মৃত্যু তাঁর আবাস গুপ্তিপাড়া সহ সমগ্র বলাগড় ব্লক জুড়ে গরিব মানুষ তথা জেলার সমগ্র পার্টিজুড়ে স্বজন হারানোর বেদনা নিয়ে হাজির হয়।

পরেরদিন সকাল থেকেই বলাগড় ব্লকের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ক্ষেত মজুর সাথীরা, পার্টি কমরেডরা এবং জেলার কমরেডরা তথা এলাকার বামপন্থী নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হন। শায়িত মৃতদেহে মাল্যদান করেন পার্টির জেলা সম্পাদক প্রবীর হালদার, সিপিআইএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পরিতোষ ঘোষ ও গুপ্তিপাড়া লোকাল ও ব্রাঞ্চের পক্ষে জয়দেব ঘোষ এবং ভোম্বল চ্যাটার্জি, এসইউসিআই(সি)-র ব্লক দায়ীত্বশীল ভাস্কর ঘোষ, ডিএসও-র পক্ষে শঙ্কর দাস, অসীম ব্যানার্জীর স্ত্রী তথা পার্টির জেলা কমিটি সদস্য শোভা ব্যানার্জী, পুত্র অভিজিৎ, অসীমদার ছাত্র, বর্তমানে বলাগড় ব্লক কমিটি সম্পাদক শেখ আনারুল, অসীমদা যে স্কুলে শিক্ষকতা করতেন সেই স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি অমলকৃষ্ণ সরকার, উপস্থিত আত্মীয় স্বজন, পার্টি সদস্য ও সমর্থকেরা। কমরেড অসীম ব্যানার্জীর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁর মরদেহের সামনে নীরবতা পালন করা হয়। কমরেডের ইচ্ছা অনুসারে তাঁর মরদেহ চিকিৎসা বিজ্ঞানের স্বার্থে হাসপাতালে দানের উদ্দেশ্যে কমরেডরা কলকাতার পথে রওনা দেন। দেহদানের পূর্বেমরদেহ কলকাতার পার্টির রাজ্য অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়, এখানে মরদেহে মাল্যদান করেন সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টচার্য, রাজ্য সম্পাদক পার্থ ঘোষ, কার্তিক পাল সহ উপস্থিত নেতা ও কর্মীবৃন্দ। এরপর ন্যাশানাল মেডিকেল কলেজে কমরেড অসীম ব্যানার্জীর মরদেহ স্বার্থে তুলে দেওয়া হয়।

স্বচ্ছল পরিবার থেকে এসে যেভাবে গরিব ভূমিহীন কৃষকদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে কঠিন জীবন যাপনকে সহজভাবে গ্রহণ করেছিলেন, সেই যাপনে আমৃত্যু স্থিত ছিলেন, যেভাবে কঠিন ও কষ্টকর ব্যাধিকে হাসিমুখে সহ্য করেছেন ও লড়াই চালিয়েছেন, জীবনে ও মরণে সেই জীবন, সেই মানুষটা, সকলের প্রিয় অসীমদা অমর হয়ে থাকবেন।

 

কমরেড অসীম ব্যানার্জী স্মরণে

‘৭০ দশকের অগ্রণী ও পেশাদার কমরেড অসীম ব্যানার্জী ১৫ নভেম্বর রাতে গুপ্তিপাড়ার বর্তমান বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। কলকাতায় নিউ আলিপুরে জ্যোতিষ রায় রোডে তাঁর আদি বাড়ি, সেখানেই মানুষ হন ও ছাত্রজীবন কাটে। বিএসসি পাশ করেন। অনেকগুলি ভাই-বোনের মধ্যে কমরেড অসীম ছিলেন সবার ছোট। ‘৭০ দশকের নকশালবাড়ি রাজনীতি তাকে আকর্ষণ করে এবং সব কিছু ত্যাগ করে বিপ্লবী রাজনৈতিক কাজে যুক্ত হন। জন্ম ২৩ ডিসেম্বর ১৯৫০। বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর। নিজের পরিবারে স্ত্রী, পুত্র ও পুত্রবধু সকলেই পার্টির কর্মী। নিজের বাড়িকে পার্টির কমরেডদের আশ্রয়স্থল ও মিটিংয়ের জায়গা হিসাবে ব্যবহার করতেন। খুবই আন্তরিক কমরেড ছিলেন। পেশাদার ক্যাডার হিসাবে মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগণা, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, মালদহের বিভিন্ন গ্রামে এবং কলকাতা শহরেও পার্টির কাজ করেছেন। পার্টি পুনর্গঠন ও কাজের বিস্তারে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। পার্টির প্রতি সবসময় আস্থা রাখতেন। দীর্ঘদিন পার্টির হুগলি জেলা কমিটির সদস্য ছিলেন। বলাগড় ব্লকের কাজের বিকাশে বিশেষ অবদান আছে। পার্টির এই ধরনের কমরেড চলে যাওয়া আমাদের অপূরণীয় ক্ষতি ও বেদনাদায়ক। কমরেড অসীম ব্যানার্জী লাল সেলাম। তাঁর মৃত্যুতে আমরা শোকাহত ও শোকাভিভূত পরিবার, পরিজন কমরেডদের সাথেও আমরা সমব্যথী। কমরেড অসীম ব্যানার্জী অমর রহে।

সিপিআই(এমএল) লিবারেশন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি

খণ্ড-26
সংখ্যা-37