খবরা-খবর
অধিকার আদায়ে আদিবাসী ও বনবাসীরা জোট বাঁধছে বাঁকুড়া শহরে মিছিল ও ডেপুটেশন
procession and deputation

দেশের রাষ্ট্রপতি এখন আদিবাসী। বাঁকুড়া জেলার সভাপতি আদিবাসী। বাঁকুড়া থেকে অন্যতম রাজ্যের মন্ত্রী আদিবাসী তবুও আদিবাসীরা তাদের বিভিন্ন অধিকার থেকে বঞ্চিত। বহু লড়াইয়ের ফলে ২০০৬ সালে কেন্দ্রীয় আইন হয় যে বনের জমিতে চাষাবাদ করা আদিবাসীদের জমির পাট্টা দেওয়া হবে। কিন্তু আইন হলেও সরকারের গড়িমসির কারনে আজও বহু মানুষ পাট্টা পায়নি। অসংখ্য অধিকার আদায়ে আদিবাসী ও বনবাসীরা জোট বাঁধছে বাঁকুড়া শহরে মিছিল ও ডেপুটেশন সরল সাধারণ গরিব আদিবাসীরা জানেনই না যে তাঁদের বাপ-ঠাকুরদার আমল থেকে চাষ করে আসা জমিটার মালিক তারা নয়। তার জন্য পাট্টা নামক একটি কাগজ দরকার। কাগজের জন্য সরকার বাহাদুরের কাছে আবেদন করতে হবে। ভাগ্যবান কিছু মানুষ পাট্টা পেলেও তাদের আবার পরচা নেই। পরচার জন্য বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে বার বার গেলেও কোন এক অদৃশ্য কারণে পরচা হয়নি। আবার সামান্য কিছু পরচা হলেও জমির শ্রেণী চরিত্র জঙ্গল লেখা থাকার দরুন সরকারের বহুল প্রচারিত ‘কৃষক বন্ধু’-র মতো সরকারী সাহায্য বা কিষান মান্ডিতে সরকারি দরে ধান বিক্রিই বলুন বা অন্য সহযোগিতা সব কিছু থেকেই সাধারণ আদিবাসী কৃষক বঞ্চিত। সরকারি অফিসাররা নাকি আদিবাসীদের এই সমস্যার কথা জানেনই না। যদিও আদিবাসীদের জেলা সভাধিপতি আছেন, মন্ত্রী আছেন। মাঝে মাঝে তারা মাঠে ধান লাগানোর ছবি ফেসবুকে শেয়ারও করেন।

পাট্টা-পরচা দুরের কথা কেন্দ্র সরকার এখন বনাধিকার আইন বদলে দিয়ে আদিবাসী ও বনবাসীদের উচ্ছেদের জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। রাজ্যের দেউচা-পাচামী বা অযোধ্যা পাহাড়ের মতো আমাদের বাঁকুড়া জেলাতেও কোথাও কোথাও উচ্ছেদের নোটিশ পাঠানো হয়েছে। এই সব বঞ্চনার বিরুদ্ধে গত ২২ আগস্ট জেলার কয়েকটি ব্লক থেকে তিন শতাধিক আদিবাসী ও বনবাসী তামলিবান্ধ ট্যাক্সি স্ট্যান্ড থেকে আদিবাসী অধিকার ও বিকাশ মঞ্চের ব্যানারে সুসজ্জিত মিছিল করে নিজেদের ভাষায় স্লোগান দিতে দিতে জেলা শাসক ও জেলা বনাধিকারিককে স্মারকলিপি প্রদান করে। এর আগে ও পরে পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। পথসভায় বক্তব্য রাখেন সংগঠনের জেলা নেতা সুধীর মুর্মু, রামনিবাস বাস্কে সহ সোমনাথ বাস্কে, রবি মুর্মু, চন্দ্র কান্ত মুর্মু। লড়াইয়ের গান গেয়ে শোনান গান বৈদ্যনাথ।এই কর্মসূচিতে উপস্থিত থেকে সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের রাজ্য কমিটির সদস্য ফারহান হোসেন খান এবং জেলা সম্পাদক বাবলু ব্যানার্জি বলেন আমাদের সংগঠন আদিবাসীদের এই বঞ্চনা ও উচ্ছেদের বিরুদ্ধে সব সময় পাশে আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।

in Bankura city for their rights, procession and deputation

বক্তারা বলেন, আজ জেলা প্রশাসন আমাদের আবেদন গ্রহণ না করে বিএলআরও অফিসে আবেদন জমা করতে বললেন। আগামী কাল থেকে গঙ্গাজল ঘাঁটি ব্লক থেকে এই কাজ শুরু করব আমরা। সকলেই মিলিতভাবে একসাথে গিয়ে বিএলআরও-তে জমা করা হবে। প্রশাসনকে একমাস সময় দেওয়া হবে। এর মধ্যে যদি সমস্যার সমাধান না হয় তাহলে দূর্গাপূজার পরপরই আরো বেশি মানুষকে সমাবেশিত করে বাঁকুড়া শহরের ঢোকার রাস্তাগুলো অবরোধ করে দিয়ে শহরকে অচল করে দেওয়া হবে। কারণ এই সরকার শুধু জমি থেকেই আমাদের বঞ্চিত করছেন তা না, আজ ৬ মাস ধরে আমাদের ১০০ দিনের প্রকল্পে কাজ করিয়ে মজুরি দেয়নি। বলছে তাদের নাকি পয়সা নেই। অথচ দুর্গাপূজা কমিটি গুলোকে অনুদান দিতে এবং বাড়িয়ে দিতে টাকার অভাব নেই। তাই অবরোধের দিন আমরা আর প্রসাসনের কাছে আসবো না। প্রশাসনকে তিনতলা থেকে নেমে রাস্তায় আমাদের কাছে এসে দাঁড়াতে হবে। এটা করতে গেলে চাই মজবুত সংগঠন। তাই নিজেদের সংগঠনকে শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে হবে।

এর পরদিন ২৩ আগস্ট শখানেক মানুষের উপস্থিতিতে গঙ্গাজল ঘাঁটি ব্লকে ২৫০’র বেশি আবেদন জমা দেওয়া হয়। ঠিক হয়েছে সংগঠনকে শক্তিশালী করার উদ্দেশ্যে আগামী ২৩ ভাদ্র ওখানে বেশি বেশি মানুষের জমায়েত করে আলোচনার মাধ্যমে একটি কার্যকরী ব্লক কমিটি গঠন করা হবে।

খণ্ড-29
সংখ্যা-33