গোপীবল্লভপুরে আদিবাসী প্রবাদপ্রতীম যুগল বিপ্লবী লেবাচাঁদ টুডু ও কুনি টুডুর স্মরণসভা
Lebachand Tudu and Kuni Tudu

বিশ্ব আদিবাসী দিবস উপলক্ষে কমিউনিস্ট আন্দোলনের প্রবাদপ্রতীম যুগল কমরেড লেবাচা‌ঁদ টুডু ও কুনি টুডু সহ আরো অনেক শহীদ কমরেডদের স্মরণে বৃষ্টি-বাদল মাথায় নিয়ে তিন শতাধিক মানুষের উপস্থিতিতে এক সমাবেশ হয় গোপীবল্লভপুরের কালাঝরিয়া মাঠে। মানুষের লড়াইয়ের লাল পতাকা উত্তোলন করেন সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের পলিটব্যুরো সদস্য কার্তিক পাল এবং আদিবাসী সমাজের অধিকার আন্দোলনের নিজস্ব সবুজ পতাকা উত্তোলন করেন লেবাচাঁদ টুডুর দাদা ধর্মা টুডু। এরপর মঞ্চে রাখা লেবা চাঁদ টুডু, কুনি টুডু, সন্তোষ রাণা সহ তাঁদের সহযোদ্ধা প্রয়াত অন্যান্য কমরেডদের ছবিতে মাল্যদান করেন কার্তিক পাল, পার্টির রাজ্য কমিটির সদস্য তিতাস গুপ্ত, ফারহান হোসেন খান, তপন মুখার্জী, শৈলেন মাইতি, নবকুমার বিশ্বাস ও বাবলু ব্যানার্জি সহ সিপিআই(এমএল) পিসিসি-র শৈলেন ভট্টাচার্য, সারনা রিক্রিয়েশন ক্লাব সম্পাদক এবং সিপিআই(এম) ও ফরওয়ার্ড ব্লকের স্থানীয় নেতৃত্ব সহ এলাকার মানুষজন। নীরবতা পালনের পর শোকপ্রস্তাব পাঠ করেন ঝাড়গ্রাম জেলায় পার্টির দায়ীত্বশীল কমরেড পিন্টু দে। বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে লেবাচাঁদ টুডু ও কুনি টুডুর স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য রাখা হয়। পার্টির পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন কার্তিক পাল ও বাবলু ব্যানার্জি। তাঁরা বলেন, আদিবাসীদের জল-জঙ্গল-জমিনের সাংবিধানিক অধিকারকে খর্ব করে দিতে চাইছে কেন্দ্রের ফ্যাসিস্ট সরকার। বনাধিকার আইনে সংশোধনের মাধ্যমেই বনের জমি থেকে আদিবাসীদের উচ্ছেদ করার চেষ্টা করছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। এমনকি কর্পোরেটের হাতে বন-জঙ্গলকে তুলে দিয়ে সেখানে আদিবাসীদের চিরাচরিত ছাগল গরু চরানো এবং গাছের পাতা তোলার অধিকার কেড়ে নিতে চাইছে, এতে মদত যোগাচ্ছে বিভিন্ন রঙের রাজ্য সরকার। তাই বর্তমানে ফ্যাসিবাদ বিরোধী লড়াইয়ে সমস্ত ধরনের মানুষকে একত্রিত করে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য কমরেড লেবাচাঁদ টুডু গতবছর নভেম্বর মাসে আসানসোল কনভেনশনের মধ্য দিয়ে আমাদের পার্টিতে যোগ দেন। এবং আদিবাসীদের হাসা-ভাষা-লায় লাকচারের লড়াইকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আদিবাসী সংঘর্ষ মোর্চার কেন্দ্রীয় স্তরের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। তাই লেবাচাঁদ টুডু ও কুনি টুডুর যুগলবন্দীকে স্মরণ করার অর্থ এই যে, জল-জঙ্গল-জমিন রক্ষার লড়াইকে ফ্যাসিবাদ বিরোধী লড়াইয়ের সাথে মিশিয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এই স্মরণসভায় উপস্থিত হয়ে নয়াগ্রাম বিধানসভার বিধায়ক চূড়ামণি মাহাতো বলেন, “গোপীবল্লভপুর সহ জঙ্গলমহলকে ভারতীয় রাজনীতির উপরমহলে তুলে এনেছিল লেবাচাঁদ টুডুদের আন্দোলন। তাঁকে স্মরণ করা মানে সরকারে কোন দল আছে তা বিবেচনা না করে বরং আদিবাসীদের অধিকারের দাবিতে একজোট হয়ে আন্দোলন সংগঠিত করা।”

এছাড়া বক্তব্য রাখেন সন্তোষ রাণার আত্মীয় শোভন পাল, সহযোদ্ধা শৈলেন ভট্টাচার্য, মোহন হাঁসদা, শম্ভু মাহাতো, ব্যাঙ্ক ইউনিয়নের নেতা নির্মল বারিক, সিপিআই(এম) ও ফরওয়ার্ড ব্লকের স্থানীয় নেতৃত্ব সহ অন্যান্যরা। সঙ্গীত পরিবেশন করেন পৃথ্বীরঞ্জন দাশগুপ্ত (মেঘনাদ দা) এবং স্বর্ণলতা টুডু সহ নবকুমার বিশ্বাস। লেবাদাকে উদ্দেশ্য করে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন বেতার শিল্পী লখিরাম মুর্ম্মু ও জগদীশ প্রামাণিক। সমগ্র সভা পরিচালনা করেন পার্টির রাজ্য কমিটির সদস্য তপন মুখার্জী, সভাপতিত্ব করেন সারণা রিক্রিয়েশন ক্লাব সম্পাদক ভুবন সিং ও লক্ষণ টডু।

খণ্ড-29
সংখ্যা-31