উড়িষ্যায় ‘বস্তি বাঁচাও’ আন্দোলন
slum movement in Odisha

উড়িষ্যার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক ‘সামালেই পরিকল্পনা’ ঘোষণা করলেন, যার ঘোষিত উদ্দেশ্য নাকি বিখ্যাত সামালেশ্বরী মন্দির ও তার সংলগ্ন এলাকার উন্নয়ন। কিন্তু সামালেশ্বরী মন্দির সংলগ্ন ঘুঙ্ঘুটি পাড়ার বস্তিবাসীরা পরে জানতে পারলেন যে, বস্তি থেকে তাদের উচ্ছেদও এই ‘সামালেই পরিকল্পনা’রই অঙ্গ। বস্তিবাসীদের উচ্ছেদ ঐ পরিকল্পনার নিহিত বিষয় হলেও তাদের পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণের কোনো কথা ঐ পরিকল্পনার বিষয় হয়নি।

ঘুঙ্ঘুটি পাড়া বস্তির মানুষজন বংশ পরম্পরায় ৪৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাস করছেন; যুগ-যুগ ধরে যেটা তাঁদের বাসভূমি হয়ে থেকেছে, সেখান থেকে তাঁদের উচ্ছেদ কি আদৌ ন্যায়সঙ্গত হতে পারে? কোনো-কোনো স্থান থেকে বুলডোজার দিয়ে কেন দলিতদের ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দিয়ে তাদের গৃহহীন করা হচ্ছে, আর তারজন্য কোনো পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণের পদক্ষেপ কেন নেওয়া হচ্ছে না?

বস্তির মানুষজন জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে নিজেদের ক্ষোভের কথা জানিয়ে ছিলেন, কিন্তু জেলার প্রশাসনিক প্রধান তাতে কোনো গুরুত্বই দেননি। এরপর ন্যায়বিচারের আশায় বস্তিবাসীরা উড়িষ্যা হাইকোর্টের শরণাপন্ন হলেন। হাইকোর্টের বিচারপতি ২৭ জুন এক অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশিকায় সরকারকারকে নির্দেশ দিলেন, আন্দোলনকারী তথা বস্তিবাসীদের বিরুদ্ধে কোনো কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না। কিন্তু এই ব্যাপারটা পাল্টে যেতে দেরি হল না। কোনো অজ্ঞাত কারণে হাইকোর্টের দুই বিচারপতির বেঞ্চ ১২ জুলাই আবারও একটা নির্দেশিকা দিলেন যাতে আগের নির্দেশিকায় দেওয়া ঘুঙ্ঘুটি পাড়া বস্তিকে ধূলিসাৎ করার ওপর স্থগিতাদেশকে তুলে নেওয়া হল, সামালেই পরিকল্পনা অনুযায়ী এগিয়ে যেতে সরকারকে অনুমতি দেওয়া হল।

ঘুঙ্ঘুটি পাড়া বস্তির রক্ষায় দলিত, আদিবাসী ও বহুজনদের ১৮টি সংগঠন ১২ জুলাই তৈরি করলেন ‘বহুজন মিলিশিয়া মঞ্চ’। হাজার-হাজার বস্তিবাসী আম্বেদকার স্কোয়ার থেকে সম্বলপুর কালেক্টোরেট অফিস পর্যন্ত সংগঠিত করলেন দীর্ঘ ৮ কিমি পদযাত্রা, ব্যাপক আকারের তীব্র প্রতিবাদ জানানো হল সামালেই পরিকল্পনার নামে ঘুঙ্ঘুটি পাড়া বস্তির ধ্বংসের রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে।

জনৈক ছাত্রনেতা মধুসূদন জানিয়েছেন, উচ্চবর্ণের মানুষরা দেবতা জগন্নাথের নামে উড়িষ্যার ২৪টা জেলায় ৬০,৪০২ একর জমি জবরদখল করে রেখেছে, যে জমি ভূমিহীন ও প্রান্তিক মানুষদের সরকারের দেওয়ার কথা; আর এখানে এই ঘুঙ্ঘুটি পাড়ায় ধর্ম ও আধ্যাত্মিকথার নামে ৪৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাস করে আসা মানুষদের বঞ্চিত করা হচ্ছে জীবিকা, আয়, শিক্ষা ও নিরাপত্তা থেকে। বস্তিবাসী ও অন্যান্য নিপীড়িত মানুষদের এই সংগ্ৰাম আশাভরসা ও অস্তিত্বের লক্ষ্যে চালিত সংগ্ৰাম; ধর্মীয় ভাবাবেগ কাজে লাগিয়ে উচ্ছেদের পরিকল্পনা দমনেরই নামান্তর। ছাত্রনেতা আরও বলেন, “ঘুঙ্ঘুটি পাড়ার অধিবাসীদের জমির দলিল ও পাকা বাড়ি না দেওয়া হলে এবং তাদের জন্য স্বাস্থ্য ও কল্যাণের সুবন্দোবস্ত করা না হলে মর্যাদাপূর্ণ ও সম অধিকারের নাগরিকত্বের জীবনের জন্য সংগ্ৰামকে আমরা তীব্রতর করে তুলব। রাস্তার আন্দোলন থেকে আদালতের শরণাপন্ন হয়ে আমরা এই উৎপীড়ন ও অন্যায়ের প্রতিরোধ করব।”

খণ্ড-29
সংখ্যা-36