স্মরণসভা : আজীবন কমিউনিস্ট যোদ্ধা কমরেড অমল ভট্টাচার্য
Comrade Amal Bhattacharya

“অমল ভট্টাচার্য ‘কাল্টুদা’র মতো ক্লান্তিহীন কমিউনিস্ট যোদ্ধা, যাঁরা নিজেরাই একটা কাজের ঘরানা, সেই সমস্ত কমরেডরা আজও আমাদের অনুপ্রেরণা।” রবিবার কমঃ অমল ভট্টাচার্যের স্মরণসভায় এভাবেই তাঁর স্মৃতিচারণা করলেন পার্টির সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য। গত ১ সেপ্টেম্বর ৯০ বছর বয়সে প্রয়াত হয়েছেন পার্টির বর্ষীয়ান সহযোদ্ধা কমঃ কাল্টুদা। তাঁকে স্মরণ করে একটি সভার আয়োজন করা হয়েছিল যাদবপুরের সংস্কৃতি চক্র সভাগৃহে।

এই স্মরণসভায় উপস্থিত ছিলেন সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য সহ পার্টির রাজ্য, কলকাতা জেলা ও যাদবপুর-ঢাকুরিয়া এলাকার নেতৃবৃন্দ। উপস্থিত ছিলেন কাল্টুদা’র হাতে গড়া যাদবপুরের জনস্বাস্থ্য জলাশয় ও পরিবেশ রক্ষা কমিটির সহযোদ্ধারা। এক সময়ে ভবানীপুর সহ বিভিন্ন এলাকায় কাল্টুদা’র সঙ্গে কর্মরত কমরেডরা ও স্থানীয় বহু সাধারণ মানুষ উপস্থিত ছিলেন এই স্মরণসভায়। কাল্টুদাকে স্মরণ করে গণসঙ্গীত পরিবেশন করে নীতীশ রায় বলেন, “জুনিয়ার চিকিৎসক আন্দোলনের সময় থেকেই কাল্টুদার সঙ্গে পরিচয়। স্ত্রীর মারণব্যাধির চিকিৎসার প্রতিটি পর্যায়ে কাল্টুদার সাহচর্য ও সহযোগিতা পেয়েছি।” জলাশয় ও পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনে কাল্টুদার সহকর্মী শান্তনু চক্রবর্তী বলেন, “খুব অল্প সময়ের পরিচয় হলেও, এটা প্রথম দিন থেকে বুঝেছি কাল্টুদার মধ্যে একটা স্বাভাবিক প্রশস্ততা ও উদারতা ছিল। অশক্ত শরীর নিয়েও পরিবেশ রক্ষার কাজে ঝাপিয়ে পড়েছিলেন কাল্টুদা। খ্যাতি-নাম-যশের বদলে সকলের দরদী ও ভালোবাসার মানুষ ছিলেন তিনি।”

আরএসপি দলের নেতা কমঃ পুলক কৃষ্ণ মৈত্র বলেন, “আমার পাশের পাড়াতেই কাল্টুদা থাকতেন। বিভিন্ন সময়ে দেখা হত, জলাশয় ও পরিবেশ আন্দোলন নিয়ে মত বিনিময় হত। মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে, এটাই তাঁর সহজাত গুণ ছিল। তিনি চলে গেলেও, আমাদের সেই কাজ সম্পন্ন করতে হবে।”

কাল্টুদা’র মেয়ে দেবপ্রিয়া ভট্টাচার্য বলেন, “ঠাকুরদার দেখানো পথেই আমার বাবা রাজনীতিতে এসেছিলেন। সবসময় অন্যদের সামনে এগিয়ে দিতেন। নিজে পেছনে থেকে কাজ করতেন। এলাকার সাধারণ নাগরিকদের নিয়ে কীভাবে পরিবেশ আন্দোলন গড়ে তুলতে হয়, তিনি দেখিয়ে দিয়েছিলেন। আমরা অনেক পরে যুক্ত হয়েছি। সেই অধরা কাজ আমাদের এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।”

কমঃ কাল্টুদা’র স্মৃতিচারণায় পার্টির সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য বলেন, “কবি সুকান্তের ভাষায়, এই পৃথিবীকে জঞ্জালমুক্ত করে নবজাতকের জন্য বাসযোগ্য করে যাওয়াই কমিউনিস্টদের কাজ। কমরেড কাল্টুদা সেই কাজটাই আমৃত্যু করে গিয়েছেন। অত্যন্ত অনয়াসে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তিনি যে কাজটা করতেন, সেটা আমাদের সকলের কাছে শিক্ষণীয়। এই কাজগুলোই আমাদের শহরাঞ্চলের কাজের ধারা হতে পারে। এই মুহূর্তে ভারতবর্ষ ফ্যাসিবাদী বিপদের সম্মুখীন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে আমাদের দেশে এই ধরনের বিপদ তৈরি হয়নি। এই মুহূর্তে পরিবেশ রক্ষা, গণতন্ত্র রক্ষা আমাদের অন্যতম মূল কাজ। আম্বেদকর বলেছিলেন, আমাদের দেশে হিন্দুরাজ কায়েম হলে সেটাই হবে সবথেকে বড় বিপর্যয়। জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যা এই সময়ে ভারত সহ গোটা বিশ্বে অন্যতম বড় সঙ্কট। দিশা নির্দিষ্ট রেখে কোনও কিছুতেই হতাশ না হয়ে কাজ করে যাওয়া কাল্টুদাদের মতো মানুষের কাছ থেকে আমাদের সকলের শেখা উচিত।”

অভিজিৎ সাহা বলেন, “আমার সঙ্গে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সম্পর্ক থাকলেও, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কাল্টুদা আমার কমরেডই ছিলেন। বাটানগরে শ্রমিকদের আন্দোলনে প্রথম কাল্টুদার সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল। ছাত্রাবস্থায় শ্রমিক আন্দোলনের সঙ্গে একাত্ম হওয়ার আহ্বানে কাল্টুদার থেকে অনেক কিছু শিখেছি আমরা। একটা প্রজন্মের ইতিহাস আমরা কাল্টুদার মতো মানুষের মুখ থেকে জেনেছি। আজীবন লড়াই করে যাওয়া এই মানুষগুলো একে একে চলে যাচ্ছেন। ওই প্রজন্মের লড়াইয়ের ইতিহাসকে আগামী প্রজন্মের জন্য আমাদের সংরক্ষণ করতে হবে।”

এদিনের স্মরণসভায় কাল্টুদা’র স্মৃতিচারণা করে বক্তব্য রাখেন, ভাগ্নে রাজীব রায়, জলাশয় রক্ষা আন্দোলনের সহকর্মী নির্মল চৌধুরী, সুচিশ্রী রায়, নিত্যানন্দ ঘোষ, মানস ভট্টাচার্য সহ অন্যান্যরা।

অমল ভট্টাচার্য ‘কাল্টুদা’র ফেলে রেখে যাওয়া কাজ সম্পন্ন করার শপথ নিয়ে ইন্টারন্যাশানাল গানের মাধ্যমে শেষ হয় স্মরণসভা।

খণ্ড-29
সংখ্যা-38