খবরা-খবর
আলোচনা সভা : “প্রীতিলতা থেকে বিলকিস — লড়াই চলছে”
The Fight Is On

উত্তর ২৪ পরগণা

২৪ সেপ্টেম্বর, বিপ্লবী, স্বাধীনতা সংগ্রামী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের শহীদ দিবসে আইপোয়ার উদ্যোগে আগরপাড়া অফিসে একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার শুরুতে আমার মুক্তি আলোয় আলোয় গেয়ে শোনান মিঠু চক্রবর্তী। প্রীতিলতা-কল্পনা দত্ত-বীনা দাস সহ স্বাধীনতা সংগ্রামের মেয়েদের ভুমিকা নিয়ে বক্তব্য রাখেন মৈত্রেয়ী বিশ্বাস। মিতালি বিশ্বাস বলেন প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদাররা যে স্বাধীন দেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন আজ সেই দেশে ক্রমশ মেয়েদের অধিকার ও স্বাধীনতার উপর আঘাত নেমে আসছে। ২০০২ সালে গুজরাট গণহত্যার ঘটনায় বিলকিস বানোর গণধর্ষণ ও তাঁর পরিবারের সদস্যের খুনে দোষী ১১ জনকে সাজা মকুবের আগেই মুক্তি ও মালা দিয়ে সম্বর্ধনা জানানো হচ্ছে। স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের গলা টিপে, বিজেপি-আরএসএস কিভাবে মানুষের মনে হিংসা বিদ্বেষের রাজনীতির বীজ বপন করছে সেই প্রেক্ষাপট নিয়েও আলোচনা হয়। সভায় উপস্থিত আইপোয়ার সদস্যরা জানান কিভাবে ঘরে মেয়েদের পুজো ও আচার বিচারের মধ্যে আটক রাখা হয়। কদম্বগাছি থেকে আসা ১৯ বছরের খুসবু জানান, কিভাবে তাদের পাড়ায় মেয়েদের পোশাকের উপর নজরদারি চালানো হয়। নিজের জীবনের লড়াই এবং প্রতিবাদের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে সমগ্র দেশে কিভাবে মেয়েরা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সামনে এগিয়ে আসছে তা আইসার অন্বেষা বর্ণনা করেন। ইরানের মেয়েদের লড়াইয়ের কথা আলোচনায় উঠে আসে। ইরানের মুসলিম মৌলবাদ মেয়েদের হিজাব পরতে বাধ্য করছে, আর আমাদের দেশের হিন্দু-মৌলবাদ মুসলিম মেয়েদের হিজাব খুলে ফেলতে বাধ্য করছে। সমস্ত মৌলবাদের বিরুদ্ধে আমাদের অধিকারের লড়াইকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। কবি সুবোধ সরকারের ‘আমি কৃষ্ণকলি মাহাতো’ কবিতা আবৃত্তির মাধ্যমে আলোচনা সভা শেষ করেন তপতি দে।

কলকাতা কলকাতা

জেলা আইপোয়ার উদ্যোগে গাঙ্গুলিপুকুরের “স্বপ্না সভাঘরে” এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার শুরুতে “সংকোচের বিহ্বলতায় হোয়ো না ম্রীয়মান” রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনান সাধনা গোলদার। সম্প্রীতি মুখার্জি তাঁর বক্তব্যে বলেন, স্বাধীনতা আন্দোলনে মেয়েদের অনুপ্রাণিত করতে প্রীতিলতা আত্মাহুতির সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এছাড়া সড়শিবালা দাস ও সত্যবতীর মতো বিপ্লবী নারীদের কথাও তুলে ধরেন। আজ সেই দেশে মেয়েদের অধিকার ও নারী আন্দোলনকারীদের উপর আঘাত নেমে আসছে। বিলকিস বানোর গণধর্ষণ ও তাঁর পরিবারের সদস্যের খুনিদের সাজা মকুব করা হচ্ছে। শীর্ষা সেনগুপ্ত বর্তমানে বহু আলোচিত নারী স্বশক্তিকরণ নিয়ে নিজের উপলব্ধি ব্যক্ত করেন। তাঁর মতে যেখানে নাবালিকা বিবাহ বাড়ছে, সেখানে বিয়ের বিরুদ্ধে নিজের মত দেওয়াটাই, কিংবা অল্পবয়সে সন্তান-ধারণে বাধ্য হওয়ার বিরুদ্ধে মত দেওয়াটাই মেয়েদের স্বশক্তিকরন।

নিখিলবঙ্গ মহিলা সংঘের নেত্রী সর্বানি ভট্টাচার্য স্বাধীনতা আন্দোলনে প্রীতিলতা, কল্পনা দত্ত, বীণা বসু সহ স্বাধীনতা সংগ্রামে নারীদের ভূমিকা তুলে ধরেন। স্বাধীনতার পরেও মেয়েদের সামাজিক বাধা ও পারিবারিক-পারিপার্শ্বিক চাপকে উপেক্ষা করে নিজস্ব চিন্তাকে উন্নত করার, হিংসার ও পাচারের বিরুদ্ধে মহিলাদের উদ্যোগ বাড়ানোর ওপর জোর দেন।

অধ্যাপিকা সংঘোমিত্রা চক্রবর্তী বলেন, শিক্ষাক্ষেত্রে মেয়েরা আজ এগোলেও শিক্ষা ও কর্মজগতে যোগ্যতার স্বীকৃতি আসেনি। এজন্য অনেক লড়াই দরকার।

রাজ্য সম্পাদক ইন্দ্রাণী দত্ত বলেন, প্রীতিলতা, মাতঙ্গিনি, কল্পনা দত্ত, ভগৎ সিং, আদিবাসী বিদ্রোহী নেত্রী ফুলো, ঝানো-র মতো বহু বিপ্লবীর আত্মোৎসর্গের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরেও আজকে সংকীর্ণ জাত ধর্ম, সাম্প্রদায়িক বিভাজন, বৈষম্য, হিংসার গ্রাসে দেশকে এক চরম বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে বিজেপি সরকার। আজও গড়ে ১০ জন দলিত নারী প্রতিদিন ধর্ষণের শিকার হন, এর ৮০ শতাংশের জন্য দায়ী উচ্চবর্ণের মানুষেরা। স্বাস্থ্য, খাদ্য, বাসস্থান, শিক্ষা, চাকুরী, মত প্রকাশের সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। আজ গণতন্ত্র-মর্যাদা ও নির্ভয় স্বাধীনতার জন্য মেয়েদের লড়াই আরো ব্যাপক ও ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কথা তিনি তুলে ধরেন।

অমিত দাশগুপ্ত বলেন, আগের তুলনায় মহিলারা কর্ম জগতে অনেক বেশি সংখ্যায় যুক্ত হচ্ছেন, উচ্চ শিক্ষায় প্রবেশ করছেন, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার ক্ষেত্রে তাদের সংখ্যা বাড়ছে, কিন্তু সেই অনুপাতে সমাজে ও সর্বত্র নারীদের উপর বৈষম্যের বিরুদ্ধে সচেতন করার কাজ হচ্ছে কম। এই কাজে সচেতন ও সংগঠিত মহিলাদের উদ্যোগ বাড়াতে হবে। সব শেষে আলোচনা সভার সঞ্চালিকা ও জেলা সভানেত্রী মমতা ঘোষ সবাইকে অভিনন্দন জানিয়ে সভার সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

দক্ষিণ ২৪ পরগণা

বজবজে আইপোয়ার উদ্যোগে সভা সংগঠিত হয়। সেখানে মহিলা নেত্রী দেবযানী গোস্বামী, অনিন্দিতা মালিক এবং ইন্দ্রজিৎ দত্ত বক্তব্য রাখেন। ছাত্রী অনন্যা মালিক একটি লেখা পাঠ করেন।

খণ্ড-29
সংখ্যা-38