প্রতিবেদন
পিএসসি-র নিয়োগ পরীক্ষায় চূড়ান্ত গড়িমসি
PSC's recruitment

রাজ্য জুড়ে যখন প্রাথমিক, উচ্চ প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষক নিয়োগে অবাধ দুর্নীতি, উৎকোচ গ্রহণ, টাকার বিনিময়ে চাকুরি নিয়ে তুমুল গন্ডগোল চলছে, মন্ত্রী ও তার পরিচিত নারী, মাধ্যমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি, উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রমূখ জেল খাটছেন; সাথে জুড়েছে গরু পাচার, কয়লা পাচারের বেআইনি লেনদেনের কোটিকোটি টাকা, তখন এরাজ্যের অন্য কোনো বিষয়ে কথা বলে সাধারণ মানুষজন বা কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি টানা প্রায় দুস্কর হয়ে পড়েছে। ফলে এরাজ্যের বেকার কর্মপ্রার্থী যুবতী যুবকের অন্যতম আশার আলো পশ্চিমবঙ্গ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) কীভাবে বছরের পর বছর কর্মপ্রার্থীদের হতাশার মুখে ঠেলে দিচ্ছে তা নিয়ে কোনো হেলদোল মুখ্যধারার প্রচার মাধ্যমের দেখা যাচ্ছে না। প্রতি বছর পিএসসির ক্লার্কশিপ পরীক্ষা নেওয়া ও নিয়োগের কথা। তৃণমূল কংগ্রেস সরকার ক্ষমতায় আসার পরে দুবার ওই নিয়োগের পরীক্ষা হয়েছে, ২০১৬ সালে ও ২০১৯ সালে। ২০১৬ সালের পরীক্ষার জন্য বিজ্ঞপ্তি দেয় তৃণমূল দ্বারা গঠিত স্টাফ সিলেকশন কমিশন। সেই নিয়োগও যথাবিহিত দেরি হয়। সেখানে কোনো ঘোটালা হয়েছে কিনা কে জানে?

এখনো ২০১৯ সালের নিয়োগ শেষ করা যায়নি। অনেক গড়িমসির পরে নির্বাচিত প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশিত হয়েছে জুলাই, ২০২২-এ, কিন্তু প্রায় আড়াইমাস অতিক্রান্ত হলেও নির্বাচিত প্রার্থীদের কারুরই প্রায় নিয়োগ চূড়ান্ত হয়নি।

২০১৯ সালের নিয়োগ সংক্রান্ত কাজকর্মের গতিবিধি লক্ষ্য করলেই বোঝা যায় যে কর্মপ্রার্থীদের কাজ সম্পর্কে রাজ্য সরকার কতটা নির্বিকার।

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯-এ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়, রাজ্যের সরকারি দফতরে কেরাণী নিয়োগের জন্য।

২২ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৫ মার্চ, ২০১৯ দরখাস্ত গ্রহণ করা হয়।

প্রাথমিক পরীক্ষা (পার্ট-১) হয় ১০ মাস পরে, ২৫ জানুয়ারি, ২০২০।

প্রাথমিক পরীক্ষার উত্তর প্রকাশ করা হয় ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০।

প্রাথমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয় ৬ মাস বাদে, ২৪ জুলাই, ২০২০।

মূল পরীক্ষার (পার্ট-২) দিন নির্ধারিত হয় ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ও তা বাতিল হয়।

পরবর্তীতে মূল পরীক্ষার দিন নির্দারিত হয় ৬ ডিসেম্বর, ২০২০, এবং তা হয়।

ফল প্রকাশিত হয় সাড়ে নয় মাস বাদে, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১।

কারচুপির অভিযোগ থাকায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সেই ফল প্রত্যাহৃত হয় ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১।

সংশোধিত ফল প্রকাশিত হয় ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২১।

অনলাইন কাগজপত্র যাচাইয়ের জন্য নির্বাচিত প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশিত হয় আরো আড়াই মাস বাদে, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২১।

কাগজপত্র আপলোড করার সময় দেওযা হয় ২২ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি, ২০২২ পর্যন্ত।

কম্পিউটার টাইপ টেস্টের জন্য সময়, স্থান সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় ১৫ মার্চ, ২০২২।

টাইপ টেস্টের দিন হয় ২৬ মার্চ ও ২৭ মার্চ ২০২২।

সেক্রেটারিয়েট ও ডিরেক্টোরেটে নিয়োগের জন্য নির্বাচিত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ হয় ১৫ জুন, ২০২২।

আঞ্চলিক দফতরগুলিতে নিয়োগের জন্য নির্বাচিতের তালিকা প্রকাশিত হয় ৬ জুলাই, ২০২২।

নির্বাচিত বিশেষভাবে যোগ্য প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশিত হয় ২৬ জুলাই, ২০২২।


এখনো পুলিশ ভেরিফিকেশন ও স্বাস্থ্য যাচাই হয়নি। ফলে নির্বাচিত প্রার্থীদের নিয়োগও সম্পূর্ণ হয়নি।

একটি নিয়োগ পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরে ৪৩ মাস কেটে গেছে। যদি কোভিডের জন্য ৮ মাস ছাড় দেওয়াও হয়, তাহলেও প্রায় ৩ বছর অতিক্রান্ত। প্রতি পদে ঢিলেঢালা ভাব, অনীহা কর্মপ্রার্থী যুবকদের কতটা অসহায় ও হতাশ করে তোলে সে বিষয়ে কোনো ধারণা এই শাসকদের আছে বলে মনে হয় না। নিয়োগের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পরেও কেটে গেছে ২ মাস, কেন পুলিশ ভেরিফিকেশন বা মেডিক্যাল ভেরফিকেশনে এতদিন লাগবে সে প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে রাজ্য সরকারকে। অতি দ্রুত নিয়োগ করতে হবে নির্বাচিতদের।

- অমিত দাশগুপ্ত

খণ্ড-29
সংখ্যা-38