খবরা-খবর
যাদবপুর ক্যাম্পাসে চুক্তিবদ্ধ শ্রমিকদের মিছিল ও ডেপুটেশন
workers in Jadavpur campus

বিগত এক বছরের উপর সময় ধরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় চুক্তিবদ্ধ কর্মচারী ইউনিয়নের নেতৃত্বে চলছে দুই ক্যাম্পাসের বিভিন্ন কোম্পানি ও কনট্রাক্টরের অধীন চুক্তিবদ্ধ কর্মীদের আন্দোলন। ন্যায্য বেতন, ইপিএফ ও ইএসআই, বোনাস চালু করা ও নিয়মিতকরণ, সবেতন ছুটি, মাতৃত্বকালীন ছুটি সহ অন্যান্য গণতান্ত্রিক দাবি নিয়ে বিগত এপ্রিল মাস থেকে বারংবার কর্তৃপক্ষের কাছে ডেপুটেশন দিলেও কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে শুধু মৌখিক আশ্বাসই পাওয়া গেছে, অবস্থার কোনও পরিবর্তন হয়নি।

এমতো পরিস্থিতিতে ইউনিয়নের তরফ থেকে এক সাধারণ সভার ডাক দেওয়া হলে সেখানে উপস্থিত হন দুই ক্যাম্পাসেরই কর্মীরা এবং সাধারণ সভার সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে মিছিল করে পৌছানো হয় অরবিন্দ ভবনে, দাবি একটাই — অবিলম্বে সমস্ত সমস্যার সমাধান করতে হবে লিখিত নোটিশ জারি করার মাধ্যমে।

অরবিন্দ ভবন পৌঁছানোর পরে লক্ষ্য করা গেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সহ-উপাচার্য বা রেজিস্ট্রার কেউ উপস্থিত নেই। রয়েছেন শুধু ফিন্যান্স অফিসার। বিগত দিনেও পরিস্থিতি ছিল ঠিক একই রকম। বাধ্য হয়েই ফোন করা হয় সহ-উপাচার্যকে, ফিন্যান্স অফিসার ও সহউপাচার্যের সামনেই পড়া হয় ডেপুটেশন। প্রথমে কর্তৃপক্ষ আবারও সেই মৌখিক আশ্বাস দিয়েই ফিরিয়ে দেওয়ার রাস্তায় ছিলেন, কিন্তু কর্মচারীরা নিজেদের দাবিতে অনড় রয়েছে দেখে তারা কথা বলতে বাধ্য হন। প্রায় তিন-চার ঘণ্টা কথাবার্তা চালানোর পর তারা জানান চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পরে জানানো হবে।

আবেদন করা হয়েছে যে, উপাচার্য, সহউপাচার্য ও রেজিস্ট্রারের উপস্থিতিতে নোটিশ বের করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় কর্মচারিরা অনির্দিষ্টকালীন অবস্থানে বসতে বাধ্য হবো। ডেপুটেশন দাবিপত্রে বলা হয় –

  • (১) বিশ্ববিদ্যালয় সরকারি মেমোরান্ডাম ১০৩৩- এফ(পি)২ যে মানছে না তা তারা মৌখিকভাবে ইতিপূর্বেই জানিয়েছেন। এই বিষয়ে অবিলম্বে কর্তৃপক্ষকে লিখিত নোটিস জারি করতে হবে।
  • (২) কর্তৃপক্ষ এর আগে মৌখিকভাবে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে যেই ন্যূনতম বেতন কাঠামো বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গত ছ’বছর ধরে মানেনি, সেই কাঠামো তারা মানবে। এই ক্ষেত্রে এই মাস থেকে এই বেতন কাঠামো, সকলের জন্য পিএফ-ইএসআই-বোনাসের সুবিধা চালু করতে হবে, এবং এই মাসের মধ্যে সমস্ত কর্মীদের তাঁদের কার্যরত অবস্থার প্রথম দিন থেকে বকেয়া প্রাপ্য এরিয়ার এবং বকেয়া পিএফ-ইএসআই-বোনাস মেটাতে হবে।
  • (৩) বেতন কাঠামো ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে গত চার মাসে বিভিন্ন ডেপুটেশনের মাধ্যমে একাধিক দাবি জানানো হয়েছে, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনও দাবিই এখনও মানেনি। এই দাবিগুলি কবে কার্যকর করবে তা তাদেরকে লিখিতভাবে জানাতে হবে।
  • (৪) বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে গত ছ’বছরে তারা বিভিন্ন কোম্পানিকে কর্মীপিছু কত টাকা দিয়েছে, তার ব্যালান্স শিট পেশ করতে হবে।
  • (৫) বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক কর্মী এখনও লকডাউন ও আমফানের বকেয়া বেতন পাননি। এই মাসের মধ্যে তাঁরা সেই বেতন পাবেন, এই কথা লিখিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে।
  • (৬) বিভিন্ন কন্ট্র্যাক্টর কোম্পানির সাথে কর্মীদের ত্রিপাক্ষিক বৈঠক কবের মধ্যে সম্পন্ন করবেন, তার তারিখ লিখিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে।
  • (৭) বিশ্ববিদ্যালয়ের কনট্রাক্টরদের অধীন কর্মীদেরকে বিশ্ববিদ্যালয় এখনও দৈনিক চুক্তিবদ্ধ কর্মী হিসেবে রেখে দিয়েছেন। তাদের চূড়ান্ত অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে। তাদের নেই কোন ইপিএফ/ইএসআই বা বোনাস। অবিলম্বে তাদের দৈনিক মজুরি কাঠামো এক রেখে তাদের ইপিএফ/ইএসআই বা বোনাস দিতে হবে এবং তাদের মাসিক বেতন কাঠামোতে উন্নীত করতে হবে।
  • (৮) জেনারেল মেইনটেনেন্সের ২২ জন প্লাম্বার ও ২ জন কারপেন্টারদের জন্য অবিলম্বে প্রত্যেকদিনের রেজিস্টার চালু করতে হবে।
  • (৯) অবিলম্বে জেনারেল মেইনটেনেন্সের অন্যান্য কন্ট্র্যাক্টরদের অধীন কর্মীদের বেতন অনুযায়ী বোনাস দিতে হবে এবং পুজার ১৫ দিন আগে সেই টাকা তাদের মিটিয়ে দিতে হবে।
  • (১০) অবিলম্বে মহিলাদের ক্ষেত্রে মাতৃত্বকালীন ছুটি চালু করতে হবে।
  • (১১) বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত লিফটম্যানদের মধ্যে একজন শেখ ইয়াসিন ইএসআই হসপিটালে গতমাস থেকে ভর্তি রয়েছেন। এই মাস থেকে শোনা যাচ্ছে যে তার জায়গায় অন্য কাউকে নিয়োগ করার মাধ্যমে তাকে ছাঁটাইয়ের প্রস্তুতি চলছে। আমরা কিছুতেই এই সিদ্ধান্ত মানছি না এবং শারীরিক অসুস্থতার কারণে কোনও একজনকেও ছাঁটাই করা চলবে না।
  • (১২) বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে সমস্ত চুক্তিবদ্ধ কর্মীদের জন্য আইডেন্টিটি কার্ড ইস্যু করতে হবে।
  • (১৩) এছাড়া, ক্যাম্পাস সংলগ্ন কিছু দোকানের উপর যে হামলা হয়েছে বারবার, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তার বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা না নেওয়া হলে, তীব্র আন্দোলনে করা হবে।

বিগত এক বছরের লাগাতার আন্দোলনের প্রাথমিক সাফল

দীর্ঘ আলোচনার পর শেষ অবধি ইউনিয়নের কয়েকটি দাবি কর্তৃপক্ষ প্রাথমিকভাবে মানতে বাধ্য হয়েছে।

  • ১) অবিলম্বে শ্রম দপ্তরের নিয়ম অনুযায়ী ম্যান পাওয়ার এজেন্সিগুলির পর্যবেক্ষণে থাকা কর্মীদের ন্যায্য বেতনের অর্ডার এই মাস থেকে লাগু করা হবে।
  • ২) বিভিন্ন কনট্রাক্টরের পর্যবেক্ষণে থাকা যাদবপুরের চুক্তিবদ্ধ কর্মীদের মজুরি এক রেখে তাদের মাসিক বেতন কাঠামোয় অন্তর্ভুক্ত করা হবে এবং তারসাথে যুক্ত করা হবে ইপিএফ/ইএসাই ও বোনাস — এই সংক্রান্ত অর্ডার শীঘ্রই পাস করা হবে।
  • ৩) মহিলা কর্মীদের ক্ষেত্রে মাতৃত্বকালীন ছুটি মঞ্জুর করা হবে।
  • ৪) অবিলম্বে চুক্তিবদ্ধ কর্মীদের অসুবিধার সাহায্য দেওয়ার জন্য একটি হেল্প ডেস্ক চালু করা হবে।

- রিপোর্ট ও ছবি ইউনিয়নের ফেসবুক পাতা থেকে

খণ্ড-29
সংখ্যা-34