প্রতিবেদন
আমেরিকায় এখনও দাসব্যবস্থা সংবিধান স্বীকৃত
In America

পুরনো দাস ব্যবস্থা আধুনিকতম রূপে দেখা যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। ওখানে জোর করে কাজ করানো এখনও আইনসিদ্ধ। ইউএসএ-র গণতন্ত্র ও ব্যক্তি অধিকার নিয়ে বড় বড় কথা শোনা যায়, কিন্তু বাস্তবে দাসব্যবস্থা থেকে ওরা এখনও বেরোতে পারেনি। এই রাষ্ট্রটি গড়েই উঠেছিল ওই মহাদেশের আদি বাসিন্দাদের প্রায় সম্পূর্ণভাবে খতম করে দিয়ে আর আফ্রিকা ও এশিয়ার লক্ষলক্ষ কৃষ্ণাঙ্গ মানুষকে ক্রীতদাস হিসেবে নৃশংসভাবে কাজ করিয়ে। ক্রীতদাস প্রথাকে আধুনিক শিল্পবিপ্লবোত্তর সময়ে সংবিধান স্বীকৃতভাবে এত স্বাভাবিক অন্য কোনও দেশ বানিয়ে ফেলেনি। এক সময় ১৩তম সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে এই ক্রীতদাস প্রথার অবসান ঘটানো হয়। কিন্তু এই সংশোধনেও রেখে দেওয়া হয় কুৎসিত ফাঁক। সকলের জন্য দাসত্ব নিষিদ্ধ হলেও ওই সংশোধনীর আওতার বাইরে রাখা হয় সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীদের। অর্থাৎ শাস্তি হয়ে কারাগারে আছে যারা তাদেরকে দাস হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। বিষয়টা যে কেবল আইনের ফাঁক হিসেবেই আছে তা নয়। ইউএস-র জেলখানাগুলি আসলে দাস ব্যবসার আধুনিকতম বৈধ রূপ হিসেবেই বিকশিত হয়েছে। এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চারিত্র্যিক বৈশিষ্ট্র্য অনুযায়ি এর প্রধান শিকার অবধারিতভাবেই ওই দেশের কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিকেরা।

এ বিষয়ে কিছু সমীক্ষা আছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে প্রগতিশীল মানুষের অল্পবিস্তর প্রতিবাদও আছে। কিন্তু বাইরের জগতে তা খুব বেশি চর্চিত নয়। এই বছর জুন মাসে ওই দেশের শিকাগো ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগ একটি সমীক্ষার রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। খুব রেখেঢেকে মোলায়েম ভাষা ব্যবহার করেও যা উন্মোচিত হয়েছে তা মারাত্মক। সমীক্ষায় মূল মূল যে দিকগুলি উঠে এসেছে তা হল,

  • বন্দীদের অন্ততপক্ষে ৬৫ শতাংশ বলেছেন যে তাঁদের বলপূর্বক কাজ করানো হয়। এরকম মোট প্রায় ৮ লক্ষ জেলবন্দী আছেন।
  • শ্রম দিতে অস্বীকার করলে নতুন শাস্তির ব্যবস্থা আছে। নির্জন ঘুপচি কক্ষে চালান, কারাবাসের মেয়াদ কমার স্বাভাবিক প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেওয়া, পারিবারের মানুষদের সাথে দেখা করার সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া ইত্যাদি। চারভাগের তিনভাগ বন্দী এরকম অতিরিক্ত শাস্তির শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
  • কারাগারের শ্রমিকরা তাদের মালিকদের মর্জির পাত্র। তাদের কাজের অ্যাসাইনমেন্টের উপর কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই, ন্যূনতম মজুরি আইন তাঁদের জন্য খাটে না, ওভারটাইম পাওয়ার অধিকার থেকে তাঁদের বাদ দেওয়া হয়েছে, ইউনিয়ন করার প্রশ্নই নেই, যথাযথ প্রশিক্ষণ এবং সরঞ্জাম ছাড়া প্রায়ই বিপজ্জনক কাজ করতে বাম্য করা হয়।
  • ফলস্বরূপ, ৬৪ শতাংশ কারাবন্দী রিপোর্ট করেছেন যে নিরাপত্তার আশঙ্কার মম্যে কাজ করতে বাম্য হন, ৭০ শতাংশ বলেন যে তারা কোনও কর্ম-প্রশিক্ষণ পাননি, এবং ৭০ শতাংশ জানিয়েছেন, যে মজুরি পান তাতে সাবান এবং ফোন কলের মতো ন্যুনতম প্রয়োজনীয়তা মেটাতেও তাঁরা সক্ষম নন।
  • ইউএস-র ‘প্রিজন ইন্ডাস্ট্রি’ থেকে বছরে কমপক্ষে ১১ বিলিয়ন ডলার উৎপাদন হয়, কিন্তু তার শ্রমিকেরা পান সামান্য কিছু পয়সা। যা পান তার ৮০ শতাংশ আবার কেটে নেওয়া হয় তাদেরই ক্রাগারে থাকার বিভিন্ন ফি হিসেবে। যুক্তরাষ্ট্রের সাতটি রাজ কারাগারের শ্রমিকদের এক পয়সাও মজুরি দেওয়ার রীতি নেই।

এই সমীক্ষার প্রতিবেদনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কারাগার ব্যবস্থার ভণ্ডামি উন্মোচিত করে বলা হয়েছে যে, সংশোধনাগারের নামে আসলে মানুষের ন্যুনতম মর্যাদা ও মানবাধিকারটুকুও কেড়ে নেওয়া হয়। দাবি করা হয়েছে যে ১৩তম সংবিধান সংশোধনীতে বিশেষ ব্যতিক্রমের যে ধারা আছে তা মুছে দিয়ে দাসপ্রথার সাংবিধানিক ভিত্তিকে পাকাপাকিভাবে অবলুপ্ত করা হোক।

– মলয় তেওয়ারী

খণ্ড-29
সংখ্যা-41