খবরা-খবর
রেল হকারদের উপর পুলিশী হামলার বিরুদ্ধে কাটোয়ায় প্রতিবাদ সভা
Protest meeting in Katwa

রেল হকারদের উপর জিআরপি’র অত্যাচারের বিরুদ্ধে গত ২৮ অক্টোবর ২০২২ কাটোয়া স্টেশন চত্তরে রেল হকারদের এক প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। রেল পুলিশ দপ্তরের সামনে রুখে দাঁড়ানো মেজাজে কয়েকশত হকার ও মেহনতি মানুষের অংশগ্রহণে এই কর্মসূচি ছিলো যথেষ্ট উদ্দীপনাময়। উপস্থিত ছিলেন এআইসিসিটিইউ নদীয়া জেলা কমিটির সদস্য ও ব্যান্ডেল কাটোয়া সংগ্রামী রেল হকার ইউনিয়নের সভাপতি পরীক্ষিত পাল, পশ্চিমবঙ্গ রেল হকার্স ইউনিয়ন (সিআইটিইউ) সভাপতি অলকেশ দাস, রাজ্য সম্পাদক নেপালদেব ভট্টাচার্য্য, সিপিআই(এমএল) নদীয়া জেলা সম্পাদক জয়তু দেশমুখ, জেলা সদস্য দেবাশীষ সরকার সহ বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ।

বক্তারা বলেন, এই আক্রমণ কেবলমাত্র মুস্টিমেয় কয়েকজন হকারের উপরেই নয়, এটা সমস্ত রেল হকারদের উপর, গণতান্ত্রিক শক্তির উপর হামলা। রেল হকারদের বৈধ লাইসেন্সের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চলছে। এ লড়াই কেন্দ্রীয় সরকারের উদারনীতি, রেল বেসরকারিকরণের নীতির বিরুদ্ধে পরিচালিত, যা আরও ব্যাপকমাত্রায় গড়ে উঠছে। রেলের যাত্রীসাধারণের দৈনন্দিন চাহিদার সাথে রেল হকারদের জীবিকা অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। অসংগঠিত ক্ষেত্রে কর্মরত ও স্বনির্ভর এই রেল হকারদের জীবন জীবিকার উপর রেল পুলিশের হামলার বিরুদ্ধে এবং রেলকে কর্পোরেটদের হাতে তুলে দেওয়ার বিরুদ্ধে সর্বস্তরের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। রেল বেসরকারীকরণ পলিসির অঙ্গ হিসাবে শহরতলীর রেল যাত্রীদের খাদ্যদ্রব্য সরবরাহের দায়িত্ব ক্যাটারার কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। সেই সব কোম্পানির কাছে মোটা টাকা দিয়ে সাধারণ হকারদের হকারী করার প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে। কখনওবা বলা হচ্ছে ফাইন হিসাবে প্রতিদিন পুলিশকে টাকা দিয়ে হকারদের কাজ করতে হবে। এ হল এক ধরনের তোলাবাজি, এ’রাজ্যের শাসকদলের হকার ইউনিয়ন নিজেদের কায়েমী স্বার্থে এর ওকালতি করে চলেছে। প্রতিবাদ সভায় বামপন্থী নেতৃবৃন্দ এগুলিকে নস্যাৎ করেন। হকারী পেশাকে অসম্মান করার অপচেষ্টার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। তারা বলেন সর্বস্তরের মেহনতি মানুষ ও সাধারণ যাত্রীরা হকারদের জীবিকা রক্ষার জন্য ন্যয়সঙ্গত প্রতিবাদের পাশে রয়েছে।

ঘটনার বিবরণে জানা যায় কাটেয়া-ব্যাণ্ডেল রেল-হকারদের উপর রেল পুলিশের অত্যাচার ও জুলুমবাজি নিত্যদিনের ঘটনা। গত ২২ অক্টোবর ২০২২ নবদ্বীপ ধাম-মালদা টাউন এক্সপ্রেস নবদ্বীপ থেকে ভোর ৪:৪৫টার সময় ছেড়ে ৫:২০ নাগাদ কাটোয়া স্টেশনে পৌঁছায়। ট্রেন থেকে জনৈক দুই রেল হকারকে কাটোয়ার রেল পুলিশ ধরে আটকে রাখে। এই খবর পেয়ে বেশকিছু হকার ঘটনাস্থলে ছুটে যায় এবং ধৃত দুই হকারকে ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করে। রেল পুলিশ তাদের কথায় কর্ণপাত না করে গালিগালাজ করতে থাকে, জেলে আটকে রাখার হুমকি দেয়। রেল-হকাররা জানায় তাদের দুই সাথীকে না ছাড়লে তারা ধর্ণায় বসবে। তখন রেল পুলিশ বেশ কয়েকজন হকারকে গ্রেপ্তার করে। লাঠি চার্জ করে বাকিদের হঠিয়ে দেয়। সকলের মোবাইল কেড়ে নেওয়া হয়। তাদের বৈদ্যুতিক লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি মারা হয়, এমনকি রেল পুলিশ বুট দিয়েও লাথি মারে। মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেওয়া হয়। প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে তেরো জন রেল পুলিশ হিংস্র ও অমানবিক অত্যাচার চালায়। রেল পুলিশের বড়বাবু গালাগাল দিয়ে হকারদের উদ্দেশ্যে বলে “ট্রেনটা তোদের বাপের নয়, ট্রেনে হকারি করা চলবে না, ভিক্ষা করে খা। যদি তোর বাপের জায়গা জমি থাকে তাতে গিয়ে করে খা। ট্রেনে হকারি করবি না।” এরপর রেল পুলিশ এক হকারের পকেটে রিভলভার গুঁজে দেয় এবং এক মহিলা পুলিশকে বলে পোষাক ছিঁড়তে। এতে করে তাদেরকে অভিযুক্ত করে ফাঁসানো হবে যে হকাররা শ্লীলতাহানি করেছে এবং রেল-পুলিশের উপর আক্রমণ করেছে।

এরপর ধৃতদের থেকে ৩,৩০০ টাকা জরিমানা হিসাবে নেওয়া হয়, কোনোরকম কোনো রসিদ না দিয়েই। পুলিশ জানায় হকারদের নামে কেস দেওয়া হবে। এরপর মেডিকেলের জন্য রেল পুলিশ ঐ হকারদের নিয়ে যায় এবং ভয় দেখিয়ে বলা হয় তাদের যে মারধর করা হয়েছে সেটা তারা যেন না বলে। বললে জেলে পাঠানো হবে। মেডিকেল হওয়ার পর তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

এআইসিসিটিইউ অনুমোদিত ব্যান্ডেল কাটোয়া সংগ্রামী রেল হকার ইউনিয়নের সম্পাদক সুবল দেবনাথ বলেন, “সরকার আমাদের স্থায়ী কাজ দিতে পারেনি। চুরি, অসৎ উপায় অবলম্বন না করে আমরা ট্রেনে ফেরি করি। রেল পুলিশ আমাদের কাছে টাকা দাবি করে। টাকা দিতে অস্বীকার করলে বিভিন্ন কেসে ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। রাজ্যে তেমন কোনো শিল্প কারখানাও নেই। রেল আমাদের কর্মসংস্থানের ও রুটি-রুজির একটা জায়গা। সেটাকেও যদি সরকার কেড়ে নেয় আমরা বাঁচবো কি করে! তাই পেটের লড়াইয়ে আমরা এক হয়ে পথে নেমেছি”।

খণ্ড-29
সংখ্যা-42