খবরা-খবর
গ্রামীণ শ্রমজীবীদের সংগঠিত করার উদ্যোগে সামিল হাওড়া জেলার ছাত্রছাত্রীরাও
studentst also participated

গ্রামকে না চিনলে ভারতকে চেনা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। গ্রামীণ মেহনতিদের সংঘবদ্ধ লড়াইয়ের স্ফূলিঙ্গই দাবানল হয়ে একসময় ছড়িয়ে পড়েছিলো ভারত জুড়ে। সত্তরের দশক মুক্তির দশক হয়ে ওঠার সেই স্বপ্নপথের যাত্রী হতে চারু মজুমদার ডাক দিয়েছিলেন “শ্রমিক-কৃষকের সঙ্গে একাত্ম হও”।

বর্তমান সময়ে যখন গ্রামীণ ভারতের দুর্বিষহ অবস্থা ক্রমবর্ধমান, গ্রামগুলোর যাত্রা শহরমুখী, গ্রামীণ অর্থনীতি ধু্ঁকতে ধুঁকতে তলানিতে, এই সময়েই গ্রামীণ মেহনতিদের সর্বভারতীয় সম্মেলন হবে হুগলির চন্দননগরে। এটা নিছক কোনও গণসংগঠনের সম্মেলন নয়, এই সম্মেলন নিঃসন্দেহে ভারতের বিপ্লবী আন্দোলনের সবথেকে বড় জনভিত্তিকে আরো সংগঠিত করার নিরবচ্ছিন্ন প্রয়াস। এই প্রয়াশের অংশ হিসাবে সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের ডাক ছিল চলো আরেকবার ফিরি শ্রেণীর কাছে। পার্টির সমস্ত অংশের সংগঠকদের পাখির চোখ হোক গ্রামীণ মেহনতিদের সংগঠিত করার এই প্রচেষ্টা। পশ্চিমবঙ্গেও এই কাজেই পার্টির সর্বস্তরের কর্মীরা সামিল। সেই পদাতিক বাহিনীতে সামিল হয়েছে পার্টি আধারে থাকা ছাত্রছাত্রীরাও।

হাওড়া জেলার গ্রামীণ কাজের ক্ষেত্র বাগনান ১ ও ২নং ব্লকে জেলার ছাত্র-ছাত্রীরা সামিল হয়েছে সারা ভারত কৃষি ও গ্রামীণ মজুর সমিতির অভিযানে। নিছক ওপর থেকে আসা কর্মসূচি হিসাবে নয়, আরো কাছ থেকে শিকড়কে চিনে নেওয়ার প্রত্যয়েই এই সামিল হওয়া। তাদের সামিল হওয়ার উন্মাদনাতে গ্রামীণ কমরেডরাও নতুন করে উৎসাহিত হয়েছেন।

খুব ধীরে শুরু হলেও গতি পেতে থাকে হাওড়া জেলায় আয়ারলার অভিযান। শুরুর দিকেই এই অভিযান চলাকালীন প্রাণনাশের হুমকির সম্মুখীন হতে হয়েছে। তারপরেও চেনা ছক ভাঙার প্রচেষ্টা অব্যাহত থেকেছে কমরেডদের। ছাত্রছাত্রীরা সেই প্রচেষ্টায় নিজেরাও সামিল হয়েছে।

বাগনান ২নং ব্লকের বিভিন্ন গ্রামগুলোতে ঘুরে ঘুরে গ্রামীণ শ্রমজীবি জনতার নিত্যদিনের সমস্যাকে তারা জানাবোঝার চেষ্টা করেছে। একশো দিনের কাজের বকেয়া মজুরি না পাওয়ার যন্ত্রণা, গ্রামে কাজ না পেয়ে বেকার যুবকদের ভিনরাজ্যে পাড়ি দেওয়ার যন্ত্রণার শরিক হওয়ার চেষ্টা করেছে ওরাও। বাড়ি ভেঙে পড়ছে কিন্তু আবাস যোজনার ঘর নেই, একশো দিনের কাজ বন্ধ, রাজ্যের সমস্ত গ্রামগুলোর প্রতিচ্ছবির থেকে আলাদা নয় হাওড়া জেলার অবস্থাও। আর এই ভয়াবহ সংকটকে আরো সামনে থেকে প্রত্যক্ষ করার অভিজ্ঞতা হলো ছাত্র-ছাত্রীদেরও। নিজেদের দাবি-দাওয়ার সঙ্গেই বৃহত্তর জনতার দাবির মেলবন্ধন না হলে, নিজেদের দাবিও পূরণ হবে না। এই চেতনা আরো দৃঢ় হয়েছে।

অর্থ সংগ্রহ, গ্রামে গ্রামে ঘোরার মধ্যে নিজেদের নতুনভাবে শেখা-জানা-বোঝার এক দিগন্ত খুলে গেল ছাত্রছাত্রীদের সামনেও। শ্রেণিই সবথেকে বড়ো শিক্ষক। তাই শ্রেণির মানুষের সঙ্গে একাত্ম হওয়া, তাদের লড়ইয়ে শরিক হওয়ার এই অভিযান জারি থাকবে।

খণ্ড-29
সংখ্যা-42