প্রতিবেদন
ক্ষুধিত পাষাণ

 

hungry

বিশ্বের ক্ষুদার্থ দেশগুলির মধ্যে বর্তমানে ভারতের স্থান ১০৭ নম্বরে। কোভিড পর্যায়ে মানুষ দেখেছে দেশ ও বিশ্বজুড়ে ভঙ্গুর চিকিৎসা ব্যবস্থার চিত্র, মৃত্যু, হাহাকার। এই অবস্থার সুপরিবর্তন আনতে কেন্দ্রীয় সরকার গতবছর ও চলতি বছরের বাজেটে বৃদ্ধি করেছে স্বাস্থ্যখাতে বিলগ্নিকরণও। গত দু’বছরে রাজ্য সরকারও স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ খাতে বৃদ্ধি করেছে বিলগ্নি।

বোলপুর-শ্রীনিকেতন ব্লকে শান্তিনিকেতন পৌরসভা সহ রয়েছে নয়টি গ্রাম পঞ্চায়েত। কোপাই নদী পেরিয়ে কসবা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বিদ্যাধরপুর, গ্রামের ৯০ শতাংশ মানুষই চাষাবাদের উপর নির্ভরশীল। গ্রামের সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রে বর্তমানে ভ্যাক্সিনের দ্বিতীয় ডোজ ও বুস্টার দেওয়ার কাজ চলছে। সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কমিউনিটি হেল্থ অফিসার (সিএইচও) সম্পা দে জানান, “বিদ্যাধরপুর সংলগ্ন ৬টি গ্রামের মানুষ এই সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উপর নির্ভরশীল। অতীতে গর্ভবতী মহিলা, প্রসূতি মহিলাদের জন্য চালু হয়েছিল সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রটি। বর্তমানে পোলিও, টীকাকরণ, ৩০ বছরের উপর সকলের প্রেসার, ক্যান্সারের স্ক্রিনিংও করা হচ্ছে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র।” গ্রামে-গ্রামে চলছে সর্বশিক্ষা অভিযান, কোয়েতপুকুর আদিবাসী গ্রামে অঙ্গনওয়ারী কর্মী লক্ষ্মীমণি কিস্কোর সেন্টারে বর্তমানে ২০ জন শিক্ষার্থী। গ্রামে ০-৬ বছর বয়সী শিশুর সংখ্যা এরচেয়ে বহু বেশি তবুও এত কম সংখ্যক শিশুতে এই জনকল্যাণ মূলক প্রকল্পগুলো সীমাবদ্ধ কেন তা অবশ্যই ভাবনার বিষয়। বাঁধ নবগ্রাম হাইস্কুল, আশাদুল্লাপুর আদিবাসী প্রাইমারি স্কুলে নিয়ম করেই চলছে দুপুরের মিড-ডে-মিল। দুপুরের ধোঁয়া ওঠা গরম ভাতে খুশি বাঁধ নবগ্রাম হাইস্কুলের ক্লাস ৮’র শুভ লোহার ও তার বন্ধুরা।

গ্রামগুলিতে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডও হয়েছে বহু মানুষের, বিনামূল্যে চিকিৎসাও হয়েছে বহু মানুষের জানালেন বাঁধ নবগ্রামের হাইস্কুল লাগোয়া মুদী দোকানের মালিক ভবতারণ পাল, চাষি আশিষ পাল অত্যন্ত ক্ষোভের সাথে জানালেন “পরিবারে কারুর বড় কিছু হলে সেই ছুটতে হয় ১৩ কিলোমিটার দূরে সিয়ান হসপিটালে, খুব এমার্জেন্সি বা চেনাশোনা না থাকলে বিশ্বভারতীর পিএম হসপিটালে চিকিৎসা হয় না সবার, বেশি সুযোগ সুবিধাই ছাত্রছাত্রী বা বিশ্বভারতীর স্টাফদের জন্য। আবার এও ঠিক, পিএম হসপিটালেও সব চিকিৎসা হয় এমনটা নয়। গ্রামে সরকারি বা বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থাও খুব একটা সচ্ছল নয় তাই প্রায়শই ভোগান্তিতে পরতে হয় আশেপাশের গ্রামের মানুষদের।”

শ্রীচন্দ্রপুর রেশন অফিসের মালিক নবকুমার ঘোষের থেকে প্রতি মাসে রেশন পায় ৬৭৬টি পরিবার। RKSY1, RKSY2, PHH, AYY কার্ডে সকলেই পাচ্ছেন নিয়মমতো রেশন। তবে নবকুমার বাবুর ক্ষোভ একটাই “আশেপাশে গ্রাম যেমন বিদ্যাধরপুর আদিবাসী পাড়া, কোয়েত পুকুর আদিবাসী পাড়া এবং গ্রাম পঞ্চায়েতগুলির কিছু কিছু পাড়ায় ৯০ শতাংশ আদিবাসী পরিবারে নেই কেন্দ্রীর সরকারের NFSA কার্ড। ফলে তার সুবিধা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা।”

এই অসম বন্টন ও থেকে যাওয়া ভুলগুলোই হয়তো বিশ্ব দরবারে ভারতের স্থানকে এই জায়গায় এনে দাঁড় করিয়েছে। যা শুধু বোলপুর শান্তিনিকেতন ব্লকের কিছু গ্রামেই নয়, সারা দেশেরই ভিন্ন ভিন্ন স্থানে।

- অমিতাভ বিশ্বাস

খণ্ড-29
সংখ্যা-43