আবেদন
ত্রিপুরায় ত্রয়োদশ বিধানসভা নির্বাচন : নির্বাচকমণ্ডলীর প্রতি সিপিআই(এমএল)-এর আবেদন
tripura

আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ত্রিপুরায় ত্রয়োদশ বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। উত্তর-পূর্বের মেঘালয় ও নাগাল্যান্ডে ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ বিধানসভা নির্বাচন হবে। ভোট গণনা হবে ২ মার্চ ২০২৩। নির্বাচনী নির্ঘন্ট ঘোষণার আগে ভারতের নির্বাচন কমিশনের তিনজনের পূর্ণাঙ্গ টিম রাজ্যের সর্বশেষ পরিবেশ পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে দু’দিনের জন্য রাজ্যে সফর করে গেছেন। বিরোধী দলগুলোর পক্ষ থেকে কমিশনের প্রতিনিধিদের কাছে নির্বাচন অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও ভয়মুক্ত পরিবেশে অনুষ্ঠিত করার জন্য দাবি করা হয়। এই সরকারের রাজত্বে পঞ্চায়েত, নগর সংস্থা, লোকসভা, টিটিএডিসি’তেও গত জুন মাসে বিধানসভার ৪টি আসনে উপনির্বাচন গুন্ডাদল দিয়ে ভোট লুট করে সম্পূর্ণ প্রহসনে পরিণত করা হয়েছিল, তা সবিস্তারে লিখিতভাবে তুলে ধরা হয়। যদিও টিটিএডিসি’র নির্বাচনে তিপ্রা মথার নেতৃত্বে তিপ্রাসা জনগণ প্রতিরোধ গড়ে তুলে ১৮টি আসনে বিজেপিকে পরাজিত করেছিল। কমিশন এই অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখেছে ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার আশ্বাস দিয়েছে। ইতিমধ্যে রাজ্য মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক হিংসা মুক্ত, জিরো পোল ভায়োলেন্স মিশন ঘোষণা করেছে। গত নির্বাচনে ৬০টি বিধানসভা কেন্দ্রের মোট ৩২২৮টি বুথের মধ্যে ৯২৯টিতে ভোট ৯২ শতাংশের কম পড়েছে। কমিশন ঐ ৯২৯টি বুথে প্রদত্ত ভোটের হার ৯২ শতাংশে বৃদ্ধি করতে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। কারণ ২০১৮’র আগে রাজ্যে যেকোনো ভোট উৎসবের মেজাজে হতো। ভোটের আগে ও পরে সামান্য কিছু হিংসার ঘটনা ছাড়া। কিছুদিনের মধ্যেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যেতো। কিন্তু বিজেপির আমলে কেউ ভোট দিতে পারেনি। পাঁচ বছর ধরেই সন্ত্রাস অব্যাহত রয়েছে। তাই এবারের সাধারণ নির্বাচনে ভোটদানের জন্য ভয়মুক্ত ও শান্তিপূর্ণপরিবেশ তৈরি করা নির্বাচন কমিশনের কাছে এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। ভোটদাতাদের কাছেও এটা একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ বটে। রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছে ভোটদাতাদের একটাই প্রশ্ন, নির্বিঘ্নে ভোট দেওয়া যাবে কিনা? পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে, নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধিরা ঘুরে যাওয়ার পরের দু’দিনের মধ্যে ৫৪টি হিংসার ঘটনা ঘটেছে। নির্বাচন ঘোষণার পরে কমিশনের নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখিয়ে খোদ মন্ত্রী বাহাদুরের নেতৃত্বে মজলিসপুরে বিরোধী দলের বাইক মিছিলে প্রাণঘাতী হামলা সংঘটিত হয়েছে। সূর্যমনিনগরে আরেক মন্ত্রী বাহাদুর, বিরোধীরা তার কেন্দ্রে প্রচার করতে এলে প্রকাশ্যে হাত-পা ভেঙে দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। দৈনিক পত্রিকায় এ’খবর প্রকাশিত হয়েছে। অথচ কমিশন কোন কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। প্রথম ঘটনায় শুধুমাত্র একজন মহকুমা পুলিশ অফিসার, দু’জন ওসিকে শাস্তি দিয়েছে। আরও কিছু অভিযুক্ত পুলিশ অফিসার ও সিভিল অফিসারদের সরানোর দাবি উঠেছে। তাই, আমার ভোট, আমার অধিকার, আমার ভোট আমি যাকে খুশি তাকে দেব — এই দাবিতে জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে বিরোধী দলগুলোর ডাকে আগরতলায় এক ঐতিহাসিক নাগরিকদের মহামিছিল সংগঠিত হয়েছে। সারা রাজ্যে অবাধ, ভয়মুক্ত ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটদানের অধিকার সুনিশ্চিত করতে, কমিশনের জিরো পোল ভায়োলেন্স মিশন যাতে কথার কথা না হয়, তারজন্য রাজ্য মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের কাছে ডেপুটেশন দেওয়া হয়। সিপিআই(এমএল) নির্বাচকমণ্ডলীর কাছে ভোট লুটেরাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধে এগিয়ে আসার আবেদন জানায়। এই নির্বাচনে যেকোন মূল্যে বিজেপিকে পরাস্ত করতে শপথ নিতে হবে। কারণ এরা আবার ক্ষমতায় ফিরে এলে নির্বাচনী গণতন্ত্রের কবর রচনা হবে।

২০১৮’র বিজেপির ভিশন ডকুমেন্ট এক প্রতারণার দলিল

২০১৮’র বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি কর্তৃক ভিশন ডকুমেন্টে ২৯৯টি প্রতিশ্রুতি ও ১০টি অ্যাকশন প্ল্যান রাখা হয়েছিল। গত পাঁচ বছরে তা ১০০ ভাগ মিথ্যা ও প্রতারণায় পর্যবসিত হয়েছে। ডাবল ইঞ্জিন আরও একটি বড়ো প্রতারণা। যেমন ক) প্রতি ঘরে একটি করে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাস্তবে ধোঁকা প্রমাণিত হয়েছে। একবছরের মধ্যে ৫০ হাজার শূণ্যপদ পূরণ করা মিথ্যা প্রতিশ্রুতি ছিল। এখন বলছে এমন প্রতিশ্রুতি তারা দেয়নি। অথচ অ্যাকশন প্ল্যানে তা এক নম্বরে। গত ৫ বছরে ২০,১৩৮ জন সরকারি কর্মচারীর সংখ্যা কমেছে। সরকারি শূণ্যপদ পূরণ না করে নির্বিচারে অবলুপ্ত করা হচ্ছে। ৭ লক্ষ বেকারের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনা ও অন্যান্য যোজনায় ৬ লক্ষাধিক নথিভুক্ত বেকারকে স্বনির্ভর দেখানো হয়েছে। ১৩ হাজার অশিক্ষক শূণ্যপদ বাতিল করে চাকুরীচ্যুত ১০,৩২৩ জন শিক্ষকদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে সরকার। চার বছরের মাথায় জেআরবিটি’র মাধ্যমে গ্রুপ-সি ও গ্রুপ-ডি পদে ইন্টারভিউ নেওয়ার পর সরকার চাকুরী ঝুলিয়ে রেখেছে। এইক্ষেত্রে ৪৯১০টি পদে সোয়া লক্ষ নথিভুক্ত উচ্চ ডিগ্রীধারি বেকাররা পরীক্ষা দিয়েছে। কিন্তু সরকার ভয়ে ফলাফল প্রকাশ করে নিয়োগ করছে না। সিএমআইই’র মতে দেশে বেকারত্ব ৮.৭ শতাংশ। আর ত্রিপুরায় বেকারত্বের হার ১৫.৫ শতাংশ। দেশে ত্রিপুরা সবার উপরে। বেকার যুবকরা ক্ষোভে ফুঁসছেন। টিএসআর’এর দুটি রিজার্ভ ব্যাটেলিয়ানে নিয়োগ নিয়ে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বঞ্চিত চাকুরী প্রার্থীরা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ বিক্ষোভে সামিল হয়েছেন। তাদের ব্যাপক ধরপাকড় ও হেনস্থা করা হয়েছে। ডাবল ইঞ্জিন সরকারের প্রতিশ্রুতি ঘরে ঘরে চাকুরী নিয়ে বেকার যুবক ও তাদের পরিবারের লোকজন প্রতারিত হয়ে ক্ষোভে ফুঁসছেন। রাজ্যে বেকারত্ব এক বিস্ফোরক অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে।

খ) স্নাতক স্তর পর্যন্ত মুক্ত নারীশিক্ষা : গত ৪ জানুয়ারি ২০২৩ প্রধানমন্ত্রী নিজে বিদ্যাজ্যোতি প্রকল্পের সূচনা করেন। যাতে ১০০টি সরকারি বিদ্যালয়কে বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে ছাত্রছাত্রীদের হাজার টাকা ফি দিয়ে টাটাদের মতো এলিট স্কুলে পড়তে হবে। সম্পূর্ণ অবৈতনিক বিদ্যালয় শিক্ষাকে সরাসরি পণ্য করে তোলা হল। এরআগে ৯৬১টি বিদ্যালয়কে প্রয়োজনীয় ছাত্র সংখ্যা কম হওয়ায় চিরতরে বন্ধ করে দেওয়া হয়। মিড-ডে-মিল প্রকল্প তুলে দেওয়া হয়, বেসরকারি এনজিও অক্ষয় ফাউন্ডেশনের হাতে। প্রি প্রাইমারী নার্সারি স্কুলে বিনামূল্যে পাঠ্যবই নেই, মিড-ডে-মিল নেই। শিক্ষক সমস্যা তীব্র। এক কথায় সমস্ত শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। এটাই হচ্ছে মুক্ত নারীশিক্ষার নমুনা।

গ) রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের জন্য ৭ম বেতন কমিশন অনুসারে বকেয়া ন্যায্য পাওনা মিটিয়ে দেওয়ার জনপ্রিয় প্রতিশ্রুতি সবচেয়ে বড় মিথ্যায় পর্যবসিত হয়েছে। আংশিক পাওনা মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে মাত্র। অথচ এই রাজত্বে সরকারি কর্মচারীদের পেনশনের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। ১৮ শতাংশ ডিএ এখনো বকেয়া। তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারীদের মেডিক্যাল রিএমবার্সমেন্ট তুলে দেওয়া হয়েছে। সার্ভিস রুলস পরিবর্তন করে জোরপূর্বক অবসরে যেতে বাধ্য করতে আইনী বিধান তৈরি করা হয়েছে। সরকারি কর্মচারীরা যাতে আন্দোলন করতে ভয় পায় তারজন্য প্রথমদিকে আইনসভাতে এসমা তৈরি করে রাখা হয়েছে। অত্যাবশ্যকীয় পরিসেবা ক্ষেত্রে নিযুক্ত ফায়ার সার্ভিস দপ্তরের কর্মীদের সভা সমিতি করা ও ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে।

ঘ) নূন্যতম মজুরি ৩৪০ টাকার প্রতিশ্রুতি রূপায়ন না করে গরিব অসহায় শ্রমজীবিদের ঠকাচ্ছে সরকার। ৩৪টি ভাতা প্রকল্পে ৪.১৯ লক্ষ সুফলভোগী থেকে অন্যায়ভাবে প্রায় এক লাখের উপর সুফলভোগীর নাম কেটে বাদ দিয়েছে। এদের বাদ দিয়ে ২০০০ টাকা করে ভাতা বাড়ানো হয়েছে। গরবের মুখের গ্রাস কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এখন নূন্যতম মজুরি মাত্র ২১২ টাকা। মনরেগায় ২০২২-২৩তে রাজ্যে গড়ে মাত্র ৩৮ দিনের কাজ হয়েছে। কোন কোন এডিসি ভিলেজে ২৫ থেকে ২৮ দিন কাজ হয়েছে। সোস্যাল অডিট হয়নি। দুর্নীতি আর দুর্নীতি। দৈনিক ২১২ টাকার মজুরিও কেউ পায়নি। ১৯০ টাকার কম মজুরি এবং বকেয়া মজুরি পাহাড় প্রমাণ। মনরেগার কোটি কোটি টাকা লুট হয়েছে। পঞ্চায়েতে ও ব্লকে ব্লকে বিক্ষোভ দেখা দিয়েছে। জিআরএস ও মনরেগা কর্মীদের নিয়মিত বেতন হচ্ছে না। বেতন ও মজুরি ছাড়া কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে।

ঙ) প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় সবার জন্য পাকা বাড়ির প্রতিশ্রুতি পালনে চতুর্থ বছরে এসে ১.৪৭ পরিবারকে প্রথম কিস্তির টাকা দেওয়া হয়েছে। লাভার্থী হিসাবে নির্বাচনে ফায়দা নেওয়া এর উদ্দেশ্য। সুফলভোগী নির্বাচন ও কিস্তির টাকা নিয়ে বিক্ষোভ দেখা দিয়েছে। সুফলভোগী নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক দুর্নীতি হচ্ছে। বাজারে নির্মাণ সামগ্রীর দাম অগ্নিমূল্য। ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা দিয়ে সবার পক্ষে ঘর নির্মাণ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে না। অনেক ক্ষেত্রেই অর্থের বিনিময়ে ঘর দেওয়া হচ্ছে।

চ) প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও বিপিএল পরিবারের সবাইকে স্বাস্থ্যবীমার অন্তর্ভুক্ত করতে পারেনি। স্বাস্থ্যবীমার উদ্দেশ্যই হচ্ছে গণস্বাস্থ্যকে বীমামুখী ও বেসরকারিকরণ করা। এই সরকার, সরকারি হাসপাতালে করযোগ্য পরিষেবা চালু করেছে।

ছ) বিনামূল্যে পানীয় জল সরবরাহের প্রতিশ্রুতি কার্যত শুল্কবৃদ্ধি, অপর্যাপ্ত ও অনিয়মিত জল সরবরাহে পরিণত হয়েছে। সবচেয়ে উদ্বেগপূর্ণ বিষয় হচ্ছে জলের উৎস ও যোগান কমে আসছে। দীর্ঘমেয়াদি কোন পরিকল্পিত উদ্যোগ নেই।

জ) অনিয়মিত ও চুক্তিবদ্ধ সমস্ত সরকারি কর্মচারীদের নিয়মিত করার প্রতিশ্রুতি কার্যত মিথ্যা প্রতারণায় পর্যবসিত হয়েছে। রাজ্যে ৪০ থেকে ৪৪ হাজার অনিয়মিত শ্রমিক কর্মচারী আছে। ঠিকা ও চুক্তিতে নিয়োগ করা হচ্ছে। সরকার নিযুক্ত ভার্মা কমিটি প্রথমেই গ্রুপ-ডি পদ অবলুপ্ত করার সুপারিশ করেছে। মিড-ডে-মিল কর্মী, বাগিচা ও উদ্যান শ্রমিক, হাসপাতালে আংশিক সময়ের কর্মী ও স্লিপ ওয়ার্কার, পাম্প অপারেটর, জিআরএস, স্বাস্থ্য মিশন, সমগ্র শিক্ষা, সাফাই কর্মী ও অনিয়মিত পুর শ্রমিক ও কর্মচারীদের নিয়মিত করার কোনও সুযোগ নেই। তাদের বারবার কর্মচ্যুতির আশঙ্কা ও ধমকের মধ্যে দিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। আর চাকুরির শেষে তাদের খালি হাতে অবসরে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে।

তাছাড়া, রাজ্যে ৩৯১৫টি শ্রমজীবি মহিলাদের স্বসহায়ক দল নিজেরা আমানত হিসাবে ৩৩৬.৫৫ লক্ষ টাকা জমা করেছে এবং ব্যাংক হতে ৭০৪৯ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণ করেছে। এখানে সিডি রেসিও অত্যন্ত কম। অর্থাৎ ঋণ করে ভোগ ব্যয় নির্বাহ করছে শ্রমজীবি গরীব জনগণ। মাইক্রোফিনান্স কোম্পানিগুলির দলগত ভাবে চড়া সুদে সহজলভ্য ঋণদান একই চিত্র তুলে ধরে। এই ঋণদান কোনও বিনিয়োগ নয় যে তা মূলধন গঠন করবে। বরং তা প্রমাণ করে যে রাজ্যের সাধারণ মানুষের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ এবং রোজগার নেই বললেই চলে। আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধির বাজারে বেশি করে কর্মসংস্থান ও যথেষ্ট পরিমাণ মজুরি বৃদ্ধি হলে ক্রেতার ক্রয়ক্ষমতা ও ভোগব্যয় বাড়তো ও অর্থব্যবস্থা সচল হতো। টুকটাক মজুরি বৃদ্ধি তাতে কোনও প্রভাব সৃষ্টি করেনি।

আরএসএস-বিজেপির উগ্র জাতীয়তাবাদী, বিভেদমূলক, ঘৃণা ও বিদ্বেষমূলক রাজনৈতিক বিচারধারা এবং মোদীর আগ্রাসী রাজত্বে দেশে ও রাজ্যে গণতন্ত্রের উপর সর্বাত্মক আক্রমণ নামানো হয়েছে। এই আক্রমণের পিছনে কর্পোরেট কোম্পানিগুলো বিশেষত আদানি-আম্বানিরা দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়েছে। আর তার বিনিময়ে মোদী সরকার দেশের সমস্ত জাতীয় সম্পদ, প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদ, রাষ্টায়ত্ত সংস্থাগুলোকে তাদের হাতে তুলে দিচ্ছে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা সহ সমস্ত সরকারি পরিষেবা ক্ষেত্রের অবাধে বেসরকারিকরণ করছে। স্থায়ী ও নিয়মিত চাকরি ও কর্মসংস্থানকে ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে। বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে ভারত ক্রমশঃ নীচের দিকে নামছে। বিস্ফোরক অবস্থায় বেকারত্ব, অসহনীয় মূল্যবৃদ্ধি, ক্রমহ্রাসমান মজুরি এই চতুর্মুখী হামলায় বিপর্যস্ত দেশবাসী। অথচ ১ জানুয়ারি হতে জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইনে সুফলভোগীদের জন্য মাথাপিছু ৫ কেজি করে নিঃশুল্ক খাদ্যশষ্য বরাদ্দ বন্ধ করে দিয়েছে। চালের বরাদ্দ অর্ধেক হয়ে গেছে। কৃষি উপকরণ অগ্নিমূল্য। কিন্তু সমস্ত কৃষি ফসলের জন্য এমএসপি আইনের গ্যারান্টি আইন চালু করা হয়নি। সরকার কৃষকদের সাথে বেইমানী করেছে। কৃষকদের আয় বাড়েনি। মনরেগা ও বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পে বরাদ্দ কমিয়ে দিয়ে প্রকল্পগুলিকে ধ্বংসের কিনারায় এনে দাঁড় করিয়েছে। গ্রাম রোজগার সেবক, সমগ্র শিক্ষা, মাদ্রাসা শিক্ষকদের বেতনভাতা বৃদ্ধি করেনি। প্রত্যেক পরিবারের রোজগার ও আয় কমেছে। অভাবে আত্মহত্যা, সন্তান বিক্রির মতো ঘটনা ঘটেছে। অপরিকল্পিত বিধ্বংসী নোটবন্দি, জিএসটি খুচরা ব্যবসা বাণিজ্যে বিপর্যয় ডেকে এনেছে। এই জনবিরোধী নীতিগুলির প্রভাবে সারা দেশের সাথে আমাদের রাজ্যেও জনগণের জীবন-জীবিকার উপর বিপর্যয় নেমে এসেছে।

দ্বিতীয়ত, দেশের সংবিধান এই সরকারের হাতে লাগাতার আক্রমণের মুখে পড়েছে। সরকার বিরোধী মুক্ত একদলীয় শাসন চাপিয়ে দিতে চাইছে। তারজন্য প্রশাসন বিভাগ, আইনসভা ও সংসদীয় প্রতিষ্ঠানগুলির সততা ও স্বাধীন সত্তাকে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে। রাজ্যেও ২০১৮ থেকে লাগাতার বিরোধী দলের শত শত কার্যালয় ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, কর্মী ও নেতাদের উপর আক্রমণ, জীবনহানি, জীবিকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। বিধানসভাকে একদলীয় শাসনের হাতিয়ার করে তোলা হয়েছে। তাই সংবিধানের স্পিরিট ও মূল্য রক্ষার চ্যালেঞ্জ নিতে হবে।

তৃতীয়ত, সারা দেশে ও আমাদের রাজ্যে বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি ও ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্রের উপর সংঘ বাহিনী আক্রমণের ক্রমবিস্তার ঘটাচ্ছে। গতবছরে বাংলাদেশের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্যে পরিকল্পিতভাবে মসজিদের উপর আক্রমণ ও তীব্র ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়িয়ে দিতে আগ্রাসী হয়ে উঠেছিল। উদয়পুর, কৈলাসহর ও ধর্মনগরে কিছু মিশ্র বসতি এলাকা বেছে বেছে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর জন্য উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো চেষ্টা করেছে। কিন্তু সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পরম্পরা ও ঐতিহ্য রাজ্যে এতটাই শক্তিশালী যে, সমস্ত চক্রান্ত ব্যর্থ হয়েছে। এখন ভোটের মুখে উদয়পুরে রাজধরনগর গ্রামে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে মিথ্যা হামলার ষড়যন্ত্র রচনা করে বিভাজন ও দাঙ্গার উস্কানি দেওয়া হয়। এমন বিভৎস ঘটনা উদয়পুরের উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ কেউ কখনো তাদের জীবনে দেখে নাই। এবার ভোটে এই বিভেদের ও সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের রাজনীতিই বিজেপির একমাত্র ভরসা। তাই বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি ও ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্র রক্ষার প্রতিজ্ঞা করতে হবে।

চতুর্থত, সরকারি মদতে সন্ত্রাস অব্যাহত। আইনের শাসন বিপন্ন। এখন প্রায় প্রতিদিন প্রতিরাতে বিরোধী দলের কর্মীদের বাড়িঘর, দোকানে ভাঙচুর, আগুনে জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। পার্টি অফিস জ্বালিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটছে। গত ৫ বছরে ২৫ জন বামকর্মী খুন হয়েছেন। ২০১৮তে ফলাফল ঘোষণার পাঁচদিনের মধ্যে ৫ জন খুন হয়েছিলেন। গত ৫ বছরে সরকারের নির্দেশে ১৬৪টি পার্টি অফিস, ৩১টি গণসংগঠনের অফিস আইন প্রয়োগ করে বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। আর গুন্ডা দিয়ে ২১০টি পার্টি অফিস, ১৬০টি গণসংগঠনের অফিস ভেঙ্গে দেয়। আগুনে জ্বালিয়ে দেয়। উদয়পুরে সিপিআই(এমএল)-এর অফিস তিনবার ভাঙচুর করে ও আগুন দিয়ে ভস্মীভূত করার চেষ্টা। কংগ্রেস দলের কয়েকটি অফিস, শ্রমিক ভবন ভাঙচুর করে। ৮টি জেলায় হাজার হাজার বাম কর্মীদের দৈহিকভাবে নির্যাতন করে। জীবিকা ও রোজগারের পথ বন্ধ করে দেয়। এতে করে জনগণ ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ছে। যাতে তারা অবাধে ভোট লুট করতে পারে। পঞ্চায়েত, নগর সংস্থা, লোকসভার নির্বাচনে ও সর্বোপরি বিধানসভার উপনির্বাচনে কোনটাতেই জনগণ ভোট দিতে পারেননি। ভোট লুট করা হয়েছে। তাই আইনের শাসন পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করতে, ভোটাধিকার রক্ষায় সংকল্প গ্রহণ করতে হবে।

পঞ্চমত, নারীদের উপর যৌন হিংসা, গণধর্ষণের পরে খুন, নাবালিকা অপহরণ, গার্হস্থ্য হিংসা ইত্যাদি অপরাধের ঘটনা বেড়েই চলেছে। বিজেপির নেতা, কর্মী ও খোদ মন্ত্রীর ঘরের ছেলেরা যুক্ত থাকার কারণে পুলিশ মামলা নিতে চায় না। কুমারঘাট, কমলপুর গণধর্ষণকান্ড তার প্রমাণ। কোন ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হয়না। মহিলা কমিশনের কোনও ভূমিকা থাকে না। প্রকৃত অপরাধীরা শাস্তি পায় না। জাতীয় ক্রাইম ব্যুরোর রেকর্ডেত্রিপুরা ভারতে ছোটো রাজ্য সত্ত্বেও প্রথম স্থান অধিকার করেছে। তাই সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত করতে মনুবাদীদের পরাস্ত করতে হবে এবং নারী স্বাধীনতা ও নারীর সমানাধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।

ষষ্ঠতঃ দেশের সংবিধান প্রদত্ত গণতন্ত্রের অন্যতম স্তম্ভ যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা আজ আক্রান্ত। রাজ্যের অধিকার ও সমস্ত স্বশাসিত সংস্থাগুলোর অধিকার আজ সংকুচিত হয়ে পড়েছে। এমনকি সমবায় সমিতির ক্ষমতা কেন্দ্রের হাতে কুক্ষিগত করা হয়েছে। তাই সংবিধান অনুযায়ী রাজ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গণতান্ত্রিক স্তম্ভ স্বশাসিত সংস্থা টিটিএডিসি আজ আর্থিকভাবে, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিকভাবে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। ভিলেজ কমিটির নির্বাচন করতে দেওয়া হয়নি। কাজ নেই, চাকরি নেই। এই সরকার বনাধিকার আইনে তিপ্রাসাদের কোনও বনভূমির পাট্টা দেয়নি। বরং সরকার আইনসভায় কৃষিজমি লিজ দেওয়ার জন্য আইন প্রণয়ন করেছে। যার ফলে সস্তায় কৃষিজমি কৃষকদের কাছ থেকে কোম্পানির কাছে হস্তান্তর হয়ে যাবে। জল-জমি- জঙ্গল হাতছাড়া হবে। জোট সঙ্গি আইপিএফটি’র তিপ্রাল্যান্ড’এর দাবি নিয়ে ও এডিসি’র উন্নতির জন্য ভিশন ডকুমেন্টে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে বিজেপি সরকার। তাই ডাবল ইঞ্জিন সরকারের এই বিশ্বাসঘাতকতা ও বিপর্যয়ের হাত থেকে বাঁচতে জনজাতি সমাজ সবার আগে পাহাড়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে এবং আত্মনিয়ন্ত্রণের সংবিধান সম্মত অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইকে সামনে তুলে ধরেছে। সিপিআই(এমএল) তিপ্রাসাদের আর্থ- সামাজিক-রাজনৈতিক, কৃষ্টি ও সাংস্কৃতির সার্বিক উন্নতিকল্পে সংবিধান সংশোধন করে এডিসিকে পূর্ণাঙ্গ ও সর্বোচ্চ ক্ষমতাশালী করে তোলার দাবি জানায়। সংবিধানের মধ্যে এমন বিধান রয়েছে যার মাধ্যমে স্বশাসিত সংস্থাকে অনেক বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন করা যায়। আসামে কার্বিআংলং’এর জন্য ২৪৪এ ধারা মতো স্বশাসিত রাজ্যের বিধান রয়েছে। কিন্তু এই অটোনোমাস স্টেট’এর অধিকার এখনো কার্বি ও ডিমা হাসাও জনজাতিরা পায়নি। ত্রিপুরা স্বশাসিত জেলা পরিষদকে অধিক ক্ষমতাশালী করতে হলে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। তারজন্য দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। কারণ ত্রিপুরা উপজাতি স্বশাসিত জেলা পরিষদের হাতে একটি প্রাইমারী স্কুল খোলার অধিকার নেই। এক কানি জমি বন্দোবস্ত দেওয়ার ও হোমগার্ডনিয়োগ ও ভিলেজ কমিটিতে লাঠিধারি পুলিশ নিয়োগ করা সহ আরো অনেক ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। ৩০টার মতো দপ্তর হস্তান্তর করা হয়নি। এটা সঠিক যে, গত ৪০ বছর ধরে সময়ের সাথে এডিসির হাতে আরো প্রয়োজনীয় ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়নি। দীর্ঘসত্তর বছর ধরে বঞ্চনার প্রেক্ষাপটে সময়ের সাথে এডিসিকে অধিক ক্ষমতা সম্পন্ন করার প্রশ্নে সংবিধানের চৌহদ্দির মধ্যে থেকে গ্রেটার তিপ্রাল্যান্ড’এর দাবিকে বিচার করতে হবে। যেখানে এটা অত্যন্ত ভালো দিক যে, তিপ্রাসা ও অন্যান্য সব জাতিভুক্ত জনগণের সমানাধিকারের জন্য কথা বলছে ‘মথা’। তাই জাতি-উপজাতি ও সব অংশের জনগণের মধ্যে ঐক্যমতের ভিত্তিতে সময়ের সাথে সংবিধান সংশোধন করে এডিসিকে সর্বোচ্চ স্বশাসিত সংস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।

২০২৩’র শুরুতে সারা দেশে ফ্যাসি বিরোধী প্রতিরোধকে ঐক্যবদ্ধভাবে শক্তিশালী করার ডাক এসেছে। ত্রিপুরা ও উত্তর-পূর্বে বিজেপিকে ক্ষমতাচ্যুত করতে হবে। ২০২৪এ আগ্রাসী মোদীকে পরাস্ত করতে হবে। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে ত্রিপুরায় বামপন্থী, ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক দলগুলোর মধ্যে এক ঐক্যমত্য গড়ে উঠেছে। গত পাঁচবছরে আরএসএস-বিজেপির উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদী, বিভাজনের রাজনৈতিক বিচারধারার প্রয়োগ এবং উগ্র জাতীয়তাবাদী আঞ্চলিক দল আইপিএফটি’র সাথে হিন্দুত্ববাদীদের জোট শাসনে জনগণের নাভিশ্বাস উঠেছে। রাজ্য রাজনীতির সমীকরণ পাল্টে গেছে। জনজাতি তিপ্রাসাদের সাথে এই বিজেপি জোট সরকার বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। এর বিরুদ্ধে লড়াই করে তিপ্রা মথার জন্ম হয়েছে। ২০২১’র এপ্রিলে টিটিএডিসিতে ২৮টির মধ্যে ১৮টি আসনে জয়লাভ করে তিপ্রা মথার উত্থান ঘটে। বিজেপির সাথে সমঝোতা না করার কারণে এডিসিকে বিজেপি সরকার সবদিক থেকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। ভিলেজ কমিটির নির্বাচন করতে দেয়নি। বিজেপির আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তিপ্রা মথার নেতৃত্বে পাহাড়ে প্রতিরোধ গড়ে উঠেছে। ফলে বিরোধীদের জন্য রাজ্য রাজনীতিতে জায়গা বেড়েছে। তারপর রাজ্যের ইতিহাসে এই প্রথম শাসক দল ত্যাগ করে ২ জন মন্ত্রী ও ৬ জন এমএলএ সহ মোট ৮ জন পদত্যাগ করে বিরোধী দলে যোগ দিয়েছেন। ৪ জন তিপ্রা মথায় ও ৪ জন কংগ্রেস দলে যোগ দিয়েছেন। জাতীয় কংগ্রেস দল উঠে দাঁড়িয়ে বিজেপি বিরোধী লড়াই ও প্রতিরোধকে আরো শক্তিশালী করেছে। প্রতিষ্ঠান বিরোধী ক্ষোভ বিক্ষোভ তীব্র আকার ধারণ করেছে। মুখ্যমন্ত্রীর মুখ পরিবর্তন করে প্রতিষ্ঠান বিরোধী ক্ষোভ বিক্ষোভকে হ্রাস করতে পারেনি। বিজেপি ক্রমশ জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। এখন জোট সঙ্গি আইপিএফটি’র নীচুতলায় কর্মীরা তিপ্রা মথায় মিশে যাচ্ছে। গত জুন মাসে ৪টি বিধানসভা আসনে উপনির্বাচনে আমরা বাম, কংগ্রেস ও মথাকে সমর্থন করি। ফলাফলে আমাদের অবস্থান সঠিক বলে প্রমাণিত হয়। জনগণ বিরোধীদের মধ্যে জোট গড়ে তোলার জন্য রায় দেয়। তখন থেকে উদ্যোগ নিলে জোট গঠনের প্রক্রিয়া আরো এগিয়ে যেতে পারতো। আমরা আন্তরিক, জনগণের কাছে দায়বদ্ধ, নীচুতলা পর্যন্ত সম্প্রসারিত ও সংহত জোট চাই। না হলে ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না। উপনির্বাচনের পরে বিজেপির আগ্রাসী রাজনীতি ও সন্ত্রাস প্রতিহত করে জনগণ আরো বেশি করে বাইরে বেড়িয়ে আসতে শুরু করে। এখন আরএসএস-বিজেপিকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য প্রস্তুত রাজ্যের সব অংশের জনগণ। আর জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষা ও ইচ্ছার প্রতিফলন হচ্ছে এই বিরোধী জোট। কোন প্রকার দলীয় সংকীর্ণতা পরিহার করে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। কিন্তু দলীয় সংকীর্ণতার কারণে দুর্ভাগ্যজনক ভাবে ৩০ জানুয়ারি মনোয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন পর্যন্ত বড়ো দুই দল একে অপরের বিরুদ্ধে প্রার্থী দিয়েছে। সিপিআই(এমএল)’কে একটি আসনও দেয়নি। নুন্যতম কর্মসূচি প্রণয়নের জন্য কোনও উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। ফ্যাসিবাদীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা, তাদের ক্ষমতাচ্যুত করা ও তাদের দুর্বল করার রাজনৈতিক তাৎপর্য হারিয়ে ফেলেছে জোট। শুধুমাত্র আসন সমঝোতা করার কথা হচ্ছে। আসন ভাগাভাগি নিয়ে সিপিআই(এম) ও কংগ্রেস দল নিজেদের মধ্যে দলীয় সংকীর্ণতার বেড়াজালে আটকে পড়েছে। তবুও চেষ্টা চলছে মিটমাট করার। আমরাও আশাবাদী যে জোট হবে। জনগণের বিশ্বাসের মধ্যে যাতে চিড় না ধরে। আস্থা বিশ্বাস যাতে নষ্ট না হয় তার চেষ্টা করতে হবে।

সংখ্যাগুরু সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মীয় মৌলবাদ, উগ্র জাতীয়তাবাদ ও ফ্যাসিবাদী রাজনীতি মানবতার শত্রু এবং সভ্যতার শত্রু। এদের হাত থেকে বাঁচতে মানুষে মানুষে ঐক্য জরুরি। আর ধর্ম, বর্ণ ও দলমত নির্বিশেষে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলে সংবিধান, গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে এই ফ্যাসিবাদী শক্তিকে ক্ষমতা থেকে সরাতে হবে। তারজন্য বিরোধীদের মধ্যে জোট আজ সময়ের দাবি। ২০২৩ হয়ে উঠেছে এই গুরুত্বপূর্ণ লড়াইয়ের মঞ্চ। তাই ফ্যাসিবাদী বিপর্যয়ের হাত থেকে বাঁচতে জোটের পক্ষে সামিল হোন। ফ্যাসিবাদী শক্তিকে পরাস্ত করতে সর্বস্তরের লড়াইকে শক্তিশালী করুন। ৫৯টি আসনে বিজেপিকে হারাতে সক্ষম এমন শক্তিশালী বিরোধী ও জোটের প্রার্থীদের ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করুন। ৩১, রাধাকিশোরপুর আসনে সিপিআই(এমএল) লিবারেশন প্রার্থী পার্থকর্মকারকে পতাকা তিন তারা চিহ্নে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করুন।

খণ্ড-30
সংখ্যা-3