শোক সংবাদ
মলয় দুবের স্মৃতি অম্লান হয়ে থাকবে
malay dubey

সম্প্রতি প্রয়াত হলেন পার্টির বাঁকুড়া জেলা কমিটির বর্ষিয়ান সদস্য, শহরের অত্যন্ত সুপরিচিত ব্যাক্তিত্ব কমরেড মলয় দুবে। দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে মারণ রোগ ব্লাড ক্যানসারের সাথে জীবন যুদ্ধ চালিয়ে অবশেষে গত ১৭ জানুয়ারি ২০২৩ কলকাতার এক সরকারী হাসপাতালে তাঁর জীবনাবসান ঘটলো। এতো বড়ো এক কঠিন রোগ থাকা সত্ত্বেও তিনি ছিলেন খুবই প্রাণবন্ত। জীবনের অন্তিম সময়ের কয়েকটা মাস বাদ দিলে সর্বদাই খুবই উদ্যমী মানুষ। পার্টিকে তিনি নিজের পরিবারের মতো আপন করে নিয়েছিলেন। বাঁকুড়া শহরে তাঁর বাড়ি ও সমগ্র পরিবার ছিল পার্টির সর্বস্তরের নেতৃত্ব ও কর্মীদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এবং নিশ্চিত আশ্রয়স্থল। ২০০১ সালে বাঁকুড়া জেলায় পার্টি সংগঠনে যখন এক সংকট দেখা দেয় তখন তাঁর ভূমিকা ছিল অনন্য। দিনরাত এক করে গ্রামের হাটে মাঠে, কর্মীদের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে সমগ্র পার্টি সংগঠনকে বিপ্লবী দিশায় ঐক্যবদ্ধ রাখার কাজে তিনি নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। সমগ্র কৃষক সংগ্রাম ও পার্টি সংগঠনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর এই অবদান উল্লেখযোগ্য। ২০০৬ সালে তিনি পার্টির জেলা কমিটির সদস্য হন, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত জেলা পার্টির নানাবিধ দায়দায়িত্ব পালন করে গেছেন। অনেক কিছুই হয়তো তিনি করে উঠতে পারতেন না, কিন্তু যেকোনও সমস্যাকে মোকাবিলা করার প্রশ্নে বলিষ্ঠ মানসিকতা ও সকলকে মনোবল যুগিয়ে যাওয়া ছিল তাঁর সহজাত। পার্টির নেতৃত্ব ও কর্মীদের প্রতি ঘনিষ্ঠতা বা আন্তরিকতায় তিনি হয়ে উঠেছিলেন সকলের প্রিয় মলয়দা।

৭০’র শেষপর্বে ও ৮০’র দশকে বাঁকুড়ার বিস্তীর্ণ গ্রামাঞ্চলে বিপ্লবী কৃষক আন্দোলন সংগঠিত হয়। সেই সময়কালে শহরের যুগীপাড়া দোলতলা এলাকায় নকশালবাড়ি আন্দোলনের একটা গণভিত্তি গড়ে ওঠে। লাগোয়া এলাকায় থেকে তিনি তার সাথে যোগাযোগ রেখে চলতেন। পরবর্তীতে পার্টির সাথে তাঁর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পাশাপাশি তাঁর নিজের পাঠক পাড়ায় অগ্রণী সংঘ ক্লাব গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভুমিকা নিয়েছিলেন। ১৯৮৭ সালে গ্রামীণ ব্যংকের চাকরি পান। ১৯৯৬ সালে পার্টির সদস্যপদ গ্রহণ করেন। গ্রামীণ ব্যাংক কর্মচারী আন্দোলনে একটি সতন্ত্র সংগ্রামী ধারা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তিনি নেতৃত্বের সারিতে ছিলেন। পার্টির বিগত মানসা কংগ্রেসে প্রতিনিধি হয়েছিলেন। পার্টি ও বিপ্লবী আদর্শের প্রতি তাঁর গড়ে উঠেছিলো গভীর ভালোবাসা। জীবনের শেষ পর্যায়ে প্রবল শারীরিক অসুস্থ অবস্থাতেও হাসপাতালের বেডে শুয়ে তাঁর মুখে শোনা গিয়েছিলো স্লোগান — নকশালবাড়ি, চারু মজুমদার লাল সেলাম। পরিবার পরিজনদের বলে গিয়েছিলেন শেষযাত্রায় তাঁকে যেন লাল পতাকা দেওয়া হয়৷ গত ১৮ জানুয়ারি ২০২৩ বাঁকুড়ায় তাঁর বাসভবনে শায়িত মরদেহে লাল পতাকা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান জেলার পার্টি নেতৃত্ব ও কর্মীবৃন্দ, পরিবার পরিজন, বাঁকুড়ার বিশিষ্ট বামপন্থী নেতৃবৃন্দ, ব্যাংক কর্মচারী আন্দোলনের নেতৃত্ব সহ এলাকার মানুষেরা।

কমরেড মলয় দুবে লাল সেলাম। তাঁর স্মৃতি অম্লান হয়ে থাকবে।

খণ্ড-30
সংখ্যা-3