মানহানি
defamation_0

প্রথমেই মনে পড়ে গেল। সুকুমার বাবুর কথা, অর্থাৎ হযবরল-এর লেখক সুকুমার রায় এর কথা। হযবরল এর একটা অংশ উল্লেখ না করে শুরু করতে পারছি না।

“....প্যাঁচা একবার ঘোলা ঘোলা চোখ করে চারদিকে তাকিয়েই তক্ষনি আবার চোখ বুজে বলল, ‘নালিশ বাতলাও’।

বলতেই কুমিরটা অনেক কষ্টে কাঁদো কাঁদো মুখ করে চোখের মধ্যে নখ দিয়ে খিমচিয়ে পাঁচ ছয় ফোঁটা জল বার করে ফেলল। তারপর সর্দিবসা মোটা গলায় বলতে লাগল, ‘ধর্মাবতার হুজুর! এটা মানহানির মোকদ্দমা। সুতরাং প্রথমেই বুঝতে হবে মান কাকে বলে। মান মানে কচু। কচু অতি উপাদেয় জিনিস। কচু অনেক প্রকার, যথা – মানকচু, ওলকচু, কান্দাকচু, পানিকচু, শঙ্খকচু ইত্যাদি। কচুগাছের মূলকে কচু বলে, সুতরাং বিষয়টা একেবারে মূল পর্যন্ত যাওয়া দরকার।............”

একদম ঠিক, আমাদেরও একেবারে মূল পর্যন্ত যাওয়া দরকার। কোথা থেকে শুরু হোল? কে মানহানি করল? কার মানহানি হল? যাদের মানহানি হল তারা মানহানীর মামলা না করে কেই বা মামলা করল? পরিণতি কী হল? এই পরিণতি দেওয়ার উদ্দেশ্যই বা কী?

প্রথমত, ঘটনার সূত্রপাত কর্নাটকের লোকসভা নির্বাচনের আগে ২০১৯ সালের ১৩ এপ্রিলে কোলার-এর এক জনসভায় রাহুল গান্ধীর বক্তৃতার একটা অংশ নিয়ে। সেটা ছিল – “আচ্ছা, একটা ছোট প্রশ্ন। এই সবার নাম। এইসব চোরেদের নাম। মোদী মোদী মোদী কি করে হল? নীরব মোদী, ললিত মোদী, নরেন্দ্র মোদী। আরও একটু খোঁজ করলে দেখা যাবে আরো অনেক মোদী বেরিয়ে পড়বে।”

দ্বিতীয়ত, রাহুল গান্ধী যাদের নাম উচ্চারণ করেছিল তারা কেউ কিন্তু মানহানীর মামলা করলেন না। দেখা গেল, এই মন্তব্যের বিরুদ্ধে গুজরাটের প্রাক্তন মন্ত্রী, বিজেপি বিধায়ক পূর্ণেশ মোদী ১৯ এপ্রিল ২০১৯ তারিখে গুজরাটের নিম্ন আদালত সুরাট আদালতের চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এ এন দাভের এজলাসে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৯, ৫০০ ধারায় একটা ফৌজদারি মানহানীর মামলা রুজু করলেন।

রাহুল গান্ধী ২৪ জুন ২০২১ তারিখে আদালতে ব্যক্তিগত ভাবে হাজির হয়ে নিজের বক্তব্যকে নথিভুক্ত করেছিলেন। এরপর অভিযোগকারী ২০২২ সালের মার্চ মাসে আদালতে আবেদন জানায় যাতে রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে পুনরায় সামনস জারি করা হোক। বিচারক সেই আবেদন খারিজ করে দেন এবং দ্রুত আর্গুমেন্ট শুরু করার নির্দেশ দেন।

এক অদ্ভুত বিষয় আমরা লক্ষ্য করলাম। অভিযোগকারী এই মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি যাতে না হয় তারজন্য তড়িঘড়ি গুজরাট হাইকোর্টে গিয়ে নিজের করা মামলার উপর স্থগিতাদেশের আবেদন করলেন এবং ২০২২ সালের ৭ মার্চ স্থগিতাদেশ পেয়েও গেলেন! সাধারণভাবে যেটা দেখা যায় অভিযুক্ত ব্যক্তি উচ্চ আদালতে যায় স্থগিতাদেশ পেতে। এখানে দেখা গেল অভিযোগকারী নিজের করা মামলার বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ আনতে ছুটলেন!

আমরা আশ্চর্যের সাথে আরও লক্ষ্য করলাম ইতিমধ্যে রাহুল গান্ধী যখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে আদানীর কী সম্পর্ক এবং ২০ হাজার কোটি টাকা সম্পর্কে জানানোর জন্য সোচ্চার হলেন তখন দেখা গেল পূর্ণেশ মোদী নিজেই গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ তারিখে আবার গুজরাট হাইকোর্টে স্থগিতাদেশ বাতিল করার আবেদন করলেন। আবেদনে জানালেন পর্যাপ্ত নথি ট্রায়াল কোর্টে এসে যাওয়ার পরেও বিচারে বিলম্ব করা হচ্ছে। হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ বাতিল করল এবং বিচারের দ্রুত নিষ্পত্তির আদেশ দিল।

আমরা এটাও দেখলাম ইতিমধ্যে সুরাট আদালতের চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটও বদল হয়ে গেল। নতুন চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এইচ এইচ ভারমার বেঞ্চে ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ তারিখেই মামলা শুরু হয়ে গেল। ৮ মার্চ ২০২৩ তারিখে শুনানির সময় রাহুল গান্ধীর আইনজীবী জানালেনও রাহুল গান্ধী নিরব মোদী, ললিত মোদী, নরেন্দ্র মোদীর নাম বলেছেন পূর্ণেশ মোদীর নাম বলেননি তাই পূর্ণেশ মোদীর কোনো অধিকারই নেই রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করার বা মামলা করার। অভিযোগকারীর পক্ষের যুক্তি ছিল রাহুল গান্ধী সমস্ত মোদী পদবির সম্প্রদায়ের মানহানি করেছেন। তাই তার নাম না করলেও তার অধিকার আছে মোদী সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে মানহানির মামলা করার।

এক সপ্তাহের মধ্যে শুনানি শেষ হল। বিচারপতি জানালেন বিচারের রায় জানানো হবে। অবশেষে গত ২৩ মার্চ ২০২৩ তারিখে সুরাট আদালতের চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এইচ এইচ ভারমা রায় ঘোষণা করে জানালেন – ১৮৬০ সালের ভারতীয় দন্ডবিধির ৪৯৯ এবং ৫০০ ধারার ফৌজদারি মানহানি মামলায় সাংসদ রাহুল গান্ধী দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। সেকারণে রাহুল গান্ধীর ২ বছরের জেল এবং ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হল। এর সাথে সাথে এটাও জানালেন তাঁর আদেশ ৩০ দিনের জন্য স্থগিত রইল ইতিমধ্যে রাহুল গান্ধী উচ্চ আদালতে আপিল করতে পারবেন।

আমরা দেখলাম ২৪ মার্চ ২০২৩ তারিখে ভারতীয় সংবিধানের ১০২(১)-ই অনুচ্ছেদ এবং জনপ্রতিনিধিত্ব আইন (১৯৫১)-র ৮ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাহুলের সাংসদ পদ খারিজ করলেন লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা। যে আইনে উল্লেখ আছে যদি কোনো সাংসদ বা বিধায়ক দোষী সাব্যস্ত হয় এবং শাস্তিস্বরূপ দু-বছর বা তার অধিক জেল হয় তাহলে তার সাংসদ বা বিধায়ক পদ খারিজ করা হবে।

এটা নতুন কিছু না এর আগেও এরকম সিদ্ধান্ত লোকসভা বা বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভায় নেওয়া হয়েছে। যেমন –

১) আজম খান - সমাজবাদী পার্টির নেতা আজম খানের বিধায়ক পদ উত্তর প্রদেশের বিধানসভা খারিজ করা হয়। ২০১৯ সালের এক বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের জেরে কোর্ট তাঁর বিরুদ্ধে ৩ বছরের সাজা শোনায়। এরপর ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে তাঁর সেই পদ খারিজ হয়।

২) অনিল কুমার সাহানি - ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে বিহারের আরজেডি বিধায়ক অনিল কুমার সাহানির বিধায়ক পদ খারিজ করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে রয়েছে প্রতারণার মামলা।

৩) জয়ললিতা : এআইএডিএমকের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত জয়ললিতার ২০১৪ সালে তামিলনাড়ু বিধানসভার বিধায়ক পদ খারিজ করা হয়। বেনামি সম্পত্তি মামলায় তাঁর ৪ বছরের জেলের সাজা কোর্ট ঘোষণা করে, তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করার পর। এরপরই তৎকালীন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতাকে প্রশাসনের নেত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিতে হয় ও বিধায়ক পদ থেকে সরে যেতে হয়।

৪) পি পি মহম্মদ ফয়জল - লাক্ষাদ্বীপের সাংসদ পিপি মহম্মদ ফয়জল এক খুনের চেষ্টার মামলায় দোষী সাব্যস্ত হন ও তাঁকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয় কোর্ট। এনসিপি নেতা ফয়জলেরও সাংসদ পদ খারিজ হয়। ২৫ জানুয়ারি কেরল হাইকোর্ট এই এই মামলায় স্থগিতাদেশ দেয়। তারপরও লোকসভা তার সাংসদপদ ফেরায়নি। এর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিলে ২৯ মার্চ আদেশ দেয় অবিলম্বে তার সাংসদ পদ ফিরিয়ে দিতে হবে। সেই অনুযায়ী তিনি পদ ফিরে পান।

৫) বিক্রম সিং সাহানি - বিজেপির বিধায়ক বিক্রম সিং সাহানির যোগীরাজ্য উত্তর প্রদেশের বিধায়ক পদ থেকে খারিজ হয়। ২০১৩ সালের মুজাফ্ফরনগর দাঙ্গার মামলায় অভিযুক্ত ও দোষী সাব্যস্ত হন। তাঁকে ২ বছরের কারাদণ্ড দেয় কোর্ট। পরে তাঁরা বিধায়ক পদ খারিজ হয়।

৬) প্রদীপ চৌধুরী - ২০২১ সালে হরিয়ানা বিধানসভা থেকে বিধায়ক পদ খারিজ হয় কংগ্রেসের বিধায়ক প্রদীপ চৌধুরীর। এক মারধরের ঘটনায় তিনি দোষী সাব্যস্ত হন তিন বছরের কারাদণ্ডের সাজা পান।

৭) কুলদীপ সেনগার - হাইভোল্টেজ এক মামলায় অভিযুক্ত ছিলেন কুলদীপ সেনগার। তাঁর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ ছিল ও তিনি দোষী প্রমাণিত হন। এরপরই বিজেপির এই বিধায়কের যোগীরাজ্য উত্তর প্রদেশে ২০২০ সালে বিধানসভার বিধায়ক পদ খারিজ করা হয়।

৮) আবদুল্লাহ আজম খান - ১৫ বছর পুরনো এক মামলায় উত্তরপ্রদেশের সমাজবাদী পার্টির নেতা আবদুল্লা আজম খান ২ বছরের কারাদণ্ডের সাজা পান। তারপর তাঁর বিধায়ক পদ খারিজ করা হয়। এবারও রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে মানহানি মামলা চালানোর পক্রিয়া, পরিণতি এবং লোকসভার স্পিকারের তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত বেশ কিছু প্রশ্ন সামনে নিয়ে এলো।

সুপ্রিম কোর্টের বিভিন্ন মামলার রায় এবং নির্দেশিকা এক্ষেত্রে মানা হয়নি। যেমন –
১) অভিযোগকারীর (পূর্ণেশ মোদি) নাম রাহুল গান্ধী বলেননি। যাদের নাম তিনি বলেছেন তারা কেউ মানহানির মামলা করেননি। তাহলে পূর্ণেশ মোদির কোনো অধিকার আছে কি রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করার?

২) রাহুল গান্ধী তিনজনের নাম এবং তাদের পদবি সম্পর্কে বলেছেন, মোদি পদবির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে কিছু বলেননি। ফলে অভিযোগ খুব নির্দিষ্ট নয়।

৩) রাহুল গান্ধী থাকেন দিল্লির ঠিকানায়। বক্তব্য রেখেছেন কর্নাটকে মানহানির মামলা হল গুজরাটের সুরাট আদালতে। আদালতের এক্তিয়ার নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

৪) এই ধরনের মামলা শুরু করার আগে যে পর্যাপ্ত ইনকোয়ারি বা সাক্ষী সাবুদের প্রক্রিয়ার বিষয় আছে তা ম্যাজিস্ট্রেট মেনে ছিলেন কি?

৫) আাদালত দোষী সাব্যস্ত করে শাস্তি ঘোষণার সাথে সাথেই তা ৩০ দিনের জন্য যখন স্থগিতাদেশ দিলেন তাহলে লোকসভার স্পিকারের কি তাকে মান্যতা দেওয়া উচিত ছিল না?

৬) সুরাত আদালত যে রায় ঘোষণা করল তা লোকসভার স্পিকারকে অফিসিয়ালি জানিয়েছিল কিনা?

৭) আরটিক্যাল ১০২(১) অনুযায়ী ভারতের রাষ্ট্রপতির অনুমতি নেওয়া হয়েছিল কিনা?

৮) রাষ্ট্রপতি সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে নির্বাচন কমিশনের মত নিয়েছিলেন কিনা?

৯) সুপ্রিম কোর্টের গাইড লাইনে এটাও স্পষ্ট বলা আছে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার তিন মাসের মধ্যে যদি অভিযুক্ত উচ্চ আদালতে না যান তাহলে জনপ্রতিনিধিত্ব আইন কার্যকরী করা যেতে পারে। এমনকি অভিযুক্ত উচ্চ আদালতে যাওয়ার পর তার বিচার যদি তিন মাস সময়সীমা অতিক্রমও করে তাহলেও তার সাংসদ বা বিধায়ক পদ খারিজ করা যাবে না।

এরকম বহু প্রশ্নের উত্তর আজ ভারতবর্ষের জনগণ পেতে চাইছে। তাই আমরা দেখলাম অপরাধ ঘৃণ্য বা গুরুতর না হলে জনপ্রতিনিধিদের পদ খারিজ না করার আর্জি জানিয়ে দেশের শীর্ষ আদালতে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হল। মামলাটি করলেন কেরলের এক সমাজকর্মী আভা মুরলীধরন।

রাহুল নিজে তাঁর বিরুদ্ধে সুরত আদালতের রায় কিংবা সাংসদ পদ খারিজের বিরুদ্ধে এখনও কোনও পদক্ষেপ করেননি। উচ্চতর আদালতে ওই রায়ের বিরুদ্ধে আবেদনও জানাননি। তার আগেই আইনের সংশোধন চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছে।

মামলাকারীর বক্তব্য, জনপ্রতিনিধিত্ব আইন (১৯৫১)-এর ৮ নম্বর অনুচ্ছেদে সংশোধন প্রয়োজন। জনগণ দ্বারা নির্বাচিত কোনও প্রতিনিধির সাংসদ বা বিধায়ক পদ এভাবে খারিজ করে দেওয়া স্বৈরতান্ত্রিক মানসিকতার পরিচায়ক। আদালতে এই আইনকে সংবিধান-বিরোধী হিসাবে চিহ্নিত করার আবেদন জানিয়েছেন তিনি। মামলাকারী এ-ও জানিয়েছেন, যে কোনও অপরাধেই জনপ্রতিনিধির পদ খারিজ করে দেওয়া আসলে ব্যক্তি-স্বাধীনতার পরিপন্থী। সাংসদ পদ খারিজের ক্ষেত্রে কী কী বিষয় পর্যালোচনা করা হয়, তা জানতে চেয়েও জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয়েছে।

জনস্বার্থ মামলায় বলা হয়েছে, কোনও সাংসদের পদ খারিজ করার আগে অভিযুক্তের ভূমিকা, মামলার প্রকৃতি, নৈতিকতা সহ একাধিক বিষয় পর্যালোচনা করা উচিত। শীর্ষ আদালতে দাখিল করা আবেদনে বলা হয়েছে, “৮(৩) ধারার ব্যবহার করে সাংসদ পদ খারিজের নামে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নিজেদের মিথ্যা রাজনৈতিক স্বার্থ পূরণ করছে। এরফলে জনপ্রতিনিধিত্বের যে গণতান্ত্রিক কাঠামো রয়েছে, তাতে সরাসরি আঘাত করা হচ্ছে। এরফলে দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থায় অস্থিরতা তৈরি হতে পারে।”

জনস্বার্থ মামলার আর্জিতে আরও বলা হয়েছে, “রাজনৈতিক দলগুলি নিজেদের ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য যথেচ্ছভাবে এই আইন ব্যবহার করছে। সাংসদদের অপরাধ যাই-ই হোক না কেন, অপরাধের প্রকৃতি, তা কতটা গুরুতর, সেই সমস্ত বিষয় পর্যালোচনা না করেই সাংসদ পদ খারিজ করে দেওয়া হচ্ছে। এটি সাধারণ ন্যায়বিচারের বিরোধী, কারণ একাধিক ক্ষেত্রেই শাস্তির রায় পরবর্তী সময়ে পরিবর্তিত হয়েছে।

জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের অধীনে কী কী শর্তে সাংসদের পদ খারিজ করা হয়, সেই সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানার জন্য আবেদন করা হয়েছে। পরিশেষে এটা বলাই যায় লোকসভার ঠাণ্ডা ঘরে বিরোধী কন্ঠস্বরকে স্তব্ধ করতে পূর্ব পরিকল্পিত, উদ্দেশ্যমূলক এই মামলা। এমনকি বিচারালয়গুলিকে শাসকের নিয়ন্ত্রণে আনার এক নিকৃষ্ট উদাহরণ সৃষ্টি করা হল।

তাই আবার সুকুমার রায়ের হযবরল-এর একটা অংশ দিয়েই এই প্রবন্ধ শেষ করলাম – “.... শেয়াল জিজ্ঞাসা করল, ‘তুমি মোকদ্দমার কিছু জান?’ হিজিবিজ্‌বিজ্ বলল, ‘তা আর জানিনে? একজন নালিশ করে, তার একজন উকিল থাকে, আর একজনকে আসাম থেকে নিয়ে আসে, তাকে বলে আসামী, তারও একজন উকিল থাকে। এক একদিকে দশজন করে সাক্ষী থাকে। আর একজন জজ থাকে, সে বসে বসে ঘুমোয়।’ প্যাঁচা বলল, কক্ষনো আমি ঘুমোচ্ছি না, আমার চোখে ব্যারাম আছে তাই চোখ বুজে আছি’। হিজিবিজ্‌বিজ্ বলল, আরও অনেক জজ দেখেছি, তাদের সক্কলেরই চোখে ব্যারাম।’ বলেই সে ফ্যাক্ ফ্যাক্ করে ভয়ানক হাসতে লাগল।”

– দিবাকর ভট্টাচার্য

খণ্ড-30
সংখ্যা-8