খবরা-খবর
পার্টি কংগ্রেসে গণসংস্কৃতি প্রাণবন্ত ভূমিকায় উজ্জ্বল

mass-culture
১৫ ফেব্রুয়ারী পাটনার গান্ধী ময়দান হয়ে উঠলো মানুষ আর পতাকার রক্তিম বিচ্ছুরনে লালে লালে লাল। শুধু গান্ধী ময়দান কেন সমগ্র পাটনা শহরটাই বদলে গেল বিনোদ মিশ্র নগরে। কমরেড বিনোদ মিশ্র নকশালবাড়ি আন্দোলনকে ধংসস্তুপ থেকে ফিনিক্স পাখির মতোই তুলে এনেছিলেন ধ্বংস আর হতাশা ভেদ করে। আজ তার নতুনভাবে গড়ে তোলা সিপিআই(এমএল) লিবারেশন পল্লবিত রক্তিম বসন্তের নানা বর্ণের নানা শ্রেণীর নানান স্তরের শহীদের স্বপ্নের দেশ গড়ার ঢেউয়ে ঢেউয়ে উত্তাল তরঙ্গরূপে।

সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের একাদশ কংগ্রেসের প্রাক্কালে এই সমাবেশে সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য সহ দেশ বিদেশের বক্তব্য শুনতে জনসমূদ্র অধীর অপেক্ষায়। তার মাঝেই ফ্যাসিবাদ বিরোধিতা ও গণতন্ত্রের জন্য লালে লাল সুসজ্জিত মঞ্চে শুরু হল বিহার পশ্চিমবঙ্গ অসম কার্বি কর্ণাটক অন্ধ্র উত্তরপ্রদেশ হিমাচল মহারাষ্ট্র পাঞ্জাবের শিল্পীদের গণসংগীত। অন্ধ্র ও ঝাড়খন্ডের শিল্পীদের নৃত্য।

১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে পাঁচ দিনের জন্য শুরু হওয়া প্রতিনিধি অধিবেশনেও আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে চলতে থাকল গণসাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এখানেও পারস্পরিক আদান প্রদানের ভিত্তিতে অনুষ্ঠানগুলি প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। বিহারের হিরাবল, পশ্চিমবঙ্গ গণসংস্কৃতি পরিষদ ও অসমের সাংস্কৃতিক কর্মীদের গান সম্মেলনের পরিবেশকে আরো প্রাণবন্ত করে তোলে। বিহারের নির্মোহীজী ও লোকশিল্পী রাজুর গান অনেকদিন মনে থাকবে। পশ্চিমবংলা থেকে পশ্চিমবঙ্গ গণসংস্কৃতি পরিষদের সম্পাদক সরিৎ চক্রবর্তীর নেতৃত্বে মানস প্রদীপ সরকার মাধব সুষমা মিতালি অনন্যা সায়ন অয়ন্তীকা মেঘনা সহ নবীন-প্রবীণদের সম্মিলিত গান পরিবেশনা শ্রোতাদের নজর কাড়তে সমর্থ হয়। এই সম্মিলিত গান পরিবেশনে বিশেষ ভূমিকা রাখেন বাবুনী মজুমদার ও নীতীশ রায়। এই টিমকে সহযোগিতা করার ক্ষেত্রে সাগর চ্যাটার্জীর ভূমিকা উল্লেখ না করলেই নয়। এছাড়াও পশ্চিমবাংলা থেকে জয়শ্রী দাসের হাজারো করতালির মধ্যে নৃত্য পরিবেশনা ও তাকে যথাযথ সঙ্গত করে রূপো আর সুমি, সায়ন ও মীরা চতুর্বেদীর গান, কুনাল বক্সী ও প্রদীপ ব্যানার্জীর আবৃত্তি শ্রোতাদের মুগ্ধ করে। বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয় বর্ষা, সায়নি, সম্প্রীতি, মিতালি, চন্দ্রাস্মিতা সহ পশ্চিমবঙ্গের একঝাঁক তরুণী প্রতিনিধিদের সপ্রতিভ ও প্রাণবন্ত গান পরিবেশনা। বিভিন্ন প্রদেশের শিল্পীদের মিউজিক্যাল সহযোগীতায় পশ্চিমবঙ্গ গণসংস্কৃতি পরিষদের শিল্পীদের ভুমিকাও ছিল প্রশংসনীয়। ঝাড়খন্ডের ঝুমুর নাচ আর অন্ধ্রের ঐতিহ্যবাহী বীরোচিত পার্টিজন সংস্কৃতির নমুনা হিসাবে নৃত্য সকলকে উজ্জীবিত করে। “বেখউফ আজাদী” গানের সাথে মহারাষ্ট্রের একজন মহিলা প্রতিনিধির নৃত্য পরিবেশনা ছিল উল্লেখযোগ্য। সন্তোষ ও বলিন্দ্রর পরিবেশনায় ফয়েজ আহমেদ ফয়েজের “হাম দেখেঙ্গে” গান ও পশ্চিমবঙ্গ গণসংস্কৃতি পরিষদের “বুলডোজার” বা “জ্বল রহি” গান সমগ্র প্রতিনিধিদের উদ্বেলিত করে তোলে।

সম্মেলনের হলের বাইরে ধীরেশ গোস্বামীর তত্ত্বাবধানে ছিল বাংলা বই-এর স্টল। সহযোগিতায় দিলীপ দত্ত, প্রকাশ, সায়ন্তন। সেখানে সারাক্ষণ বাংলা ভাষার পাঠকের আনাগোনা। বিক্রিও বেশ ভালোই হয়েছে।

২০ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক সংগীতে শিল্পীদের সাথে সমস্ত প্রতিনিধিদের মিলিত কণ্ঠস্বরে ১১তম পার্টি কংগ্রেসের সমাপ্তি ঘোষিত হয়। তারপরও অনেক রাত পর্যন্ত চলে গানে শ্লোগানে সম্মেলন স্থল পরিক্রমা। ফ্যাসিবাদকে পরাস্ত করার উচ্চকিত শপথ।

খণ্ড-30
সংখ্যা-4