আবেদন
মে দিবসের ডাক!
may-day-call_1

ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব, মজুরি সংকচন, বেসরকারীকরণ, নগদীকরণ, কোডের দাসত্ব ও দানবীয় আইনের বিরুদ্ধে লড়াইকে তীব্রতর কর!

২০২৩-কে জঙ্গি সংগ্রামের ঢেউ তোলার বছরে পরিণত কর!

২০২৪ সালের নির্বাচনে বিপর্যয়কর মোদী চালিত বিজেপি শাসনকে পরাজিত কর!

গণতন্ত্র বাঁচাও দেশ বাঁচাও!

ভারতে মে দিবসের শতবর্ষ পূর্ণ হল ! ১৮৮৬ সালে শিকাগোর শ্রমিকদের আত্মত্যাগের ৩৭ বছর পর ভারতে প্রথম মে দিবস পালন করা হয়। ২০২৩ সাল ভারতে মে দিবস পালনের শতবর্ষ পূর্ণ করল। চেন্নাইয়ের মেরিনা বিচে ১৯২৩ সালে মে দিবসে কমরেড সিঙ্গারাভেলার প্রথম মে দিবসের পতাকা উত্তোলন করেছিলেন। ১৮৮৬ সালের মে দিবস ৮-ঘণ্টা কাজের দাবিতে শ্রমিক শ্রেণীর আত্মত্যাগের দিন হিসাবেই চিহ্নিত হয়েছে। এই দিনটি সারা বিশ্বের শ্রমিক শ্রেণির দিন হয়ে উঠেছে। কারণ এটি ছিল শ্রমিকদের ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে যুদ্ধ ঘোষণার দিন, যা পরবর্তীকালে জয়ী হয়েছিল। বর্তমানে শ্রমিকদের কষ্টার্জিত মে দিবসের অধিকার উল্টো দিকে প্রবাহিত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী মোদি ১ এপ্রিল থেকে শ্রমিক বিরোধী, দাসত্বের কোডগুলি কার্যকর করার মাধ্যমে ২০২৩ সালের মে দিবসের জন্য “উপহার” দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু, ২০২৪ সালে লোকসভার সাধারণ নির্বাচনের কারণে, শ্রমজীবী মানুষ এবং ট্রেড ইউনিয়নগুলির প্রতিক্রিয়ার ভয়ে এখন তা স্থগিত রাখা হয়েছে।

মোদি সরকারের আমলে শ্রমিক শ্রেণির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা ও অসংখ্য আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। করোনার সুযোগ নিয়ে বিতর্ক ও আলোচনা ছাড়াই বিজেপি পার্লামেন্টে শ্রম-বিরোধী চারটি আইনই পাশ করেছে। কলমের এক খোঁচায় সারা দেশে তা কার্যকর করার জন্য উপযুক্ত সময়ের অপেক্ষায় থেকেছে। ইতিমধ্যে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি এর বিভিন্ন দিককে কার্যকর করা শুরু করেছে। যার মধ্যে রয়েছে ১২ ঘণ্টা কাজ, মহিলাদের রাতের শিফটে কাজ করা, ৩০০ জনের কম শ্রমিক আছে এমন শিল্পকে শ্রম আইনের আওতার বাইরে বার করে দেওয়া। এমনকি অ-বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিও এর ব্যতিক্রম নয়। তাদের বেশিরভাগই ইতিমধ্যে কয়েকটি অংশকে বাদ দিয়ে মোদী সরকারের কেন্দ্রীয় নিয়মগুলিকে লাগু করেছে। বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার জাতীয় স্তরের ফ্লোর লেভেল মজুরি প্রতি মাসে ৫০০০ টাকা বিধিবদ্ধ করেছে। যখন কোডগুলো চালু হবে, তখন ন্যূনতম মজুরি বাধ্যতামূলক থাকবে না ও মজুরি হ্রাস হবে। এমনকি ডিএমকে-র মতো বিরোধীদের নেতৃত্বাধীন রাজ্যগুলি কর্পোরেট সংস্থাগুলির দাবি মেনে নিয়ে ফ্যাক্টরি আইনের থেকে কিছু শিল্প বা শিল্পের গ্রুপকে ছাড় দেওয়ার জন্য বিল পেশ করেছে। কর্পোরেট সংস্থাগুলোকে সস্তা শ্রমিক সরবারহের জন্য এবং গ্রামীণ কর্মীদের শহরে চলে আসার জন্য এমজিএনআরইজিএ প্রকল্পের বাজেট বরাদ্দ ব্যাপকভাবে কমানো হয়েছে।

সুপরিচিত অর্থনীতিবিদ জাঁ দ্রেজ ২০১৪-১৫ থেকে ২০২১-২২ সাল পর্যন্ত প্রকৃত মজুরি বৃদ্ধির তীব্র হ্রাস সম্পর্কে চমকপ্রদ পর্যবেক্ষণ করেছেন। তিনি বলেন, “২০১৪-১৫ এবং ২০২১-২২ সালের মধ্যে প্রকৃত মজুরি বৃদ্ধির হার প্রতি বছর এক শতাংশের নিচে ছিল, আরও সঠিকভাবে, কৃষি শ্রমিক, নির্মাণ শ্রমিক এবং অকৃষি শ্রমিকদের জন্য তা ছিল যথাক্রমে ০.৯%, ০.২% ও ০.৩%। অকৃষি শ্রমিকদের জন্য বেশ কয়েকটি রাজ্যে, উপরে উল্লিখিত সময়কালে হরিয়ানা, কেরালা, পাঞ্জাব, রাজস্থান এবং তামিলনাড়ুর মতো রাজ্যগুলিতে প্রকৃত মজুরি হ্রাস পেয়েছে। কর্মসংস্থান ছাড়াও, সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রমিকদের প্রধান সমস্যা প্রকৃত মজুরির। নিম্ন-কর্মসংস্থান বা ছদ্ম-বেকারত্ব, কম মজুরি, মজুরি হ্রাস, ছাঁটাই, লকআউট, লে অফ, এবং কারাখানা বন্ধ করা নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে, শ্রমিকদের প্রতিবাদ থেকে বিরত করতে বাধ্য করার কৌশল হিসেবে এইগুলোকে ব্যবহার করা হচ্ছে। দ্রুত অর্থনৈতিক বৃদ্ধি সত্ত্বেও, মজুরি বৃদ্ধির মন্থর হার একটি বড় উদ্বেগের বিষয় এবং এর ফলে বৈষম্য এবং দারিদ্র্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

লিঙ্গভিত্তিক মজুরির বৈষম্য উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। সম কাজে সম বেতন মহিলাদের দেওয়া হচ্ছে না। নারীদের যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা না রেখে রাতের শিফটে কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে, ফলে তাঁরা যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। আরএসএস-এর প্রস্তাবিত “সংবিধান” মনুস্মৃতি, নারীদের ঘরের চার দেয়ালে আবদ্ধ রাখতে চায়। দ্রুত গতিতে কর্মস্থল থেকে নারীকর্মীদের বিযুক্ত করা হচ্ছে।

তৃতীয় সুবিধা হিসাবে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের কর্মীদের পুরাতন পেনশন স্কিম চালু করা এখন প্রধান দাবি। সেখানে মোদি সরকার নতুন পেনশন স্কিমে পেনশনের মাত্রা সামান্য বৃদ্ধি করে শ্রমিকদের ক্রমবর্ধমান সংগ্রামকে বন্ধ করার চেষ্টা করছে। পেনশনভোগী এবং ট্রেড ইউনিয়নগুলির নিরলস প্রচার এবং সংগ্রাম সত্ত্বেও, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই, ইপিএস-এর ন্যূনতম পেনশন ১০০০ টাকা অতিক্রম করেনি৷

মোদি সরকার মুনাফা অর্জনের নামে আগ্রাসীভাবে সরকারী সেক্টরের সমস্ত সম্পত্তি তার কর্পোরেট বন্ধুদের কাছে বিক্রি করছে। এমনকি রাস্তা, বন্দর, বিমানবন্দরের মতো পরিকাঠামোও নগদীকরণের (মনেটাইজেশন) নামে রেহাই পাচ্ছে না। রেলওয়ের ব্যাপক বিস্তৃত নেটওয়ার্ক ভাগ ভাগ করে কর্পোরেটদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। এমনকি রেহাই পাচ্ছে না রেলওয়ে স্কুল, হাসপাতাল থেকে শুরু করে ট্রেন, ট্র্যাক এবং স্টেশন পর্যন্ত।

শিল্পপতি এবং সরকারের কাছে সামাজিক সুরক্ষা দেওয়াটা এক বাধ্যতামূলক কর্তব্য। কিন্তু এবার, বীমা প্রকল্প চালু করার মাধ্যমে মোদি সরকার তার দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছে। অসংগঠিত শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা সুবিধা দেওয়ার নামে, মোদী সরকার শুধুমাত্র বীমা এজেন্ট হিসাবে কাজ করছে – “ব্যবসা করাটা সরকারের কাজ নয়” বলে উচ্চস্বরে চিৎকার করে। নির্মাণ শ্রমিক বোর্ডসহ বিভিন্ন আইনের অধীনে থাকা কল্যাণ বোর্ডগুলো পরিকল্পিতভাবে ভেঙে ফেলা হচ্ছে। সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পে ই-শ্রম হল মরীচিকা মাত্র। মৃত্যুকালীন দু’লক্ষ টাকা সুবিধা এবং স্থায়ী অক্ষমতায় এক লক্ষ টাকা সুবিধা ছাড়া আর কিছুই তাতে পাওয়া যায় না। ই-শ্রমের মাধ্যমে কল্যাণ বোর্ডের সুবিধাগুলোকে হ্রাস করার জন্য কঠোরভাবে চাপ দেওয়া হচ্ছে।

২০৪৭-এর জন্য মোদির দৃষ্টিভঙ্গি হল গিগ এবং প্ল্যাটফর্ম কর্মীদের মতো কর্মী বাহিনী তৈরি করা। এরা এমন একধরনের শ্রমিক যারা তাদের নিয়োগকর্তাদের কাছ থেকে চাকরির নিরাপত্তা, মজুরি নিরাপত্তা এবং সামাজিক নিরাপত্তার মতো কোনো আইনি সুরক্ষা পাওয়ার অধিকারী নয়। সর্বোপরি, তারা সামাজিক নিরাপত্তা কোড অনুসারে বড় জোর একটি বীমা প্রকল্প কিনতে পারে। এই শ্রেনীর কর্মীবাহিনী নিয়ে স্বপ্ন দেখছেন মোদী। ভারত জি২০-এর সভাপতিত্ব গ্রহণ করার পরে, গিগ এবং প্ল্যাটফর্ম কর্মীদের মতো একটি কর্মীবাহিনী গড়ে তোলার জন্য এবং তাদের সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্পগুলির জন্য তহবিলের স্থায়িত্বের বিষয়ে কাজ করার জন্য একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হয়েছে। শিল্প প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটগুলি কর্পোরেট সংস্থাগুলির প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসাবে তৈরি করা হচ্ছে। তহবিল এবং প্রশিক্ষণ মডিউলগুলি কর্পোরেট চাহিদার সাথে সামঞ্জস্য রাখা হচ্ছে। আইটিআই-এর শিক্ষকদের একই কর্পোরেট সংস্থাগুলির দ্বারা প্রশিক্ষিত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। মোদি, বিজেপি এবং আরএসএসের এমনই কর্পোরেট আনুগত্য।

কর্মীদের মরিয়া ও হতাশ করে, মোদি সরকার এমন এক পরিবেশ এবং কর্মীবাহিনী খুঁজছে যার মধ্য থেকে তারা তাদের জন্য পদাতিক বাহিনী নিয়োগ করতে পারে। “অগ্নিপথ” এর মাধ্যমে এমন একটি বিপর্যয়মূলক নকশা করা হয়েছে।

মোদি সরকারের উন্নয়ন আখ্যানের মডেল হল আরও বেশি বেশি বেসরকারীকরণ, আর তার মাধ্যমেই আরও বেশি কর্মসংস্থান, কর্পোরেটদের লক্ষ কোটি টাকা ছাড়। কর ছাড় যে কেবল একটি বড় প্রতারণা ও ধ্বংসাত্মক তা বারবার প্রমাণিত হয়েছে। দেশ এখন রেকর্ড বেকারত্ব ও সর্বোচ্চ চাকরি হারানোর সম্মুখীন। মোদির বন্ধু আদানি এবং আম্বানির নেতৃত্বে নির্বাচিত কয়েকটি কর্পোরেট হাউস বিপুল সম্পদ সংগ্রহ করেছে, অর্জন করেছে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যবসায়িক সংস্থার তখমা। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ আদানি পরিবারের মালিকানাধীন কর্পোরেট সাম্রাজ্য সাকুল্যে মাত্র বিশ হাজার চাকরি প্রদান করেছে। এই ঘটনাটির সবচেয়ে ভালোভাবে স্বরূপ উন্মোচন করেছে হিন্ডেনবার্গ রিপোর্ট। কর্পোরেট হাউসগুলি বিশেষ করে আদানি যেভাবে সম্পদ আহরণ করছে তার নেপথ্য কাহিনী প্রকাশ করে দিয়েছে। এসবিআই এবং এলআইসি-র মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিতে জনসাধারণের সঞ্চিত বিপুল অর্থ আদানির সংস্থায় বিনিয়োগের মাধ্যমে আদানি আরও ধনী থেকে ধনীতর হচ্ছে।

মোদি সরকারের বহুমুখী আক্রমণের মুখে শ্রমিক শ্রেণী। কর্পোরেট দমন-পীড়ন কঠোর করা হচ্ছে। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করা হচ্ছে। এমনকি বিচার বিভাগকেও সরকারের নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হয়েছে। বিজেপি-আরএসএস জোট তাদের ঘৃণার রাজনীতিতে ইন্ধন যোগাতে তীব্র সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের দিকে ঝুঁকেছে। আরএসএস-বিজেপি জোট সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ও বিষ উস্কে দিতে, বিশেষ করে মুসলমানদের দিকে নিশানা করা হচ্ছ। কর্পোরেট, সাম্প্রদায়িক ফ্যাসিস্টদের পক্ষে ভোট সংগ্রহের জন্য ধর্মীয় উৎসবগুলিকে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ সাম্প্রদায়িক সহিংসতার নাট্যশালা হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এমনকি অভিবাসী শ্রমিকদের দুর্দশাকে সাম্প্রদায়িক, জাতীয়তাবাদী ঘৃণা ও সহিংসতা উস্কে দিতে ব্যবহৃত হচ্ছে। সর্বশেষ উদাহরণ হল তামিলনাড়ুতে অভিবাসীদের উপর হামলার জাল ভিডিও, পরিকল্পিত ও ষড়যন্ত্রমূলকভাবে বিজেপি প্রচার করেছে। দুর্দশাগ্রস্থ অভিবাসী শ্রমিকরা মোদির কুমিরের কান্না দেখেছে যারা খাদ্য, জল এবং পরিবহন ছাড়া হাজার হাজার কিলোমিটার হাঁটতে বাধ্য হয়েছিল এবং লকডাউনের নামে একই সরকারের দ্বারা অকল্পনীয় দুর্দশা ও নিষ্ঠুরতার শিকার হয়েছিল।

২০২৩ সালের মে দিবসে শ্রমজীবী মানুষকে এই সংকল্প নিতে হবে — মোদি সরকারের এই ধরনের আক্রমণ এবং শ্রমজীবী মানুষকে বিভক্ত ও প্রতারণা করার বিরুদ্ধে, তাদের ঘৃণ্য পরিকল্পনার বিরুদ্ধে কার্যকর মোকাবিলা করতে হবে।

শ্রমিক শ্রেণীকে তার সংগ্রামকে বহুগুণ তীব্র করতে হবে এবং একই সাথে মেহনতি জনগণের অন্যান্য অংশের সাথে একটি শক্তিশালী ও বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। শুধুমাত্র শ্রমিক শ্রেণীর ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামই এই আক্রমণগুলিকে প্রতিহত করতে পারে, যেমন ঐতিহাসিক কৃষক আন্দোলনের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছিল যা স্বৈরাচারী মোদী সরকারকে তিনটি কৃষক বিরোধী কালো আইন বাতিল করতে বাধ্য করেছিল। আমরা শ্রমিক শ্রেণীকে বেসরকারীকরণ, চুক্তিবদ্ধকরণ, বেকারত্ব, শ্রমবিধি এবং অনুষঙ্গী দানবীয় আইনের বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনকে আরও জোরদার করার আহ্বান জানাই।

২০২৩ সালের মে দিবসে দেশের শ্রমজীবী মানুষ ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে গণতন্ত্র ও আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে বাঁচাতে শ্রমিকের প্রধান শত্রু বিজেপিকে পরাজিত করার শপথ নিন।

আসুন আমরা মে দিবসে শপথ নিই শ্রমিক বিরোধী, জনবিরোধী, দেশবিরোধী মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারকে উৎখাত করার!

মে দিবস দীর্ঘজীবী হোক!

অল ইন্ডিয়া সেন্ট্রাল কাউন্সিল অফ ট্রেড ইউনিয়ন


may-day-call_0
ambedkar and may day

পুঁজিবাদের নির্মম শোষণের মধ্যেই শ্রমিকের বেঁচে থাকার ন্যূনতম মানবিক অধিকার অর্জন করার লড়াইয়ের স্মারক মে দিবস। দিনে সর্বাধিক আট ঘণ্টা কাজ করার দাবিতে শিকাগো শহরের হে মার্কেটের লড়াইকে স্মরণে রেখে মে দিবস পালন করে সারা বিশ্ব।

শিল্প বিপ্লবের পর উনবিংশ শতকের শুরুতে ব্রিটিশ সোশ্যালিস্ট রবার্ট ঔয়েন প্রথম “আট ঘণ্টা কাজ, আট ঘণ্টা অবসর, আট ঘণ্টা বিশ্রাম” শ্লোগান সূত্রবদ্ধ করে সামনে আনেন। সারা দেশে সর্বক্ষেত্রে সমস্ত শ্রমিকদের জন্য সর্বাধিক আট ঘণ্টার কর্মদিবস প্রথম চালু হয় ১৯১৭ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নে।

ভারত সরকারের শ্রম দপ্তর প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৩৭ সালের নভেম্বর মাসে। ১৯৪২ সালের জুলাই মাস থেকে শ্রম দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত হিসেবে কাজ শুরু করেন ডক্টর ভীমরাও আম্বেদকর। সেচ ও বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদন এই দপ্তরের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল। আম্বেদকরের তত্ত্বাবধানে সেন্ট্রাল টেকনিকাল পাওয়ার বোর্ড (সিটিপিবি) স্থাপিত হয়। ২৭ নভেম্বর ১৯৪২ দিল্লিতে অনুষ্ঠিত ইন্ডিয়ান লেবার কনফারেন্সের সপ্তম অধিবেশনে আম্বেদকর আট ঘণ্টা কর্মদিবস প্রণয়ন করেন। তার আগে ১৪ ঘণ্টা কর্মদিবস ছিল।

‘ন্যাশনাল এমপ্লয়মেন্ট এজেন্সি’ – জনপ্রিয় ভাষায় যা ‘এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জ’ স্থাপন করেছিলেন আম্বেদকর।

নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটি প্রচলন করতে অনেক ধৈর্য্য সহকারে লড়েছিলেন তিনি। নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন সুবিধা আইন, নারী শ্রমিক কল্যাণ তহবিল, নারী ও শিশু শ্রমিক সুরক্ষা আইন ইত্যাদি তাঁরই উদ্যোগে কায়েম হয়।

ইএসআই (এমপ্লয়িস স্টেট ইন্স্যুরেন্স) প্রবর্তন করেন আম্বেদকর। পূর্ব এশীয় দেশগুলির মধ্যে ভারতেই প্রথম কর্মচারীদের জন্য এরকম কোনো ইন্স্যুরেন্স অ্যাক্ট চালু হয়েছিল।

প্রভিডেন্ট ফাণ্ড, ডিএ (ডিয়ারনেস এলাওয়েন্স), লীভ বেনিফিট, পে স্কেল রিভিশন চালু করেন আম্বেদকর। খনি শ্রমিকদের জন্য আবাসন, পানি সরবরাহ, শিক্ষা, বিনোদন, সমবায় ব্যবস্থা প্রণয়ন করেন তহবিল গঠন করে।

ট্রেড ইউনিয়ন ও শ্রমিক সংগঠনকে স্বীকৃতি প্রদান বাধ্যতামূলক করেন ১৯৪৩ সালে ‘ইন্ডিয়ান ট্রড ইউনিয়নস (এমেণ্ডমেন্ট) বিল’ এনে। ধর্মঘট করাকে শ্রমিকের আইনি অধিকার হিসেবে স্বীকৃত করেন। শ্রমিকের প্রতিনিধি যাতে শ্রমনীতি নির্ধারণে সম মর্যাদা সহ আলোচনায় অংশ নিতে পারেন তার জন্য ‘ট্রাইপার্টাইট লেবার কাউন্সিল’ বা ত্রিপাক্ষিক শ্রম পরিষদ প্রচলন করেন আম্বেদকর। শ্রমিক আন্দোলনকে বিরাট শক্তি জোগান। ন্যূনতম মজুরি আইনও ভারতে তাঁর উদ্যোগেই প্রথম প্রণীত হয়।

- মলয় তেওয়ারি

খণ্ড-30
সংখ্যা-12