আয়ারলা এআইকেএম যৌথ সভা
aikm-joint-meeting
কাজ খাদ্য জমির অধিকারের দাবিতে প্রচার ও গণসংযোগ অভিযানে লক্ষাধিক স্বাক্ষর সংগ্রহের কর্মসূচি

কলঙ্কিত রাজ্য শাসকেরা যখন নিজেদের সংকট থেকে মানুষের নজরকে ঘুরিয়ে দিতে তথাকথিত গণজোয়ার যাত্রা করছে। সীমাহীন দুর্নীতি দলবাজি ও প্রশাসনের সার্বিক ব্যর্থতার ফলে গড়ে ওঠা গণক্ষোভের মুখে বেগতিক বুঝে ওরা পঞ্চায়েত নির্বাচন পিছিয়ে দিয়ে অনিশ্চিত করে তুলেছে। এই প্রেক্ষাপটে গ্রামাঞ্চলে বাড়ি বাড়ি গণসংযোগ অভিযান চালিয়ে লক্ষাধিক স্বাক্ষর সংগ্রহের কর্মসূচি গ্রহণ করল আয়ারলা ও এআইকেএম। আজ যখন বিজেপি আরএসএস পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকার এ রাজ্যের গরিব মানুষদের বঞ্চনা করে চলেছে, সুযোগ পেলেই বিভিন্ন স্থানে দাঙ্গা লাগিয়ে ধর্মীয় মেরুকরণের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তখন এই অভিযানে তার বিরুদ্ধেও জনমতকে সংগঠিত করা হবে। আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রস্তুতি গড়ে তুলতে যে আওয়াজকে তুলে ধরা হবে তা হল —

পঞ্চায়েতকে দলতন্ত্র ও আমলাতন্ত্রের শাসন থেকে মুক্ত করো, গ্রামীণ জনতার অংশগ্রহণ সুনিশ্চিত করো। সন্ত্রাসমুক্ত পঞ্চায়েত নির্বাচন ও কাজ, মজুরী, আবাস, ফসলের ন্যায্য দামের অধিকারের দাবীতে জোট বাঁধো তৈরি হও।

এই অভিযানে ১০০ দিনের প্রকল্পে কাজ ও বকেয়া মজুরির দাবিতে রাজ্যপালের উদ্দেশ্যে এক মাসব্যাপী জবকার্ড নং সহ গণস্বাক্ষর সংগ্রহ চালানো হবে। গত ৭ মে বর্ধমানে আয়োজিত এক যৌথ কর্মী সভা থেকে এই কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। ১০ মে থেকে ১০ জুন স্বাক্ষর সংগ্রহ চালিয়ে রাজ্যপালের কাছে স্মারকলিপি জমা দেওয়া হবে। এছাড়া উত্তরবঙ্গে তিস্তা প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষেরা তাঁদের ন্যায়সঙ্গত দাবিতে রাজ্য সরকারের কাছে দাবিসনদ পেশ করবে এবং এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবে।

এই বৈঠকে অংশগ্রহণ করে পার্টির রাজ্য সম্পাদক অভিজিৎ মজুমদার বলেন, সারা দেশের পাশাপাশি এ রাজ্যেও সংকটগ্রস্ত কৃষি-অর্থনীতি তলানিতে এসে পৌঁছেছে। সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় প্রকাশ এ রাজ্যে ৬৫ শতাংশ গ্রামীণ মানুষের এক ছটাকও জমি নেই। ৭০ শতাংশ মানুষ জমি হারিয়েছে। মাত্র ২৪ শতাংশ পরিবার স্বনিযুক্ত কৃষি কাজের উপর নির্ভরশীল। চুক্তি-চাষ বিরাট পরিমানে বেড়ে গেছে। তাই কৃষিক্ষেত্রকে রক্ষা করার বিষয়টিকে কেন্দ্রে রেখে আমাদের আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। পঞ্চায়েত নির্বাচনী প্রচারে এই প্রশ্নটাকেই আমাদের জোরের সাথে তুলে ধরতে হবে। গ্রাম সংসদ তথা গণতদারকি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে।

আগামী আশু কাজ হিসাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে বর্ধিত সংখ্যক আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য প্রস্তুতির কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, গ্রামে গ্রামে গণস্বাক্ষর সংগ্রহে প্রতিটি গ্রামসভায় কমপক্ষে ১০০ বাড়ি যাওয়া, গ্রাম সংসদ ভিত্তিক কর্মীবৈঠক ও গ্রামসভা করা, সম্ভাব্য সমস্ত শক্তিকে সমাবেশিত করে স্থানীয়ভাবে জমায়েত ও মিছিলের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া,

২৫ মে নকশালবাড়ি দিবসে প্রচার কর্মসূচি নেওয়া, অঞ্চল পঞ্চায়েতে বিক্ষোভ ডেপুটেশন সংগঠিত করা, স্থানীয়ভাবে আন্দোলনমুখী উদ্যোগ নেওয়া, মহিলা, ছাত্র-যুব, শ্রমিক সংগঠনের সাথে যুক্তভাবে প্রচারের কর্মসূচি গ্রহণ করা। এছাড়া গণপ্রচারে ডিজিটাল মাধ্যমের ব্যবহার, গ্রামাঞ্চলে বিস্তৃত হোয়াটসঅ্যাপ সংযোগ গড়ে তোলা। পরিযায়ী শ্রমিকদের সাথে সংযোগ গড়ে তোলা। গ্রামসংসদ সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য ও আইন নিয়ে প্রচার করা।

aiarla-meeting

প্রচারে যে দাবিগুলো তুলে ধরা হবে তা হল —

  • ১০০ দিন কাজের আইন অনুযায়ী সকল জবকার্ডধারী গরিবদের কাজ, বকেয়া মজুরি এবং কেন্দ্রীয় সরকার ঘোষিত ৪২৯ টাকা ন্যুনতম মজুরি দিতে হবে। নয়া ডিজিটাল হাজিরার বিধি বন্ধ করতে হবে।

  • আবাস যোজনায় দুর্নীতি দলবাজি বন্ধ করে সকল গরিবদেরকে ঘর দিতে হবে, সহায়তা বৃদ্ধি করে ৫ লক্ষ টাকা করতে হবে। বাসগৃহের অধিকারকে মৌলিক অধিকার হিসাবে স্বীকৃতি দিতে হবে।

  • দীর্ঘদিন বসবাসের জমিতে গরিব মানুষকে বাস্তুপাট্টা দিতে হবে। নতুন করে বাসগৃহ আইন প্রণয়ন করতে হবে।

  • ন্যূনতম মজুরির হারবৃদ্ধি করতে হবে এবং তাকে কার্যকরী করতে নির্দিষ্ট পরিকাঠামো সুনিশ্চিত করতে হবে।

  • খাদ্য নিশ্চয়তা আইনকে শক্তিশালী করতে হবে। চাল, আটা, ডাল, তেল, সব্জি, চিনি, দুধ ইত্যাদি রেশনের মাধ্যমে দিতে হবে।

  • ফসলের লাভজনক দাম গ্যারান্টি আইন করতে হবে। গ্রামে ক্যাম্প করে ২০৪০ টাকা সরকারি দরে ধান কিনতে হবে।

  • গরিব চুক্তিচাষিদের সরকারি নথিভূক্ত করতে হবে, তাদের কৃষক বন্ধু সহ সমস্ত সরকারি প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

  • বনাঞ্চল সহ আদিবাসীদের সমস্ত জমির পাট্টা ও পরচা দিতে হবে।

  • বর্গা উচ্ছেদ বন্ধ করো, বর্গা আইন কঠোরভাবে লাগু করতে হবে

  • সকল দলিত ও দরিদ্র শ্রমজীবীর সরকারী ও মহাজনী ঋণ মকুব করতে হবে। বিনা সুদে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ প্রদান করতে হবে। মাইক্রোফাইন্যান্স কোম্পানিগুলির সুদের হার কমাতে হবে। জোর করে ঋণ আদায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে ঘোষণা করতে হবে।

  • সমস্ত দলিত ও দরিদ্র সহ বিপিএল পরিবারের করোনা সময়কালের বিদ্যুৎ বিল মকুব করতে হবে। এদের বিনামূল্যে মাসিক ২০০ ইউনিট বিদ্যুৎ দিতে হবে।

  • মানুষ মারা মূল্যবৃদ্ধি, খাদ্য শস্য, ঔষধ সহ চিকিৎসা ব্যয়ের ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধি রোধ কর। দরিদ্র শ্রমিকদের জন্য মহার্ঘ্য ভাতা চালু করতে হবে।

  • ধর্মের নামে সাম্প্রদায়িক বিভেদ ও হামলার চক্রান্ত বন্ধ করতে হবে। সাম্প্রদায়িক উস্কানিদাতাদের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের রায় মেনে দ্রুত মামলা দায়ের করতে হবে।

খণ্ড-30
সংখ্যা-14