সরকারি কর্মচারীদের কালীঘাটে কলরব
government-employees

৬ মে ২০২৩ তারিখে পশ্চিম বাংলার ইতিহাসে এক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটে গেল। তৃণমূল নেতৃত্বাধীন সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি তথা হরিশ মুখার্জি রোডে কোনো বিরোধী রাজনৈতিক দল বা সংগঠনের মিছিল করার অনুমতি মেলেনি। সরকারি কর্মচারীদের প্রায় ৬০’র কাছাকাছি সংগঠনের মিলিত ঐক্য সংগ্রামী যৌথমঞ্চ শহীদ মিনারে তাদের অবস্থানের শতাব্দীতে হাজরা মোড় থেকে হরিশ মুখার্জী রোডে মিছিল করতে চাইলে অনুমতি দেয়নি পুলিশ। ফলে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের তরফ থেকে কলকাতা হাইকোর্টে মিছিলের অনুমতি চেয়ে মামলা করা হয়। অবশেষে বিচারক রাজশেখর মান্থ’র এজলাস মিছিলের অনুমতি দেয়। আর সেই অনুমতি সাপেক্ষে সংগ্রামী যৌথমঞ্চের নেতৃত্বে হাজার হাজার সরকারি কর্মচারী বেলা ১২টার মধ্যে হাজরা মোড়ে জমায়েত হয়। সেখান থেকে দুপুর ১টার সময় শুরু হয় মিছিল। মিছিল হরিশ মুখার্জি রোড ধরে, দু’জন প্রভাবশালী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী ও সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জীর বাসভবনের পাশ দিয়ে পুনরায় হাজরা মোড়ে এসে সম্পন্ন হয়।

সংগ্রামী যৌথমঞ্চের অন্তর্ভুক্ত বেশ কয়েকটি সংগঠন হরিশ মুখার্জী রোডে মিছিলের বিরোধিতা করে। প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে সেই বিরোধিতার স্বর তারা প্রকাশ করে। ফলে একটা বিতর্কের পরিবেশ তৈরি হয় যৌথমঞ্চের মধ্যে। এই বিপরীত পক্ষের মতে যৌথ মিটিং’এ হরিশ মুখার্জিতে মিছিলের বিরোধিতা করা সত্ত্বেও কয়েক জন নেতৃত্ব অগণতান্ত্রিকভাবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা চেয়েছিলেন শতাব্দীতে শহীদ মিনারে সরকারি কর্মচারীদের নিয়ে একটা ঐতিহাসিক জনসমাগম তৈরি করতে।

এই দ্বিমুখী বিতর্কের মাঝখানে দাঁড়িয়েও হরিশ মুখার্জী রোডে মিছিল মহাকাব্যিক আড়ম্বরের সঙ্গেই সম্পন্ন হয়েছে। মিছিল শেষে হাজরা মোড়ে একটি সভা করা হয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সেই সভামঞ্চে এসে তাদের মতামত রাখে। ডিওয়াইএফআই/এসএফআই থেকে সৃজন, কলতান’রাও বক্তব্য রাখেন। বক্তব্য রাখতে এসেছিলেন কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান। পরে মঞ্চে বক্তব্য দিতে আসেন প্রাক্তন তৃণমূল নেতা তথা বর্তমান বিজেপির বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং অন্য এক প্রাক্তন তৃণমূল ও বর্তমান বিজেপির শঙ্কুদেব পান্ডা। এটাও একটা বিতর্কিত বিষয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা এসে এই মঞ্চে বক্তব্য রাখবেন তা অধিকাংশ সংগঠনের অজানা ছিল। প্রোগ্রেসিভ টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গল ‘PTAB’ সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের একজন শরিক সংগঠন হিসাবে উক্ত মঞ্চে বক্তব্য রাখার জন্য বিপ্লবী যুব এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে রণজয় সেনগুপ্তের নাম প্রস্তাব করে। সেই প্রস্তাব মাফিক মঞ্চে প্রাসঙ্গিক বক্তব্য রাখেন আরওয়াইএ’র রাজ্য সম্পাদক রণজয় সেনগুপ্ত।

সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ তিনটি মূল দাবিকে সামনে রেখে শহীদ মিনারে একশো দিন যাবৎ ধর্ণা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনটি দাবি হল,
১) সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া মহার্ঘ্য ভাতা প্রদান।
২) শূন্য পদে স্বচ্ছ নিয়োগ। 
৩) যোগ্য অস্থায়ী কর্মচারীদের স্থায়ীকারণ।

এই তিনটি দাবিকে সামনে রেখেই মিছিল হয়েছিল। কিন্তু বিপত্তি ঘটেছে কয়েকজন রাজনৈতিক নেতার বক্তব্যকে ঘিরে। তারা বক্তব্য পরিবেশ কালে সংগ্রামী যৌথমঞ্চের উক্ত দাবিসমূহকে গৌণ করে নিজেদের নির্বাচনী জনসভার মতো বক্তব্য দিতে শুরু করেন। শুভেন্দু তো তিনটি দাবির গলায় পা রেখে ‘NO VOTE TO TMC’ শ্লোগানও তুলে দেয়। ফলে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের সংগঠনগুলির মধ্যে একটা তীব্র বিতর্কের সূচনা করে। ‘প্রোগ্রেসিভ টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গল’ শরিক সংগঠন হিসাবে এটার কঠোর সমালোচনা করে এবং আগামীতে সংগ্রামী যৌথমঞ্চের প্লাটফর্মকে কেউ যাতে নিজস্ব রাজনৈতিক মঞ্চ না ভাবে সে বিষয়ে সজাগ থাকার নিদান দিয়েছে।

সংগ্রামী যৌথমঞ্চের মধ্যে থাকা সংগঠনগুলির মধ্যে মতাদর্শগত পার্থক্য রয়েছে। এই ঐক্য তাই মতাদর্শগত ঐক্য নয়, দাবির মিলগত ঐক্য। মতাদর্শ যেমন একটা সংগঠনের বুনিয়াদকে দৃঢ় করে রাখে। এখানে সেই মতাদর্শগত দৃঢ়তা নেই, ফলে এই আন্দোলনের সাফল্যে একটা জিজ্ঞাসা মাঝে মাঝেই উঁকি দেয়। তবুও বিভেদের মাঝে মিলন ঐক্য তৈরি করে রেখেছে মহার্ঘ্য ভাতার অধিকার।

- মহঃ মেহেবুব মন্ডল

খণ্ড-30
সংখ্যা-14