মে দিবসে দুনিয়া জুড়ে শ্রমিক বিক্ষোভ
may-day

সারাটা পৃথীবি জুড়ে পালিত হয় মে দিবস। এবারের মে দিবসে বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সংগঠিত হয়েছে। ভারতে যেমন শ্রমিক-বিরোধী চার শ্রম-কোডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ প্রতিধ্বনিত হয়, ফ্রান্সে পেনশন সংস্কার, সারা ইউরোপ জুড়ে প্রকৃত মজুরির ক্রমশ সংকুচিত হতে থাকার বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ আছড়ে পড়ে।

এশিয়া

দক্ষিণ কোরিয়ায় কোরিয়ান কনফেডারেশন অফ ট্রেড ইউনিয়ন্স সিউল নগরে এক মিছিল সংগঠিত করে। অপরদিকে, ফেডারেশন অফ কোরিয়ান ট্রেড ইউনিয়ন্স এদিনই সংগঠিত করে জাতীয় শ্রমিক কংগ্রেস, যেখানে অংশ নেন ৩০,০০০-এর উপর শ্রমিক। ক্ষমতাসীন সরকার যেভাবে ইউনিয়নকে দুর্বল করার পদক্ষেপ নিয়েছে, যে সমস্ত শ্রম-বিরোধী সংস্কার কর্মসূচি নামিয়েছে, তার বিরুদ্ধে সকলেই সোচ্চার হন। ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন দাবি জানিয়েছে, শ্রম-বিরোধী সংস্কার বাতিল করা হোক, বৃদ্ধি করা হোক ন্যূনতম মজুরি। বিডাল মিঞ্জোক নামে এক খাবার সরবরাহকারী অ্যাপের শ্রমিকরা সংস্থার সদর দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ দেখান তাদের দেয় ডেলিভারির মজুরি বাড়ানোর দাবিতে। তারা জানান, ব্যাপক মূল্যস্ফীতি হওয়া সত্ত্বেও গত ন'বছর ধরে তাদের মজুরি এক পয়সাও বাড়েনি।

ইন্দোনেশিয়া

৩২টি ট্রেড ইউনিয়নকে নিয়ে গঠিত কনফেডারেশন অফ ইন্দোনেশিয়ান ট্রেড ইউনিয়ন্স জাকার্তায় বিশাল এক সমাবেশ করে, যাতে আনুমানিক ৫০,০০০ মানুষ সামিল হন। তাঁরা জাতীয় স্মারকের সামনে জমায়েত হয়ে সাংবিধানিক কোর্টের দিকে মিছিল করে সভা করেন। সেখানে দাবি তোলা হয়, শ্রম-বিরোধী আইন বাতিল করার।

ফিলিপাইন্স

ম্যানিলায় প্রায় ৬,০০০ বিক্ষোভকারী ১৪টি শ্রমিক ইউনিয়নের অধীনে সমাবেশিত হন। কন্ট্রাক্ট শ্রমিকদের নিয়মিতকরণ, বেতন বৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতির নিয়ন্ত্রণ প্রভৃতি দাবিতে তারা সোচ্চার হন। ফেডারেশন অফ ফ্রি ওয়ার্কার্স এর ৩,০০০-এর অধিক শ্রমিক, পার্টিডো মাঙ্গাগাওয়া, পাবলিক সার্ভিস ইন্টারন্যাশনাল এবং নির্মাণ শিল্পের মহিলা শ্রমিকরা বিক্ষোভে সামিল হন। সম্প্রচার শিল্পের শ্রমিক কর্মচারীরা দেশের সুপ্রিম কোর্টের সামনে বিক্ষোভ জামায়েত করে ঠিকা প্রথা অবসানের দাবিতে সোচ্চার হন।

বিভিন্ন শ্রমিক গ্রুপ মেন্ডিওলাতে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখান উন্নত মজুরি, ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার, শ্রমিকদের উপর নানাবিধ নামিয়ে আনা হামলার বিরুদ্ধে।

জাপান

রাজধানী টোকিও-তে হাজারে হাজারে শ্রমজীবী মানুষ সমবেত হয়ে মজুরি বৃদ্ধির দাবি তোলেন। দেশের প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে আম জনতার উপর করের বোঝা চাপানোর বিরুদ্ধে তারা সোচ্চার হন। একই সাথে শ্রমজীবী মানুষের সামাজিক সুরক্ষা খাতে ব্যয় বৃদ্ধি ও জনগণের জীবনযাত্রার উন্নতি কল্পে ও কল্যাণকর প্রকল্পে ব্যয় বৃদ্ধির দাবি ও জানানো হয়।

কাম্বোডিয়া

নোম পেন-এ বহু শ্রমিক বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়নের ব্যানারে সমবেত হয়ে উন্নত বেতন কাঠামো ও কর্মক্ষেত্রে উন্নত কাজের পরিবেশ গড়ে তোলার দাবি তোলেন। ক্যাম্বোডিয়ান কনফেডারেশন অফ ইউনিয়ন্স এবং ক্যাম্বোডিয়ান অ্যালায়েন্স অফ ট্রেড ইউনিয়ন্স যুক্তভাবে এক বিশাল মিছিল করে।

তাইওয়ান

তাইপে-তে সরকারি হাসপাতাল, বিমা কর্মীরা বেতন বৃদ্ধি ও উন্নত কাজের পরিবেশের দাবিতে বিক্ষোভ সংগঠিত করেন।

লেবানন

বেইরুটে কয়েক হাজার শ্রমিক কমিউনিষ্ট পার্টি ও অন্য পেশাগত সংগঠনের নেতৃত্বে নানা শ্রেণিগত দাবিতে বিক্ষোভ দেখায়।

পাকিস্থান

দেশের অভ্যন্তরে নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণ দেখিয়ে বেশ কিছু শহরে মিছিলের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা সত্ত্বেও লাহোর, পেশোয়ার, কারাচিতে শ্রমিক ইউনিয়গুলো নানা দাবিতে বিক্ষোভ দেখায়।

ইউরোপ

প্যারিস এখন যেন এক যুদ্ধক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। ফ্রান্সে প্রায় ৩০০টি ভিন্ন ভিন্ন জায়গা থেকে বিপুল সংখ্যক বিক্ষোভকারী প্রধানমন্ত্রী মাঁকর’র পেনশন সংস্কারের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে প্রতিবাদে উত্তাল। প্যারিসে আশি হাজার থেকে একলাখ মানুষ পয়লা মে বিক্ষোভে সামিল হন। বিক্ষোভকারীদের সনাক্ত করতে সরকার ড্রোন উড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। বিক্ষোভকারীরাও ড্রোন থেকে নিজেদের আড়াল করতে আশ্রয় নেয় ছাতার তলায়। বিশাল বিপুল জনস্রোত কালো ছাতার সমুদ্রের তলে যেন ঢাকা পড়ে যায়। বিমান কর্মীরাও উড়ান বন্ধ রেখে সামিল হয়ে পড়েন এই বিক্ষোভ সমাবেশে।

এদিকে ব্রাজিল সরকার মে দিবসের সম্মানে পয়লা মে ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে। এই বৃদ্ধি কম হলেও বিগত ছ’বছরে এই প্রথম মূল্যস্ফীতির উপর এই মজুরি বৃদ্ধি ঘোষণা করা হল।

(কৃতজ্ঞতা স্বীকার: গৌরি লঙ্কেশ নিউজ)

খণ্ড-30
সংখ্যা-13