কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থায় ব্যাপক হারে কর্মী সংকোচন
central-government-agencies

ক্ষমতার অলিন্দে সুবিধাভোগী অর্থনীতিবিদরা যখন সাম্প্রতিক জিডিপি বৃদ্ধির পরিসংখ্যানে আহ্লাদে আটখানা হয়ে দাবি করছেন যে অতিমারীর প্রভাবমুক্ত হয়ে ভারতীয় অর্থনীতির নবজীবন শুরু হয়েছে গোটা দুনিয়াকে চমকে দিয়ে, তখন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোর এক সমীক্ষা প্রকাশ করল কিভাবে সংকুচিত হচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থায় কর্মসংস্থানের হার। পরিহাস এটাই, বেকারত্বের আতঙ্কজনক ছবি আর্থিক বৃদ্ধির তুলনামূলক বিচারে কখনই আলোচ্য বিষয় হয়ে ওঠে না সরকারি নীতিকারদের কাছে।

আলোচ্য সমীক্ষা থেকে দেখা যাচ্ছে, বিগত দশকে কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থাগুলোতে একদিকে ব্যাপক হারে কমেছে কর্মীবাহিনী, অন্যদিকে লাফ দিয়ে বেড়েছে ঠিকা বা কন্ট্রাক্ট শ্রমিকদের সংখ্যা।

২০১২-১৩ থেকে ২০২১-২২’র পর্যায়ে কিভাবে কমানো হয়েছে শ্রমশক্তি তা প্রকাশ পেয়েছে ওই সমীক্ষায়। কেন্দ্রীয় সরকারের ৫০ শতাংশের বেশি অংশীদারিত্ব রয়েছে যে সমস্ত সংস্থায়, এমন সমস্ত বিধিবদ্ধ কর্পোরেশনে শ্রমিক কর্মচারীর সংখ্যা ২০১২’র মার্চে ছিল ১৭.৩ লক্ষ, যা মার্চ ২০২২এ সংকুচিত হয়ে নেমে এসেছে ১৪.৬ লক্ষে! ৩৮৯টি কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থায় এই সমীক্ষা চালানো হয়েছে, যার মধ্যে ২৪৮টি কার্যকরী রয়েছে।

২.৭ লক্ষ কর্মী সংকোচনের বিপরীতে কর্মী নিয়োগের ধরনের মধ্যে আনা হয়েছে বড়সড় বদল। মার্চ ২০১৩তে ১.৭ লক্ষ কর্মীর মধ্যে ১৭ শতাংশ ছিলেন ঠিকা শ্রমিক আর ২.৫ শতাংশকে নিয়োগ করা হয় ক্যাজুয়াল/দৈনিক মজুর হিসাবে। কিন্তু ২০২২ সালের মধ্যে ঠিকা কর্মীদের সংখ্যা হুহু করে বেড়ে দাঁড়ায় ৩৬ শতাংশে আর ক্যাজুয়াল/দৈনিক মজুরের সংখ্যা হয়ে দাঁড়ায় ৬.৬ শতাংশ। সামগ্রিক হিসাবে, মার্চ ২০২২’র মধ্যে কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোতে নিয়োজিত কর্মীদের মধ্যে ৪২.৫ শতাংশ কন্ট্রাক্ট বা ক্যাজুয়াল কর্মী রইলেন, ২০১৩’র মার্চে যে সংখ্যাটা ছিল ১৯ শতাংশ!

সংস্থাভিত্তিক সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, মোট সাতটি কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থায় গত দশবছরে ২০,০০০’রও বেশি কর্মী সংকোচন হয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি কর্মী ছাঁটা হয়েছে বিএসএনএল’এ, যার সংখ্যা হল প্রায় ১.৮ লক্ষ। এরপর রয়েছে স্টিল অথরিটি অফ ইন্ডিয়া বা সেল এবং এমটিএনএল। উভয় সংস্থাই এই পর্বে কমিয়েছে ৩০,০০০ কর্মী।

মজার ব্যাপার হল, কর্মী ছাঁটাই হয়েছে লাভজনক ও অলাভজনক উভয় ধরনের সংস্থা থেকে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২১-২২-এ প্রথম দশটি অলাভজনক সংস্থাগুলোর মধ্যে রয়েছে বিএসএনএল এবং এমটিএনএল আর এয়ার ইন্ডিয়াকে তুলে দেওয়া হয়েছে বেসরকারি সংস্থার হাতে। এই তালিকায় রয়েছে বিপুল লাভ করা সেল এবং ওএনজিসি’র নাম — কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থাগুলোর মধ্যে ২০২১-২২এ যারা সর্বোচ্চ মুনাফা করেছে। ফলে এটা সহজেই অনুমেয় যে, অলাভজনক হয়ে পড়াটাই কর্মী সংকোচনের একমাত্র যুক্তি নয়।

যে রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থাগুলো সবচেয়ে বেশি কর্মী নিয়োগ করেছে তারমধ্যে এক নম্বরে রয়েছে ইন্ডিয়ান অয়েল যারা গত দশবছরে ৮০,০০০ কর্মী নিয়োগ করেছে। দশটি কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার প্রতিটি ওই পর্যায়ে ১০,০০০’র বেশি কর্মী নিয়োগ করেছে, এদিকে ১৩টি সংস্থার প্রতিটি ১০,০০০ করে কমিয়েছে কর্মীবাহিনী।

লাভজনক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলো ২.৬ লক্ষ কোটি টাকা মুনাফা কামিয়েছে, যা নসাৎ করে বহুল প্রচারিত সেই শয়তানি ভাষ্য যে বেশিরভাগ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাই পরিণত হয়েছে শ্বেত হস্তিতে।

(সূত্রঃ টাইমস অফ ইন্ডিয়া, ১৬ জুন ২০২৩)

খণ্ড-30
সংখ্যা-20