নিজেদের স্বার্থে যারা দেশে বিভাজন ও লুঠপাট চালায়
their-own-benefit

আরএসএস নিজেকে একটি জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক সংগঠন বলে দাবি করে, এবং এর সম্মুখ সংগঠন, বিজেপিও গর্ব করে যে, তারাই দেশের একমাত্র আদর্শ জাতীয়তাবাদী দল। উপরন্তু, ২০১৪ সালে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকে আরএসএস-বিজেপি আদর্শ জাতীয়তাবাদের শংসাপত্র বিতরণের জন্য স্বঘোষিত সংস্থা হয়ে উঠেছে। কে জাতীয়তাবাদী আর কে নয়, সে’বিষয়ে তাদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত!

পুলওয়ামা হামলার ঘটনা প্রসঙ্গে জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন রাজ্যপাল সত্যপাল মালিক এই দাবির বাস্তবতা এখন জনগণের সামনে উন্মোচিত করেছেন। তবুও, আরএসএস-বিজেপি দেশপ্রেমী-জাতীয়তাবাদী হওয়ার ভান করে।

নিজেদের সৎ দেখানোর জন্য বিজেপি’কে দুর্নীতিবিরোধী বিজ্ঞাপন ও প্রচারে ব্যাপক বিনিয়োগ করতে হয়েছে! প্রধানমন্ত্রী নিজেই স্লোগান দিয়েছেন, ‘না খাউঙ্গা, না খানে দুঙ্গা’ (ঘুষ নেব না, অন্য কাউকে নিতেও দেব না)। দেশের ব্যাঙ্ক থেকে যারা লাখ লাখ বা কোটি টাকা লুট করেছে তারা খোদ প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ প্রিয়জন। এখন তাদের হাতেই দেশের সমস্ত সম্পদ তুলে দেওয়া হচ্ছে।

গত কয়েক বছরে এমন অনেক ঘটনা আমাদের সামনে এসেছে যা প্রমাণ করে যে, যারা দেশকে বিভক্ত ও লুট করে, দেশের সম্পদ আত্মসাৎ করে ও গণতন্ত্রকে চূর্ণবিচূর্ণ করে, তারা সবাই বিজেপির বড় আপন এবং প্রিয়।

সম্প্রতি ডিরেক্টর অব রিসার্চ অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের প্রধান, বিজ্ঞানী প্রদীপ কুরুলকরের ঘটনাটি আমাদের সামনে এসেছে। পাকিস্তানে সংবেদনশীল তথ্য সরবরাহের জন্য সন্ত্রাসবিরোধী দল (এটিএস) তাকে গ্রেপ্তার করেছিল। গ্রেফতারের সময় প্রদীপ কুরুলকর ডিআরডিও’র গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থার পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ার্স) ছিলেন। যদি তিনি গ্রেপ্তার না হতেন, তাহলে আগামী নভেম্বরে তিনি অবসরে যেতেন। প্রদীপ কুরুলকর একজন অসামান্য বিজ্ঞানী হিসেবে বিবেচিত। আমরা সবাই জানি যে ডিআরডিও শুধু কোনো রাষ্ট্রীয় সংস্থা নয়; এটি একটি প্রতিরক্ষা সংস্থা যা প্রতিরক্ষা স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় নতুন কৌশল এবং ডিভাইসগুলি গবেষণা এবং নতুন ডিভাইসের বিকাশ করছে। একজন প্রবীণ বিজ্ঞানীর পক্ষে দেশের প্রতিরক্ষা গোপনীয়তা অন্য দেশের সাথে শেয়ার করা কোনও সাধারণ ঘটনা নয়।

কে এই প্রদীপ কুরুলকর যিনি দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থার অভ্যন্তরে, আরাম করে বসে অন্য দেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সম্পর্কিত তথ্য শেয়ার করছেন? পুনে থেকে আসা প্রদীপ কুরুলকরের বাবা, পিতামহ, প্রপিতামহ সকলেই সক্রিয়ভাবে আরএসএসের সঙ্গে যুক্ত। প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠানে একটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি পদে অধিষ্ঠিত থাকা সত্ত্বেও, তিনি আরএসএস দ্বারা আয়োজিত বিভিন্ন কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন। এমনকি, শীর্ষস্থানীয় সারসঙ্ঘ চালকের সাথে মঞ্চ ভাগ করেছিলেন। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে আরএসএসের তাবেদারির পর, এখন আমাদের সামনে পর্দার আড়াল সরিয়ে ঘোষণা করা হচ্ছে যে তিনি আসলে জাতীয়তাবাদী সংগঠনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন।

একজন শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞানী দেশের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তি করতে গিয়ে ধরা পড়েছেন, কিন্তু টিভি উপস্থাপকেরা যারা কিনা নিজেরাই স্ব-প্রত্যয়িত জাতীয়তাবাদী এবং যারা অন্য সময় জাতীয় নিরাপত্তা এবং জাতীয়তাবাদের বিষয়ে সোচ্চার, তারা এ’বেলায় আপেক্ষিক নিরবতা বজায় রেখেছেন। দর্শকদের জন্য চাঞ্চল্যকর তথ্য ‘উন্মোচন’ করার জন্য কোনো প্রাইম টাইম বিতর্ক বা বিশেষ অনুষ্ঠান ছিল না। কেন? কারণ গুপ্তচরবৃত্তির দায়ে গ্রেফতার হওয়া বিজ্ঞানী একই স্বঘোষিত জাতীয়তাবাদী শিবিরের সদস্য, যার সামনে বেশিরভাগ মিডিয়া ইতিমধ্যেই বিকিয়ে গেছে।

তবে প্রদীপ কুরুলকরের ঘটনা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এ’বছর জম্বু-কাশ্মীরের পুলিশ, কিরণ প্যাটেল নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছিল। যিনি ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে কাশ্মীরে ‘ভ্রমণ’ করছিলেন এবং নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাথে যুক্ত একজন কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিয়েছিলেন। তাকে অতিরিক্ত নিরাপত্তা দেওয়া হয়। বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকার ব্যবস্থা করা হয়। এছাড়াও, সরকারি খরচে তিনি শুধুমাত্র রাজ্যের সংবেদনশীল এলাকাগুলোয় সফর করছিলেন না, বহু মাস ধরে সামাজিক মাধ্যমে তার ‘অফিশিয়াল’ সফরের ভিডিও ছড়ানোর কাজও করছিলেন। এই ঘটনা আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থার পাশাপাশি তার রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতার উপর গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। কিরণ প্যাটেলের গ্রেপ্তারের পর সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন অনেক ছবি উঠে এসেছিল যা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সহ বিজেপির অনেক বড় নেতার সাথে কিরণ এবং তাঁর পরিবারের ঘনিষ্ঠতার সম্পর্ককে স্পষ্ট করে। যখন সেই ছবিগুলি সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছিল, তখন অমিত শাহ বা ভারত সরকার কেউই সেই ছবিগুলির দ্বারা প্রকাশিত সত্যকে অস্বীকার করে সঠিক কোনও বিবৃতি জারি করার জন্য মাথা ঘামায়নি। মজার বিষয় হল, কিরণ প্যাটেলের সাথে আরও দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। পরবর্তীতে তাদের কোনও কারণ ছাড়াই মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। এদের মধ্যে একজন হলেন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রীর অতিরিক্ত জনসংযোগ আধিকারিক হিতেশ পান্ডের ছেলে অমিত পান্ডে, যিনি ২০০১ সাল থেকে গুজরাট সরকারের হয়ে কাজ করছিলেন৷ তিনি তার ছেলের বিতর্কিত গ্রেপ্তার এবং মুক্তির পরে পাবলিক রিলেশনস্ অফিসারের পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন৷ অমিত পান্ডে এবং তার বন্ধু জয় সীতাপাড়াকে যেভাবে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, জম্বু-কাশ্মীর পুলিশের হিতেশ ও সীতাপাড়াকে নির্দোষ প্রমাণের যুক্তি, এবং একইসাথে হিতেশ নিজেই এই পুরো পর্বটি সম্পর্কে সন্দেহ আরও বৃদ্ধি করে।

কিরণ প্যাটেলের পক্ষে জেড সুরক্ষার অধীনে সংবেদনশীল এলাকায় ভ্রমণ করা কীভাবে সম্ভব হল? আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এতটাই নির্দোষ এবং অসহায় যে, এখানে কাউকে সত্যতা যাচাই না করেই প্রোজেক্ট ম্যানেজমেন্ট অফিস থেকে পাঠানো কারোর জন্য লাল গালিচা ফেলে দেবে — এও বিশ্বাসযোগ্য? যে ব্যক্তি আইএএস এবং আইপিএসের মধ্যে পার্থক্য জানেন না তিনি তাদের কয়েক মাস ধরে বোকা বানাতে পারবেন? অঙ্ক এখানে কিছুতেই মিলবে না। কিরণ প্যাটেলকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ছবিতে দেখা গেছে। তিনি বিজেপি এবং আরএসএসের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। বিভিন্ন কর্মসূচি, প্রচার এবং সমাবেশের আয়োজন করেছেন। যদি মিডিয়া রিপোর্টগুলি বিশ্বাস করা হয় তবে বলা যায়; রাজস্থানে আরএসএস প্রচারক, ত্রিলোক সিং কিরণকে জম্মু ও কাশ্মীরে প্রাথমিক যোগাযোগ তৈরিতে সহায়তা করেছিলেন।

এই প্রতারণার সাথেও নিঃসন্দেহে আরএসএসের সংযোগ রয়েছে। মিডিয়ার বড়সড় মাথারা এধরনের বিষয়গুলোতে তুলনামূলকভাবে নিশ্চুপ থাকার পন্থা নিচ্ছেন। যার থেকে বোঝা যায়, এই পর্বে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা প্রায় সকলেই তাদের পূজনীয়। তাই মুখ বন্ধ রাখুন।

কিরণ প্যাটেলের ঘটনাটি যখন মনের মধ্যে টাটকা, তখনই ঘটল অনুরূপ আরও একটি ঘটনা। এই নতুন নাটকের নতুন চরিত্রটি ছিলেন সঞ্জয় শেরপুরিয়া, যিনি উত্তরপ্রদেশ এসটিএফ দ্বারা গ্রেপ্তারের পরে সকলের কমবেশি পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন। পিএমও’র ঘনিষ্ঠ বলে দাবি করার পর তার এনজিও যুব গ্রামীণ উদ্যোক্তা ফাউন্ডেশনের জন্য ‘অনুদান’ হিসাবে বড় শিল্পপতিদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ সংগ্রহের অভিযোগ রয়েছে। এই এনজিও’র উপদেষ্টা বোর্ডে অবসরপ্রাপ্ত আইএএস, আইপিএস এবং প্রাক্তন সামরিক কর্মকর্তারা অন্তর্ভুক্ত। তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবতের সাথে তার ছবি দেখিয়ে তাদের ঘনিষ্ঠতা নিয়ে গর্ব করেন। সঞ্জয় দৈনিক ভাস্কর ও অমর উজালার মতো দৈনিকে কলাম লেখেন। গ্রেপ্তারের পর টেলিভিশনের সাংবাদিকদের কাছে তাঁর বই উপস্থাপনের ছবি ভাইরাল হয়। তিনি একটি বই লিখেছেন ‘দিব্য দৃষ্টি মোদী’ (মোদির ঐশ্বরিক দৃষ্টি)। ২০১৯ সালে বারাণসীতে নরেন্দ্র মোদীর নির্বাচনী প্রচারের অংশ ছিলেন! এমনকি সিবিআই’এর আধিকারিকরা যারা সুবিধামতো ট্রান্সফার-পোস্টিং চান তারা ‘শীর্ষ নেতৃত্বের’ সামনে তাদের নাম সুপারিশ করার জন্য সঞ্জয়ের কাছে যেতেন এবং কর্মীদের দাবি অনুযায়ী তিনি সর্বদা সহায়ক ছিলেন! সংবাদপত্রের রিপোর্ট অনুসারে এসটিএফ জানিয়েছে যে, এই মামলাটি এখন আইবি এবং ইডি দ্বারা তদন্ত করা হচ্ছে। শীর্ষস্থানীয় এজেন্সিগুলোকে ঠগী-বৃত্তির খোলা ও বন্ধ কেসগুলো কেন দেওয়া হয়না তা কারও বোধগম্য নয়! একটা বিষয় স্পষ্ট যে এই মামলার সঙ্গে আরএসএস, বিজেপি এবং পিএমও’র কিছু স্পষ্ট যোগসূত্র রয়েছে!

২০২০ সালে দক্ষিণ কাশ্মীরের কুলগাম এলাকায় গ্রেপ্তার হওয়া জম্বু কাশ্মীর পুলিশের ডিএসপি দবিন্দর সিং’এর নাম মানুষ হয়তো ভুলে গেছে। গ্রেপ্তারের সময় দবিন্দর সিং’এর সঙ্গে সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত এবং লস্কর-ই-তৈবা ও হিজাবুল মুজাহিদিনের সঙ্গে যুক্ত দুই ব্যক্তি ছিলেন। দবিন্দর সিংয়ের গাড়ি থেকে দুটি একে-৪৭ রাইফেলও উদ্ধার করা হয়েছে। পার্লামেন্ট হামলা মামলায় উঠেছিল দবিন্দর সিংয়ের নাম। আফজাল গুরু, যাকে এই মামলায় মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল, তার আইনজীবীকে একটি চিঠিতে লিখেছিলেন যে, বদগামের হুমহুমায় নিযুক্ত একজন ডিএসপি তাকে সংসদে হামলার সাথে জড়িত মোহাম্মদকে দিল্লীতে নিয়ে যেতে এবং একটি বাড়ি ও একটি গাড়ি কিনতে বাধ্য করেছিলেন। দবিন্দর সিং সন্ত্রাসীদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য বিভিন্ন সিমের নম্বর ব্যবহার করতেন। গ্রেফতারের সময় তিনি গ্রেফতারকারী ডিআইজি’কে বলেছিলেন, “স্যার, এটা একটা খেলা। নষ্ট করবেন না।” সন্ত্রাসী যোগসাজশের সাথে একজন ডিএসপি কী খেলা খেলছিলেন স্ব-প্রস্তাবিত চরম জাতীয়তাবাদী সরকারের অধীনে? আর কেন সেই খেলার সম্বন্ধে আমাদের কিছুই জানানো হল না? কেন দবিন্দর সিং’এর বিষয়টি ধীরে ধীরে স্মৃতির প্রান্তের বাইরে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল? দেশপ্রেমের সার্টিফিকেটের স্বঘোষিত পরিবেশকদের ছাড়া আর কাকে আমরা এই প্রশ্নগুলো করব?

বিজ্ঞানী, পুলিশ অফিসার, ভুঁয়ো প্রশাসনিক অফিসার এবং দালাল ছাড়াও বিজেপির কিছু অভ্যন্তরীণ ব্যক্তি পাকিস্তানের জন্য গুপ্তচরবৃত্তি করতে গিয়ে ধরা পড়ে। পাকিস্তান গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই’এর জন্য গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭-তে মধ্যপ্রদেশ এটিএস ১১ জনকে গ্রেপ্তার করেছিল। তাদের একজন ধ্রুব সাক্সেনা, ভারতীয় জনতা যুব মোর্চার ভোপাল জেলার আইটি সেলের দায়িত্বশীল। এই জাতীয় দলের কর্মকর্তারা অন্যান্য দেশে সংবেদনশীল তথ্য সরবরাহ করে জাতীয় নিরাপত্তার সাথে আপোষ করেছে। এতকিছুর পরেও নির্লজ্জ বিজেপি নিজেদের সাচ্চা জাতীয়তাবাদী প্রমাণের জন্য চারিদিকে ঢাক পিটিয়ে চলেছে।

২০২১ সালে যখন একটি ক্রুজ জাহাজ কর্ডেলিয়া থেকে শাহরুখ খানের ছেলে আরিয়ান খানকে গ্রেপ্তারের খবর প্রকাশিত হয়েছিল তখন মিডিয়া চাঞ্চল্য তৈরি করতে কোনও সময় ব্যয় করেনি। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ব্যুরোর জোনাল ডিরেক্টর সমীর ওয়াংখেড়েকে একজন নায়ক হিসেবে প্রজেক্ট করা হয়েছিল, যিনি চলচ্চিত্র শিল্পে মাদক ব্যবহারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে অনেক দূর পর্যন্ত যেতে পারেন।

প্রাক্তন নারকোটিক্স ব্যুরো অফিসার ওয়াংখেড়েকে মিডিয়া নায়ক বানানোর দু’বছর পর, তিনি এখন সরব। খবর সূত্রে জানা গেছে, ছেলের মুক্তির জন্য শাহরুখ খানের কাছে ২৫ কোটি টাকা ঘুষ চেয়েছিলেন ওয়াংখেড়ে। ঘটনা জটিল হওয়ায় ওয়াংখেড়ে এখন সিবিআই তদন্তের মুখোমুখি।

এখানেই শেষ না! ওয়াংখেড়ের বিরুদ্ধে জমি, আবাসন এবং গয়না সহ তার পরিচিত আয়ের উৎসের তুলনায় অসম সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও, যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ড, পর্তুগাল, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং মালদ্বীপে তার বিদেশী সফর (যেখানে তিনি ৫৫ দিন ছিলেন) স্ক্যানারের আওতায় রয়েছে। তিনি দাবি করেছেন যে, বিদেশ ভ্রমণের জন্য তিনি মোট ৮.৭৫ লক্ষ টাকা খরচ করেছেন। কিন্তু রিপোর্টে উল্লিখিত টাকার পরিমাণে দেখা যাচ্ছে এই গন্তব্যগুলির শুধুমাত্র বিমান ভাড়া সমীর ওয়াংখেড়ের দেওয়া হিসেবের চেয়ে বেশি।

ওয়াংখেড়ে হয়তো মোদীর কাছ থেকেই এসব শিখেছেন, তাই এখন জাতীয়তাবাদী হওয়ার ঢাল সামনে রেখেছেন! তিনি আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেছেন বলেছেন যে, তিনি একজন সত্যিকারের জাতীয়তাবাদী-দেশপ্রেমী বলেই তাকে লক্ষ্য বানানো হচ্ছে। জাতি জানতে চায় — কেন মোদীজি এখনও তাকে জাতীয়তাবাদের সার্টিফিকেট দিয়ে আইনের হাত থেকে বাঁচাননি? কিন্তু এও ভাবার বিষয়; প্রদীপ কুরুলকারের মতো প্রত্যয়িত জাতীয়তাবাদীরা যখন আইনের সুরের মুখোমুখি হচ্ছেন তখন সমীর ওয়াংখেড়ে আর কে!

বিজেপি-আরএসএসের স্কুল থেকে শিক্ষা নেওয়া জাতীয়তাবাদীদের ক্রমবর্ধমান দেশবিরোধী কার্যকলাপ, যেমন দবিন্দর সিং থেকে কুরুলকর, দেখায় যে সার্টিফিকেটটি আসলে কী! প্রাক্তন RAW অফিসার বি রমনের ২০০৭ সালে প্রকাশিত বই ‘The Kaoboys of R&AW’তে এই বিষয়ে কিছু মজার গল্প রয়েছে। ১৯৮৯ সালে যখন বিজেপি ভিপি সিং’এর নেতৃত্বে জনমোর্চাকে বাইরে থেকে সমর্থন দিয়েছিল, তখন তৎকালীন মন্ত্রিপরিষদ সচিব, রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং’কে জম্বু ও কাশ্মীরে আরএসএস সদস্যদের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য বলেছিলেন। যদিও রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং প্রাথমিকভাবে দ্বিধাগ্রস্ত ছিল, তবে শেষমেশ প্রচণ্ড চাপের মধ্যে প্রত্যাবর্তন করে এবং প্রশিক্ষণ পরিকল্পনা তৈরি করতে জম্বুতে আরএসএসের সাথে একটি বৈঠক করে। ভিপি সিং এবং বিজেপির মধ্যে দূরত্ব তৈরি হওয়ায় পরবর্তীকালে পরিকল্পনাটি বাতিল করা হয়েছিল। তবে এই ঘটনাটি প্রমাণ করে যে, বিজেপি ক্ষমতায় না থাকলেও আরএসএস’কে সশস্ত্র করতে কত কী করতে পারে!

বর্তমানে বিজেপি ক্ষমতায় থাকার কারণে বি রমনের গল্পগুলি আমাদের কাছে এক একটি দুঃস্বপ্নের সতর্কবাণী হয়ে উঠেছে। আমরা যদি দবিন্দর সিং-প্রদীপ কুরুলকারের মতো ‘প্রত্যয়িত জাতীয়তাবাদী’দের দেশবিরোধী কার্যকলাপের দিকে তাকাই, তাহলেই আমরা ভারতে ঘনিয়ে আসা বিপদকে কাছ থেকে দেখতে পাব।

- ইন্দ্রেশ মাইখুরী,
লিবারেশন, মে ২০২৩
(ভাষান্তরঃ ত্রিয়াশা লাহিড়ী)

খণ্ড-30
সংখ্যা-21