সন্ত্রাস যখন হয়ে ওঠে নির্বাচনী কৌশল
an-election-strategy

ক্ষমতার চোখ রাঙানি দেখেছে রাজ্যের আপামর জনতা। এবার দেখল অসংযত ভাষায় কান্ডজ্ঞানহীন মুখ্যমন্ত্রীর হুমকি। তিনি খোলাখুলি তাঁর দলের কর্মীবাহিনীকে ‘প্রতিরোধ’ করার ডাক ছাড়লেন আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে। বোঝাই যাচ্ছে, ‘প্রতিরোধ’এর নামে বিরোধী দলের কর্মীদের প্রতি কী ধরনের রাজনৈতিক আচরণ করতে হবে, তার একটা ইঙ্গিত দিলেন মাত্র। রাজ্যবাসী এবার দেখলেন, ক্ষমতার হিংস্র দাপট কাকে বলে।

কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে তরজার মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী আরেকটা ডাক দিলেন। কাকদ্বীপের এক জনসভায় মহিলাদের কাছে আবেদন রাখলেন, কেন্দ্রীয় বাহিনীকে হাতা খুন্তি নিয়ে যেন আলুভাজা ভাত আলুসেদ্ধ খাওয়ানো হয়। সেই একই তৃণমূলী শব্দবন্ধ, যারজন্য কুখ্যাতি কুড়িয়েছিলেন অধুনা তিহাড় জেলে বন্দি অনুব্রত মন্ডল। বিগত পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে তাঁর সেই সমস্ত হুমকি মেশানো মন্তব্য — উন্নয়ন রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকবে, চড়াম চড়াম, গুড় বাতাসা ইত্যাদির সাথে এবার সংযোজিত হল মুখ্যমন্ত্রীর শব্দবন্ধ — হাতা খুন্তি, আলুভাজা ভাত আলুসেদ্ধ।

যারা রয়েছেন রাজ্য ক্ষমতার কেন্দ্রভূমিতে, যাদের হাতে নিয়ন্ত্রিত হয় রাজ্য পুলিশ প্রশাসন-রাজ্য নির্বাচন কমিশন, সেই শাসক পার্টি যখন প্রতিরোধের ডাক দেয় তখন তার পরিণাম যে কী হবে তা ভাবলেও শিউরে উঠতে হয়। ক’টা লাশ কটা বুথে পড়লে তবেই বলা যাবে যে রাজ্য সন্ত্রাস দীর্ণ হয়ে উঠেছে, এই যুক্তির ধারা নির্বাচনের প্রাক্কালে রাজ্যকে যে ঠেলে দেবে না বধ্যভূমিতে তার নিশ্চয়তা কি দেবেন মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী? রাজ্যজুড়ে সন্ত্রাসের আবহ তৈরি করতে কতজনকে খুন করা হল সেই সংখ্যা গুরুত্বপূর্ণ নয়, মনোনয়ন চলাকালীন দু-একটা খুন সাধারণ প্রার্থীদের মধ্যে এমন এক সন্ত্রাসের আবহ তৈরি করে দেয় যে বুক চিতিয়ে অনেকেই তার মোকাবিলা করতে না পেরে নীরবে প্রার্থীপদ প্রত্যাহার করে নেন। সন্ত্রাস এখানে ব্যবহৃত হচ্ছে এক অস্ত্র হিসাবে, রাজনৈতিক কৌশল হিসাবে। বিরোধীদের ভয় দেখিয়ে ঠান্ডা করে রাখতে।

দেখা গেল, ইতিমধ্যেই অনেক আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় শাসক পার্টি তার জয় হাসিল করেছে। মনোনয়ন জমা দেওয়ার পর বহু জায়গায় প্রত্যাহারের জন্য লাগাতার হুমকি দেওয়া হচ্ছে শাসক পার্টির তরফ থেকে। নির্বাচনের দিনে, তৃণমূলের তল্পিবাহক পুলিশ প্রশাসন কতটা আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পারবে তা নিয়ে গোটা রাজ্যবাসী সন্দিহান।

রাজ্য সরকারের ক্রীড়নক নির্বাচন কমিশন তড়িঘড়ি নির্বাচনের নির্ঘন্ট ঘোষণা করল। আইনের কেতাবী নিয়ম অনুযায়ী এই নির্ঘন্ট প্রকাশ করা হয়েছে তা যতই বলুক না কেন কমিশন, এর অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্যই ছিল বিরোধীদের অপ্রস্তুতে ফেলা। তৃণমূল এবার নতুন কৌশল নিয়ে কদিন পরে এক-দুদিনেই হাজার হাজার মনোনয়ন দাখিল করতে গিয়ে কার্যত মনোনয়ন কেন্দ্রগুলোকে নিজেদের কব্জায় নিয়ে নেয়। এর পর শুরু হল হুমকি। মনোনয়ন তুলে নেওয়ার। নির্বাচন সাঙ্গ হওয়ার পরের কুনাট্য দেখার অপেক্ষায় এখন রাজ্যবাসী।

সুপ্রিম কোর্ট কলকাতা হাইকোর্টের কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়নের পক্ষেই রায় বহাল রাখল। রাজ্য পুলিশ প্রশাসনের উপর অনাস্থাজনিত কারণ থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনী বা বিচারবিভাগের উপর মুখাপেক্ষীতা রাজ্য প্রশাসনের পক্ষে খুবই অশনি সংকেত। দুর্নীতির অভিযোগে আপাদমস্তক ক্ষত বিক্ষত রাজ্য সরকার, তাবড়তাবড় নেতা- মন্ত্রী জেলখানায়, নানা গোষ্ঠী কোন্দলের অন্তর্দ্বন্দ্বে জর্জরিত তৃণমূল যে আগামী বছরের লোকসভা নির্বাচনের আগে সংগঠিত এই পঞ্চায়েত নির্বাচনে গ্রাম বাংলায় নিজেদের ঘাঁটি ধরে রাখতে যে আপ্রাণ চেষ্টা চালাবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

খণ্ড-30
সংখ্যা-20