খবরা-খবর
পঞ্চায়েত নির্বাচনে সন্ত্রাস, হত্যা, গণনায় কারচুপির বিরুদ্ধে ডেপুটেশন
counting-in-panchayat-elections

১৩ জুলাই সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের পক্ষ থেকে অভিজিত মজুমদার রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার সিনহার কাছে এক স্মারকলিপিতে জানান — আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে আপনাকে অবহিত করছি, এবারে পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচন এক অভূতপূর্ব সন্ত্রাসের চালচিত্র হাজির করেছে। সমগ্র দেশে এই ছবি বিরল।

নির্বাচনের ঘোষণা, মনোনয়ন পত্র দাখিলে অব্যবস্থা, মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারে বিরোধী প্রার্থীদের জোরজবরদস্তি নাম প্রত্যাহার করানো, নির্বাচনের দিন ভয়ংকর সন্ত্রাস, কেন্দ্রীয় বাহিনী-রাজ্য পুলিশের নিষ্ক্রিয় ভূমিকা, পক্ষপাতিত্ব, বুথ দখল, ছাপ্পা ভোট, প্রাণহানি ইত্যাদি ঘটেছে।

গণনার দিন গণনা কেন্দ্র থেকে বিরোধী দলের প্রার্থী, এজেন্টদের অপহরণ করা থেকে শুরু করে মারধর, কাউন্টিং এজেন্টদের গণনা কেন্দ্রে ঢুকতে না দেওয়া, গণনা কেন্দ্রের ভিতরেই নতুন করে ছাপ্পা দেওয়া, ব্যালট লুট, জয়ী প্রার্থীর শংসাপত্র ছিঁড়ে দিয়ে শাসকদলের প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা ইত্যাদি সবই স্থানীয় প্রশাসনিক আধিকারিকদের উপস্থিতিতে ঘটেছে, যা নিরপেক্ষ নির্বাচন, সর্বোপরি গণতান্ত্রিক রীতিনীতির পরিপন্থী। পরিশেষে দক্ষিণ ২৪ পরগণার স্পর্শকাতর ভাঙর-২ নং ব্লকের কাঁঠালিয়া জেলা পরিষদ আসনে আইএসএফ প্রার্থীর জয়লাভ ঘোষণা, পরবর্তীতে শাসকদলের প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা নির্বাচনী বিধি অবজ্ঞার এক ভয়ংকর নিদর্শন। ঘটনার জেরে বিক্ষোভ, সংঘর্ষ, গুলিতে ৩ জনের মৃত্যুর ঘটনা হাড় হিম করা সন্ত্রাসের বাস্তবতাকে প্রমান করে।

আমরা নির্বাচনের আগে, নির্বাচনের দিন, ভোট গণনার দিন জেলাগুলোর বিশেষ পর্যবেক্ষক, ব্লক পর্যবেক্ষক ও আপনার দপ্তরকে বিধিবদ্ধ প্রক্রিয়ায় অভিযোগপত্রের মাধ্যমে বারবার অবহিত করেছি। আমরা কয়েকটি জেলার কয়েকটি ব্লকের ঘটনা জানিয়ে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

১। হুগলি জেলার ধনেখালি ব্লকে আমাদের প্রার্থীদের গণনাকক্ষ থেকে বলপ্রয়োগ করে বের করে দেওয়া হয়, একজন প্রার্থীকে শারীরীকভাবে নিগ্রহ করা হয় ও অন্যান্য কাউন্টিং এজেন্টদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।

২। পূর্ব বর্ধমান জেলার কালনা ও মন্তেশ্বর ব্লকে ভোটগ্রহণের দিন আমাদের প্রার্থীদের ওপর হামলা চালানো হয় ও গণনার দিন এজেন্টদের বাধা দেওয়া হয়েছে।

৩। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুরে, ঠাকুরপুকুর মহেশতলা ব্লকের রসপুঞ্জ পঞ্চায়েতে আমাদের প্রার্থীকে গণনাকক্ষে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। সমস্ত ঘটনাই শাসক তৃণমূল কংগ্রেস দ্বারা সংগঠিত হয়েছে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের দাবি —

১। পঞ্চায়েত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গ্রাম বাংলায় চলমান সন্ত্রাস অবিলম্বে বন্ধ করতে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

২। কাউন্টিংয়ের দিন ভাঙর সহ সমস্ত সন্ত্রাসের ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
৩। নিবার্চন পর্বে সমস্ত মৃত ব্যক্তির পরিবারগুলোকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে সরকারকে যথাযথ সুপারিশ করতে হবে।

৪। কাউন্টিংয়ের ক্ষেত্রে বিজয়ী প্রার্থীর শংসাপত্র পরিবর্তনের জন্য দায়ী সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক আধিকারিকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে

আশা করি, গুরুত্বের সাথে সমস্ত ঘটনাবলীর নিরপেক্ষ তদন্ত করে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

খণ্ড-30
সংখ্যা-23