চলছে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াই!
restore-democracy

জলঙ্গী নদীর তীর ধরে এক লড়াইয়ের ইতিহাসের জন্ম হচ্ছে। তৃণমূলী গুন্ডা, সমাজবিরোধী, দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের থেকে নিজেদের পঞ্চায়েত, নিজেদের গ্রাম পুনরুদ্ধারের লড়াই চালাচ্ছেন ধুবুলিয়ার নোয়াপাড়া-২ অঞ্চলের মেহনতি মানুষ। সিপিআই(এমএল)-এর নেতৃত্বে চরমহৎপুর, পাথরাদহ, সোনাতলা, কালীনগর অঞ্চলের ক্ষেতমজুর, ছোটো কৃষক পরিবারগুলি এক অসম লড়াই চালাচ্ছেন তৃণমূল-বিজেপি শূন্য পঞ্চায়েত গঠনের লক্ষ্যে। কিছু অঞ্চলে তৃণমূলের সন্ত্রাসের সাথে সাথে আঞ্চলিক স্তরে মোকাবিলা করতে হচ্ছে কংগ্রেসের অপপ্রচারের। গ্রামগুলিতে মূলত ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং পিছিয়ে পড়া বর্গের মানুষের বসতি। বর্তমান সরকার সংখ্যালঘু ও পিছিয়ে পড়া জাতির মানুষের ব্যাপক উন্নয়নের কথা বললেও এই অঞ্চলের সার্বিক পরিস্থিতি বরং তার উল্টো কথাই জানান দেয়। বিগত পাঁচ বছরে উন্নয়নের ধাক্কায় সব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জনজীবন। একশো দিনের কাজ, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার টাকা বা এমনকি রাস্তাঘাট নির্মানের জন্যে বরাদ্দ অর্থ — সর্বক্ষেত্রে দুর্নীতির নজিরবিহীন রেকর্ড রয়েছে তৃণমূলের।

দীর্ঘদিনের জমি সংস্কার ও পুনর্বণ্টনের আন্দোলনের কেন্দ্র এই অঞ্চলগুলিতে পূর্বে পার্টির প্রতিনিধিরাই বারংবার নির্বাচিত হয়েছেন এবং শুষ্ঠভাবে পঞ্চায়েত পরিচালনা করেছেন বেশ কয়েকবার। পার্টি পতাকা ঊর্দ্ধে তুলে জনগণের অধিকার রক্ষায় শহীদ হয়েছেন এই অঞ্চলের লড়াকু নেতৃত্ব কমরেড জালাল, ইউসুফ মোল্লা-সহ বহু কমরেড। সংগ্রামী জনতা সেই ঐতিহ্যকে সামনে রেখে বর্তমানে নিরন্তর লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে আবারো পঞ্চায়েতে লিবারেশনকে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে। এই লড়াইয়ের নির্বাচনী ফলাফল যাই হোক না কেন, এই নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় প্রচার হোক বা প্রার্থী বা মিছিলে মিটিংয়ে জনতার উদ্যমী অংশগ্রহণ — টাকা নির্ভর ক্ষমতার রাজনীতির পরিবর্তে এক বিকল্প রাজনৈতিক অনুশীলন শাসকশ্রেণীর রাজনীতিকে এক চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়।

নির্বাচনে পার্টি মনোনীত প্রার্থীদের মধ্যে যেমন রয়েছেন পার্টির আঞ্চলিক নেতৃত্ব এবং পূর্বে পঞ্চায়েত পরিচালনার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন আনসারুলদা, সালিমাদি, ছবিদি-সহ আরোও অনেকেই। অন্যদিকে রয়েছেন এমন অনেকেই যারা প্রথমবার নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করছেন। তবে বয়স, কর্ম ও অন্যান্য বিভিন্নতার মধ্যেও প্রত্যেক প্রার্থীই একটি সূত্রে সংযুক্ত — প্রত্যেকেই মেহনতি পরিবারের সদস্য যারা পার্টি মতাদর্শের ধারক ও বাহক, এলাকায় জনতার আন্দোলনের সংগঠক।

to-restore-democracy

পঞ্চায়েত নির্বাচনে সোনাতলা অঞ্চলে কমরেডদের এই লড়াইয়ে অংশীদার হিসাবে প্রচারাভিযানে যুক্ত থেকেছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বর্ষা, রাজীব, সাগ্নিকরা বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিয়েছেন শিক্ষা ও সম্মানজনক জীবিকার দাবিতে তাদের লড়াইয়ের কথা। তারা প্রচার করেছেন কমরেড রঞ্জুর হয়ে — রঞ্জু সোনাতলার ৩৭নং বুথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তৃণমূলের বিরুদ্ধে। রঞ্জু পশ্চিমবাংলার লাখ লাখ বেকার যুবকদের একজন যিনি উচ্চশিক্ষার গন্ডি পেরিয়ে মরিয়া চেষ্টা করছেন জীবনধারনের জন্য একটা চাকরি পাওয়ার। বাড়িতে লক্ষ লক্ষ টাকা নেই নেতাদের দেওয়ার জন্যে, তাই চাকরির স্বপ্ন অধরা। তিনি তাই অনেকদিন ধরেই লড়াই করে চলেছেন এলাকার দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের বিরুদ্ধে। এলাকার প্রার্থীরা লড়াই করছেন যুবকরা যাতে সরকারী প্রকল্পে কাজ পান, অঞ্চলের বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো পুনরায় চালু করা যায়, কৃষকরা যাতে ফসলের ন্যায্য দাম আদায় করতে পারেন তার জন্য। তাই যাদবপুর সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সবার শিক্ষা এবং শিক্ষান্তে কাজের দাবিতে আন্দোলনের এক সংযোগ স্থাপিত হয়েছে এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে। তাই ছাত্রছাত্রীরাও উদ্যমের সাথে প্রার্থীদের হয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরেছেন এলাকার মানুষের সমস্যা শুনতে। তারা আসন্ন পঞ্চায়েতে এলাকার প্রাথমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের স্কুলগুলিকে রক্ষা করার প্রয়োজনীয়তা, শিক্ষার বেসরকারিকরণ সহ অন্যান্য বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন এলাকার ছাত্রযুবদের সাথে। ছাত্রছাত্রীদের দুই দফার এই প্রচার এলাকার ছাত্রযুবদের উপর এক সদর্থক প্রভাব বিস্তার করেছে। অনেকে নিজের থেকেই এগিয়ে এসে শুনেছেন কথা, বলেছেন নিজেদের সমস্যার কথা। আবার অনেকেই স্বতঃস্ফুর্তভাবে যোগ দিয়েছেন ছাত্রছাত্রীদের প্রচার টিমের সাথে, সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছেন নিজেদের আত্মীয় বা বন্ধুর বাড়ি – “চলুন ওদেরকে গিয়েও আপনাদের কথা বলুন।”

fighting-to-restore-democracy_0

গ্রামবাংলার এই পরিস্থিতি অবশ্যই দিন বদলের এক ইঙ্গিত দিচ্ছে। সোশাল মিডিয়ায় শুধু নয় বরং বাস্তব পরিস্থিতিতে গ্রাম-শহরের দূরত্ব সরিয়ে মানুষ একত্রিত হচ্ছেন ফ্যাসিবাদী এবং স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে। খাদ্য, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রে দাবিতে শ্রমজীবী মানুষ ছাত্র যুবদের সংগ্রামী ঐক্য ভবিষ্যতের বিকল্প।

- ঋতম মাজি

খণ্ড-30
সংখ্যা-22