গ্রামীণ অকৃষি কর্মকাণ্ডর ক্রমশ বিস্তার, বৈচিত্র্যর সঙ্গেই বাড়ছে তার রাজনৈতিক গুরুত্ব
gradual-expansion-and-diversification

কৃষিক্ষেত্রের পাশাপাশি গ্রামীণ জনগণের একটা বড় অংশ নিযুক্ত রয়েছেন অকৃষি বিভিন্ন ধরনের কর্মকাণ্ডে। এই ক্ষেত্রটি সংখ্যার দিক থেকে শুধু যে বিকাশমান তাই নয়, নানা বৈচিত্র্যেও নিয়ত সমৃদ্ধ হচ্ছে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা এই ক্ষেত্রটির গ্রামীণ রাজনীতিতে অবদান কী, তার সামগ্রিক ও এলাকাভিত্তিক সমীক্ষা ও হস্তক্ষেপ গ্রামীণ রাজনীতিতে প্রভাব সঞ্চারের জন্য বিশেষ প্রয়োজনীয় বলেই মনে করা হয়। কৃষিপ্রধান অঞ্চলে লালিত পালিত হলেও জীবিকাগত বিশিষ্টতার কারণে গ্রামীণ এই অংশটির এক ভিন্ন পরিচিতি সত্তা রয়েছে, সে পরিচিতিও আবার প্রায়ই সমসত্ত্ব কিছু নয়। গ্রামীণ রাজনীতিতে এই অংশটির ভূমিকা বুঝে ওঠার জন্য তাদের সাধারণ ও বিশেষ বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে নিবিড় সংযোগের প্রয়োজন, প্রয়োজন এই ক্ষেত্রটি সম্পর্কে এক সামগ্রিক চেতনা।

২০০৫ সালের জাতীয় আর্থিক গণনা দেখিয়েছিল সে সময় অকৃষি গ্রামীণ অর্থনীতি ক্ষেত্রে প্রায় ৪ কোটি ২০ লক্ষ মানুষ সংযুক্ত ছিলেন। ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে এই ক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার ছিল ৪.৫৬ শতাংশ। বিভিন্ন তথ্য থেকে প্রকাশ পরবর্তীকালেও এই বৃদ্ধিহার বজায় আছে। সেই হিসেবে বলা যায় বর্তমানে এই ক্ষেত্রে নিযুক্ত আছেন প্রায় ৫ কোটি ৭৫ লক্ষ মানুষ। এরমধ্যে রয়েছেন নানারকমের কারখানা, হস্তশিল্প, খাদ্যপ্রক্রিয়াকরণ শিল্প, মেরামতি, নির্মাণ, খনি ও খাদান, পরিবহণ, ব্যবসা, বিভিন্ন ধরনের সামাজিক ও ব্যক্তিগত পরিষেবা ইত্যাদিতে যুক্ত মানুষেরা। বিভিন্ন ধরনের গ্রামীণ অকৃষি কর্মকাণ্ডের কোন কোন ক্ষেত্রে কত শতাংশ মানুষ যুক্ত রয়েছেন ভারত সরকারের ২০০৫ সালের আর্থিক সমীক্ষা তার একটা ছবি তুলে ধরেছে।

উপরের ছবিতে দেখা যাচ্ছে অকৃষি কাজের মধ্যে খুচরো ব্যবসায় যুক্ত মানুষের সংখ্যা সর্বাধিক — ৩৯ শতাংশ, অন্যদিকে পাইকারি ব্যবসায় যুক্ত ২ শতাংশ মানুষ। ম্যানুফ্যাকচারিং ক্ষেত্রে যুক্ত আছেন ২৬ শতাংশ মানুষ, গোষ্ঠীগত, সামাজিক ও ব্যক্তিগত বিভিন্ন পরিষেবায় যুক্ত আছেন ৮ শতাংশ মানুষ। পরিবহণ ক্ষেত্রে যুক্ত আছেন ৪ শতাংশ মানুষ, হোটেল ও রেস্তোরাতেও ৪ শতাংশ। শিক্ষাক্ষেত্রে ৫ শতাংশ মানুষ যুক্ত, স্বাস্থ্য ও সামাজিক কাজে যুক্ত আছেন ২ শতাংশ মানুষ। নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ২ শতাংশ মানুষ, ডাক ও তার বিভাগে ২ শতাংশ, রিয়েল এস্টেটে ২ শতাংশ মানুষ যুক্ত আছেন। ১ শতাংশ মানুষ যুক্ত লগ্নি সংক্রান্ত কারবারে। গ্রামীণ নির্মাণকাজে ১ শতাংশ মানুষ যুক্ত। মোটরগাড়ির বিক্রি, সারাই এর কাজেও ১ শতাংশ মানুষ যুক্ত আছেন। খনি ও খাদানের কাজে ০.৩ শতাংশ এবং গ্যাস, জল, বিদ্যুৎ সরবরাহের কাজে ০.২ শতাংশ মানুষ যুক্ত।

প্রতিটি ক্ষেত্রকে যেসব এলাকায় খুঁজে পাওয়া যাবে তা নয়। পশ্চিমবঙ্গের গ্রামগুলিতে সাধারণভাবে অন্যান্য সব জায়গার মতোই বিপুল সংখ্যক খুচরো ব্যবসার কারবারিকে পাওয়া যাবে। এই ক্ষেত্রটি আবশ্যিকভাবেই গ্রামের সাধারণ অর্থনীতির বিকাশ পরিবর্তনের সঙ্গে সংযুক্ত। গ্রামীণ এই ক্ষেত্রটিতে সংগঠিত বৃহৎ পুঁজি ঢুকতে চাইছে। ভারতের পশ্চিম প্রান্তে ইতোমধ্যেই কোথাও কোথাও ভালো মাত্রায় ‘ই চৌপল’ জাতীয় ক্ষেত্রের বিকাশ ঘটছে, যারা একদিকে কৃষকের ফসল কিনছেন, অন্যদিকে সেই চৌপলের অন্য অংশ থেকে সেই ফসলের দামের একাংশ দিয়ে গৃহস্থালির জিনিস সংগ্রহ করছেন কৃষকরা। প্রথম দিকে আকর্ষণীয় মনে হলেও পরে ফসল সংগ্রহের নীতিটা কৃষকের পক্ষে আর আকর্ষণীয় থাকছে না, কৃষি অর্থনীতির ওপর তা সরাসরি আঘাত হানছে। এই প্রবণতা ইতস্তত সর্বত্রই বিকাশমান। খুচরো ব্যবসার অসংগঠিত ধরনকে আত্মসাৎ করে একচেটিয়া বড় পুঁজির এই ক্ষেত্রে প্রবেশের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রচারের বিশেষ প্রয়োজনীয়তা আছে। বিশেষত ভারতের প্রধান শাসক দলকে উন্মোচনের অনেক হাতিয়ারের এটা অন্যতম। এছাড়া সার, বীজ, কীটনাশক ব্যবসার যে কালোবাজারির ঘটনা মাঝেমাঝেই সামনে আসে, তার বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিরোধ গড়ে তোলা গ্রামীণ রাজনৈতিক কাজের অন্যতম অঙ্গ বলেই বিবেচ্য।

শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বিভিন্ন পরিষেবা মূলক গ্রামীণ কাজে যে অংশটি গ্রামে যুক্ত আছেন, তার একটা ভালো পরিমাণ ঠিকাকরণ অর্থনীতির সামগ্রিক ঠিকাকরণ প্রবণতার সঙ্গে সঙ্গেই ক্রমবর্ধমান। বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে — মিড-ডে-মিল, আশা, অঙ্গনওয়ারী কর্মী বা পার্শ্বশিক্ষকদের যে সামান্য সম্মান দক্ষিণার নামে শোষণ করা হয়, তার বিরুদ্ধে আন্দোলন গ্রামীণ রাজনীতিতে বিশেষ প্রভাব রাখে। এর বাইরেও শিক্ষ ও স্বাস্থ্যক্ষেত্রে স্থায়ী যে সমস্ত শিক্ষক শিক্ষিকা শিক্ষাকর্মী বা চিকিৎসাকর্মীরা আছেন, তারা গ্রামীণ রাজনীতিতে বিশেষ প্রভাব রাখেন। গ্রামীণ ক্ষেত্রে প্রথাগত শিক্ষায় সাধারণভাবে সবচেয়ে এগিয়ে থাকা এই অংশটি সংখ্যায় কম হলেও গ্রামীণ রাজনীতিকে যুক্তি বুদ্ধি দিয়ে প্রভাবিত করেন সবচেয়ে বেশি। বামফ্রন্ট আমলে এই গোষ্ঠীটি তাদের গ্রামীণ রাজনীতিতে মজবুত জোরের অন্যতম শক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এই অংশটির সাথে সাধারণভাবে গোষ্ঠী হিসেবে এবং ব্যক্তিগত স্তরেও রাজনৈতিক সংযোগ স্থাপন করাটা বিশেষ জরুরি।

the-political-importance

বিভিন্ন ধরনের পোলট্রি, ভেড়ি, ডেয়ারী পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় যথেষ্ট পরিমাণে দেখা যায়। ভেড়িগুলির মধ্য দিয়ে প্রচুর টাকার লেনদেন হয় এবং প্রাধান্যকারী রাজনৈতিক শক্তি এগুলির ওপর সবসময়েই নিজেদের নিয়ন্ত্রণ কায়েম রাখতে চায়। ভেড়ির নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে গোষ্ঠী সংঘর্ষ গ্রামীণ রাজনীতির এক নিয়মিত ঘটনা। ভেড়ির অধিকার সংক্রান্ত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচনের উত্তেজনা অনেক সময়েই সাধারণ নির্বাচনের উত্তেজনার কাছাকাছি পৌঁছোয়। এই সংক্রান্ত ক্ষেত্রে দুর্নীতিও মারাত্মক। এই ধরনের দুর্নীতিকে উন্মুক্ত করে এই ক্ষেত্রের স্বাভাবিকীকরণের যে দাবি সাধারণভাবে গ্রামের মানুষের থাকে, সেই আকাঙ্ক্ষার রূপায়ণে সম্ভব মতো সচেষ্ট হওয়া দরকার। পাশাপাশি এই ক্ষেত্রে সতকর্তা না থাকলে কায়েমী স্বার্থর দ্বারা আত্মসাৎ হওয়ার সম্ভাবনাও মারাত্মক। তবে বর্তমান রাজনীতির ভারসাম্যের পরিপ্রেক্ষিতে কয়েকটি বিশেষ ক্ষেত্র ছেড়ে দিলে এই সংক্রান্ত প্রচার আন্দোলনই সাধারণভাবে আমাদের রাজনৈতিক কার্যক্রমের বিষয় হতে পারে।

গ্রামীণ ক্ষেত্রে সরকারি পরিবহনের উপস্থিতি নামমাত্র এবং গ্রামীণ জনগণের একটা ভালো অংশ পরিবহণ ব্যবসার সাথে যুক্ত। এদের ওপর নানা সময়েই নানারকম সরকারি বা আইনি ফতোয়া আসে এবং তার বিরুদ্ধে তাদের দ্রুত সংগঠিত হওয়ার একটা প্রবণতাও দেখা যায়। আমরাও কোথাও কোথাও এ'বিষয়ে কিছু সাফল্য পেয়েছি আর একে বিস্তৃত করার অনেক অবকাশই আছে।

খাদানের বিষয়টি বিশেষ করে পাথর খাদান বীরভূম এবং সংলগ্ন বর্ধমানের কিছু অঞ্চলে ভালো মাত্রায় প্রভাব সঞ্চারী। মজুরি অপেক্ষাকৃত বেশি হওয়ায় খাদানের কাজ ছেড়ে এসব জায়গায় এনআরইজিএ প্রকল্পে কাজ করার প্রবণতা বেশ কম। কিন্তু তুলনামূলক বেশি মজুরির পাশাপাশি এখানে স্বাস্থ্যগত সমস্যা মারাত্মক। এখানে কাজ করার সময় অনবরত ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পাথরকণা শরীরে প্রবেশ করে, উপযুক্ত পোষাক বা আবরণী তো নেই-ই, এমনকী নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং জটিল অসুখে আক্রান্তদের জন্য উপযুক্ত চিকিৎসা পরিষেবার ব্যবস্থা করার আগ্রহ সরকার বা খাদান মালিক কোনও পক্ষেরই নেই। উপরন্তু খাদানগুলির অনেকগুলিই অবৈধ এবং ভালো মাত্রায় মাফিয়া শক্তির নিয়ন্ত্রণে চলে। এখানকার কোনও শ্রমিক আন্দোলনকে দমন করতে মাফিয়া রাজের সক্রিয়তার বিরুদ্ধে প্রশাসন নীরব দর্শকের ভূমিকা গ্রহণ করে এবং বিভিন্ন সময়ে শাসন ক্ষমতায় থাকা রাজনৈতিক দলগুলি ভালো পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে মাফিয়া রাজকে মদত দেয়।

কয়লা এবং বিভিন্ন খনি থেকে আকর তোলার পর তাকে বালি ইত্যাদি দিয়ে বুজিয়ে দেওয়ার যে নিরাপত্তা জনিত বিধি আছে, তাকে নিয়ম করে ভাঙাটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে, আর এই অভ্যাস মারাত্মক সব দুর্ঘটনা ডেকে আনে। খনি ও খাদানের দুর্নীতি, মাফিয়ারাজ এবং এখানকার শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও অন্যান্য সমস্যার পাশাপাশি পরিবেশগত সমস্যা যা স্থানীয় বাসিন্দাদের মাথাব্যথার অন্যতম কারণ — তা নিয়েও সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার দরকার। খনি ও খাদান অধ্যুষিত অঞ্চলে অর্থনৈতিক তাকত সমৃদ্ধ এই ক্ষেত্রটির রাজনৈতিক প্রভাবের দিকটি বিশেষভাবে মাথায় রাখা দরকার।

non-agricultural-activities-i-increasing-with-the-gradual-expansion-and-diversification

বীরভূম ও বর্ধমানের একাংশে খনি ও খাদানের যেমন বিশেষ প্রভাব আছে, তেমনি মুর্শিদাবাদ ও নদীয়ার একাংশে বিড়ি ও জরির কাজ বিশেষ প্রভাব রাখে। বহু মহিলা বিশেষ করে এই কাজে যুক্ত। ঘরে ঘরে বিড়ি তৈরির কাজ যেমন হয়, তেমনি এক্ষেত্রে পতাকা বিড়ির মতো সংগঠিত বড় ক্ষেত্রও বর্তমান। বিড়ি শ্রমিকদের মজুরি নেহাৎই কম, তা নিয়ে আন্দোলনের সুযোগ যথেষ্ট। অতীতে ঝাড়খণ্ড সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে কেন্দুপাতা তোলার শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনের প্রভাবসঞ্চারী দিকটির কথা আমাদের সবারই জানা। বিড়ি, জরি সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের কম মজুরিপ্রাপ্ত শ্রমিকদের নিয়ে আন্দোলনের সুযোগ বরাবরই যথেষ্ট। উত্তরবঙ্গে চা পাতা তোলার কাজে যে সমস্ত মহিলারা যুক্ত আছেন, তাদের কথাও এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায়।

গ্রামীণ অকৃষি ক্ষেত্রে খুচরো ব্যবসার পরেই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ যুক্ত আছেন ম্যানুফ্যাকচারিং ক্ষেত্রে। তার নানা বিভাগ। ক্ষেতমজুরদের পাশাপাশি এরাই গ্রামীণ প্রলেতারিয়েতের বৃহত্তম বাহিনী। তাদের নিয়ে আলাদা করেই বিস্তারিত আলোচনা প্রয়োজন, এখানে সে প্রসঙ্গে তাই আর বিশেষ কিছু বলা হল না।

গ্রামীণ অকৃষি ক্ষেত্রে দু’একটি ক্ষেত্র ছাড়া পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের অংশগ্রহণ এখনো বেশ কম। বিড়ি শ্রমিক বা চা পাতা তোলার শ্রমিক হিসেবে মহিলাদের ভূমিকা বেশি। এছাড়া পোলট্রি এবং বিশেষ করে ডেয়ারীগুলি অনেক সময়েই সমবায় বা গোষ্ঠী দ্বারা পরিচালিত হয় এবং ভালো সংখ্যক মহিলা তার সঙ্গে যুক্ত থাকেন। এগুলির মধ্যে বিশেষত ডেয়ারীর ক্ষেত্রে এক বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে, আমুলের উত্থান যা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছে। দারিদ্র জর্জরিত গ্রাম বাংলায় এরকম কোনও গ্রামীণ প্রকল্প নেওয়ার জন্য সরকারকে উদ্যোগী করতে সামাজিক আন্দোলন শুরু করা যায় কিনা, তার বিচার বিশ্লেষণের অবকাশ আছে। চলতি রাজনীতিক বৃত্তে ঘোরাফেরা করা প্রতিক্রিয়ার রাজনীতির বাইরে নির্মাণের রাজনীতির এক নতুন পরিসরকে তুলে ধরে গ্রামীণ সমাজে নতুন কোনও জোয়ার আনার চেষ্টা বিপ্লবী শক্তিকে অবশ্যই করতে হবে। কোথায় কোথায় তার কী ধরনের অবকাশ আছে, সেটার বিবেচনা জরুরি।

- সৌভিক ঘোষাল

খণ্ড-30
সংখ্যা-22