বিবৃতি
কুর্নিশ
kurnish_0

দিনে বার বার পোষাক না পাল্টে, প্রচার ও বিজ্ঞাপনের চোখ ধাঁধানো আলো থেকে বহু যোজন দূরে নীরবে, নিরলসভাবে, দিনরাত এক করে প্রচারবিমুখ করতালিবিহীন ইসরো’র একঝাঁক বিজ্ঞানী, অসংখ্য কর্মী মহাকাশ গবেষণায় নতুন এক অধ্যায় সূচিত করলেন। ২৩ আগস্টের সন্ধ্যায়, ছ’টা বেজে ৩ মিনিটে চাঁদের রহস্যে ঢাকা দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করল ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র ইসরোর চন্দ্রযান-৩’র ল্যান্ডার বিক্রম। চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সারা বিশ্বে এই প্রথম ভারতই এই কীর্তির মুকুট পরল। দিন কয়েক আগে অল্পের জন্য ব্যর্থ হয় রুশ চন্দ্রযান লুনা-২৫। বেশ কয়েক দশক ধরে ভারতীয় বিজ্ঞানীরা বিজ্ঞানের নানা শাখা প্রশাখায় বিশ্বমানের অসংখ্য অবদান রেখে চলেছেন। যাঁদের হাত ধরে দেশের মহাকাশ অভিযানে এই সফলতা এসেছে, তাঁদের কুর্নিশ।

আগে থেকেই ইসরো জানিয়ে দিয়েছিল সন্ধ্যে ৬টা নাগাদ চন্দ্রযান-৩’র অবতরণ হবে। ওই ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী থাকতে প্রায় একঘন্টা আগে থেকেই দেশবাসী আবেগে উদ্বেল, উৎকন্ঠা ও উদ্বেগ নিয়ে চন্দ্রপৃষ্ঠে নিরাপদ অবতরণের মাহেন্দ্রক্ষণটি দেখার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু, দক্ষিণ আফ্রিকায় ভ্রমণরত প্রধানমন্ত্রী জোহেন্সবার্গ থেকে সেই মুহূর্তের সাক্ষী থাকবেন বলে আগে থেকেই সমস্ত বন্দোবস্ত হয়ে গেছিল। তাই, চন্দ্রপৃষ্ঠে বিক্রমের নিরাপদ অবতরণের দৃশ্য দেখার সুযোগ দেশবাসী পেলেন না। অবতরণের তোড়জোড় শুরু হতেই জোহেন্সবার্গ থেকে মোদীর হাততালি দেওয়া ছবি টিভি’র পর্দা জুড়ে প্রচার হতে থাকল। হাতে জাতীয় পতাকা। সঙ্গে ভাষণ। বিজ্ঞানীদের এই সম্মিলিত সাফল্যকে সংকীর্ণ রাজনীতির স্বার্থে নিজের জমানার সাফল্য হিসাবে পকেটে পোরার উৎকট প্রচার শুরু হল অনতিবিলম্বে। তার মাশুল গুনতে হল দেশবাসীকে। তাঁরা বঞ্চিত হলেন চাক্ষুষ ওই ঘটনার সাক্ষী হতে।

চন্দ্রপৃষ্ঠে এই অবতরণের সাফল্যের নেপথ্যে অসংখ্য যে সমস্ত বিজ্ঞানী ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্মিলিত মেধা বিরাট অবদান রেখেছে, তারমধ্যে কিন্তু রয়েছে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর ‘আতঙ্কপুর’ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। যে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘দেশবিরোধীদের আখড়া’ বলে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা বিধানসভায় দাগিয়ে দেন, বিজেপির এক অসভ্য নেতা, যিনি গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যের সুশীল সমাজকে ‘রগড়ে’ দেওয়ার আস্ফালন করেন, তিনিই এবার যাদবপুরের কৃতি, মেধাবী, দেশের ও রাজ্যের গর্ব ছাত্রসমাজের ‘মাথা ভেঙে গুড়িয়ে’ দেওয়ার নিদান দেন, আর যে উস্কানিমূলক উক্তির জন্য মাননীয়া ন্যূনতম কোন আইনী প্রক্রিয়া শুরু করতে পারলেন না।

যাদবপুর (মুখ্যমন্ত্রীর আতঙ্কপুর) বিশ্ববিদ্যালয়ের একসারি প্রাক্তনী, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং ও ইলেকট্রনিক অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক, গবেষক, স্নাতকোত্তর, স্নাতক স্তরের পড়ুয়া — এক পরিবারের সদস্য হয়ে কাজ করেছিলেন আড়ালে থেকে এই সমগ্র চন্দ্রাভিযানকে সফল করতে।

সমগ্র এই গবেষক বাহিনীকে ফের কুর্নিশ।

খণ্ড-30
সংখ্যা-29