কসবার স্কুল ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত করতে হবে
kosba-school-student
স্কুল কর্তৃপক্ষ ও রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনের উপদেষ্টার সর্বৈব মিথ্যা ও দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্যকে ধিক্কার

আইসা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির পক্ষে থেকে নীলাশিস বসু এবং স্বর্ণেন্দু মিত্র একটি বিবৃতিতে জানিয়েছেন, গত ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, কসবার রথতলার সিলভার পয়েন্ট নামক একটি বেসরকারি স্কুলে শান শেখ নামে দশম শ্রেণীর এক ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। আইসা ও সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের পক্ষ থেকে একটি টিম আজ সেই ছাত্রের বাড়িতে পৌঁছায় এবং পরিবার ও প্রতিবেশিদের সাথে কথা বলে। পরিবারটি কসবা রথতলার মুসলিম পাড়ার বাসিন্দা। ছাত্রের বাবা সেলাইয়ের কাজ করেন ও মা একজন আশা কর্মী। গতকাল স্কুলে মাধ্যমিকের প্রজেক্ট জমা দিতে বাকি সকল পড়ুয়ার সাথে শান’ও উপস্থিত ছিল। দুপুরবেলা স্কুলের দুই শিক্ষিকা তাঁকে পাঁচতলার টিচার্স রুমে নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পরে, পাঁচতলা থেকে একজন নীচে পড়ছে দেখে ছাত্রদের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে ছেলেটিকে রক্তাক্ত অবস্থায় স্কুলের সামনে পাওয়া যায়। তাঁর মুখে বেশ কিছু ক্ষতচিহ্নও মিলেছে। তার সহপাঠী ও পরিবারের মতে ছেলেটির উপর পূর্ব ক্ষোভের বদলা নিয়েছে স্কুল।

পরিবারের বক্তব্য অনুযায়ী, লকডাউন পরবর্তী সময়ে, ফি বৃদ্ধির বিরুদ্ধে এই স্কুলে আন্দোলন গড়ে ওঠে। মৃত ছাত্রের বাবা সেই আন্দোলনে সামনের সারিতে অংশগ্রহণ করেন। সেই থেকেই স্কুল অথোরিটির তরফ থেকে ক্ষোভের শিকার হয় ছাত্রটি। এই ঘটনার পরবর্তী সময়ে স্কুলের তরফ থেকে পুলিশ কিংবা বাড়িতে কোনোরকম খবর দেওয়া হয়নি। সহপাঠীদেরও দাবি, বহু সময় পরে বাড়িতে খবর দেওয়া হয়েছে। আমরা দেখতে পাই, স্কুল থেকে উক্ত ছাত্রের বাড়ির দূরত্ব খুব বেশি নয়। বাড়ির লোককে তার মৃত্যুর ঘটনা সম্পর্কেও ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল, ছাত্রটির সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে।

আজ শিশু সুরক্ষা কমিশনের উপদেষ্টা অনন্যা চক্রবর্তী স্কুলে পৌঁছে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ছেলেটি অবসাদগ্রস্ত ছিল। তার মা ছোটবেলায় ছেড়ে চলে যায়, বাবার সাথেও পড়ুয়ার সম্পর্ক ভালো ছিল না ইত্যাদি। আমাদের কাছে মৃত ছাত্রের পরিবার জানায়, এই তথ্য সম্পূর্ণ ভুয়ো। আমরা আইসা রাজ্য কমিটির পক্ষ থেকে ধিক্কার জানাই শিশু সুরক্ষা কমিশনের এই মিথ্যাচারের মাধ্যমে তদন্তকে দিকভ্রান্ত করার প্রচেষ্টাকে। একই মিথ্যাচার করতে দেখা যায় স্কুল কর্তৃপক্ষকেও। ঘটনার পরে একদিন কেটে গেলেও কোনো এক অজ্ঞাত কারণে এখনো পাওয়া যায়নি ময়নাতদন্তের রিপোর্ট।

আমরা কিছুদিন আগেই দেখেছি, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতে কিভাবে মারা গেছে এক ছাত্র। অন্যদিকে স্কুল কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে দরিদ্র, সংখ্যালঘু পরিবার থেকে উঠে আসা প্রথম প্রজন্মের এক ছাত্রের এই মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় আজ গোটা রাজ্যের শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ গভীরভাবে চিন্তিত। আমরা শান শেখের মৃত্যুর ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্ত চাই। দোষীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে।

টিমে উপস্থিত ছিলেন সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের পক্ষ থেকে বাবুন চ্যাটার্জি, অমলেন্দু ভূষণ চৌধুরী, আইসার পক্ষ থেকে স্বর্ণেন্দু মিত্র ও অনন্যা।

খণ্ড-30
সংখ্যা-31