দিল্লীতে শ্রমিক ও কৃষকদের যৌথ সম্মেলন থেকে ঘোষণা
workers-and-farmers-in-delhi

সংযুক্ত কিষান মোর্চা এবং কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন/ফেডারেশন সমূহের মঞ্চ যৌথভাবে জাতীয় স্তরের এই সম্মেলনের আহ্বান জানিয়েছিল। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে গত ২৪ আগস্ট হাজার-হাজার শ্রমিক ও কৃষক নয়া দিল্লীর তালকোটরা স্টেডিয়ামে সমবেত হয়ে ঐক্য ও অঙ্গীকারের এক অনন্য নজির স্থাপন করে। মোদী সরকারের যে অনিষ্টকর কর্পোরেটপন্থী নীতিমালা দেশের অর্থনীতির বিপর্যয় ঘটাচ্ছে এবং সংবিধানের গণতান্ত্রিক কাঠামোর ওপর আঘাত হানছে, তার বিরুদ্ধে সংগ্রামকে তীব্রতর করে তোলার শপথ সম্মেলনে গৃহীত হয়। সম্মেলন দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করে, “এই ধরনের নির্মম সরকার জাতীয় স্বার্থের বিরোধী, ক্ষমতায় থাকার কোনো অধিকার তার নেই, একে ক্ষমতাচ্যুত করতে হবে।”

সম্মেলনে বক্তারা জানান, সরকারের কর্পোরেটপন্থী কৃষকস্বার্থ-বিরোধী নীতিমালা কৃষি সংকটকে গভীরতর করে তুলছে, এবং তার পরিণামে কৃষকের আয় হ্রাস পাচ্ছে, ঋণগ্ৰস্ততা বাড়ছে এবং কৃষকদের মধ্যে আত্মহত্যার ঘটনা বেড়ে চলেছে। দিল্লি-ঘিরে ১৩ মাস ধরে চলা ঐতিহাসিক কৃষক সংগ্রামের উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, বিজেপি সরকারের চালানো নিপীড়ন এবং ভুয়ো সংবাদ ও মিথ্যা প্রচার সত্ত্বেও কৃষকেরা ঐক্যবদ্ধ অঙ্গীকারে একনিষ্ঠ থেকে আন্দোলনকে সফল করে তুলেছিলেন। মোদী সরকার কৃষকদের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য চালু করা এবং বিদ্যুৎ সংশোধনী বিল প্রত্যাহার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েও শেষ পর্যন্ত চরম বিশ্বাসঘাতকতা করে। কৃষক-শ্রমিকের যৌথ সম্মেলন তাকে ধিক্কার জানায়। তীব্র বেকারি, নিরাপত্তাহীন কাজ এবং মূল্যবৃদ্ধির ইস্যুগুলোতেও সোচ্চার হয়। শ্রমিকদের জন্য মোদী সরকার যে চারটি শ্রম বিধি এনেছে সেগুলিকে ‘শ্রমজীবী জনগণের দাসত্বের আধুনিক বিধি’ বলে অভিহিত করে সেগুলির তীব্র বিরোধিতা করা হয়। ভারতের শ্রমিকেরা কঠোর সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে অর্জিত অধিকারগুলো থেকে বঞ্চিত হয়ে এখন সঙ্গিন পরিস্থিতিতে জীবনধারণে বাধ্য হচ্ছেন।

শিক্ষা ও ব্যাঙ্ক ব্যবস্থা-সহ অর্থনীতির প্রতিটি ক্ষেত্রেরই বেসরকারিকরণ ঘটানোর যে নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে সম্মেলন তার তীব্র বিরোধিতা করে। সামাজিক কল্যাণ ব্যবস্থাকে খর্ব করা এবং সাধারণ জনগণের ওপর গুরুভার করের বোঝা চাপানো দেশকে পশ্চাৎমুখী করে তুলছে আর বড় বড় কর্পোরেটরা পাচ্ছে নানান ছাড় ও দেদার মাগনা উপহার। মোদী সরকার বিভেদমূলক সাম্প্রদায়িক রাজনীতি চালানোর সাথে ধারাবাহিকভাবে দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর ওপর আঘাত হানছে, এবং বিরোধী কণ্ঠস্বরের ওপর ক্রমবর্ধমান দমন চালিয়ে যাচ্ছে।

পেশা এবং অর্থনীতির প্রতিটি ক্ষেত্রে জনগণ বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে নানান যে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন সম্মেলন সেগুলিকে স্বাগত জানায় এবং আরও শক্তি ও সহযোগিতার মধ্যে দিয়ে সেগুলিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করে। সম্মেলন একটি দাবি সনদ পাশ করে যেগুলির মধ্যে রয়েছে : মোদী সরকার ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে শস্য কেনার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তার আইনি নিশ্চয়তা দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনাকে প্রত্যাহার করে নিতে হবে এবং রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রের মাধ্যমে শস্য বীমা প্রকল্প চালু করতে হবে, কৃষকদের দেয় সমস্ত ঋণ মুকুব করতে হবে, মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের ওপর থেকে জিএসটি প্রত্যাহার করতে হবে, খাদ্য নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে, সর্বজনীন শিক্ষা ও স্বাস্থ্য নীতি গ্ৰহণ করতে হবে, জাতীয় ক্ষেত্রে ন্যূনতম মজুরি চালু করতে হবে, বেসরকারিকরণের নীতি বাতিল করতে হবে, সমস্ত শ্রমিকের সামাজিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে, পুরনো পেনশন প্রকল্পকে ফিরিয়ে আনতে হবে, ইত্যাদি।

আগামী কয়েক মাস ধরে নিম্নলিখিত কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানিয়ে সম্মেলন শেষ হয় : 

১) ২০২৩-এর ৩ অক্টোবর অন্ধকার দিবস হিসাবে পালন করে (২০২১-এর এই দিনেই লখিমপুর খেরিতে কৃষক হত্যা হয়েছিল) এবং মূল চক্রী কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অজয় মিশ্র টেনিকে বরখাস্ত করা ও তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার দাবি তুলতে হবে।

২) সারা দেশে ২৬ থেকে ২৮ নভেম্বর রাজ্যে রাজ্যে রাজভবনগুলির সামনে দিন ও রাতের ‘মহাসমাবেশ’ আন্দোলন সংগঠিত করতে হবে।

৩) ২০২৩-এর ডিসেম্বর ও ২০২৪-এর জানুয়ারি মাস ধরে সারা দেশেই সুদৃঢ় ও বৃহৎ আকারে প্রতিবাদ আন্দোলন সংগঠিত করতে হবে।

খণ্ড-30
সংখ্যা-31