খবরা-খবর
বাঁকুড়ায় ফরেস্ট রেঞ্জ অফিসে গণডেপুটেশন
forest-range-office-in-bankura

গত ২৩ আগস্ট ২০২৩ বাঁকুড়া জেলার কমলপুর রেঞ্জ অফিসে আদিবাসী অধিকার ও বিকাশ মঞ্চের পক্ষ থেকে গণডেপুটেশন কর্মসূচি সংগঠিত হয়। ডেপুটেশনের আগে ভালো সংখ্যক মহিলা সহ তিন শতাধিক মানুষের সুসজ্জিত মিছিল কমলপুর বাজার পরিক্রমা করে। মিছিল শেষে রামনিবাস বাস্কে, সহদেব মান্ডি, পানমনি সরেন সহ ৬ জনের এক প্রতিনিধি দল রেঞ্জারের হাতে স্মারকলিপি তুলে দেন। এই রেঞ্জের অন্তর্গত মহেশানা গ্রামের সাঁওতাল পাড়ার মানুষদের সাথে কথা না বলেই তাঁদের দীর্ঘদিন দখলে থাকা চাষ জমিতে বনসৃজনের নামে গাছ লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই ব্যাপারে গ্রামেরই কয়েক জন মাতব্বর যারা সদ্য শেষ হওয়া পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপির পক্ষ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে প্রত‍্যাখ‍্যাত হয়েছে তাঁরা বদলা নেওয়ার জন্য এই মানুষগুলোকে বনের জমি থেকে উচ্ছেদ করে ভাতে মারার চেষ্টা করছে। আর রেঞ্জার এই দ্বন্দ্বকে কাজে লাগাচ্ছে।

প্রতিনিধি দল বলেন মহেশানার জমি ফেরত না দিলে আরো বৃহত্তর আন্দোলন করা হবে এবং তার দায় প্রসাসনকেই নিতে হবে। দ্বিতীয় যে বিষয়টি তুলে ধরা হয় তা হল, লোকসভায় কোনো আলোচনা ছাড়াই সদ্য পাশ হওয়া সংশোধিত বন সংরক্ষণ আইন ফেরত নিতে হবে। ডেপুটেশন শেষে শেষবিকেলে ভিড়জমাট কমলপুর বাজারে সভা করা হয়। সভায় বক্তব্য রাখেন আদিবাসী অধিকার ও বিকাশ মঞ্চের পক্ষে রামনিবাস বাস্কে, সুধীর মুর্মু, সহদেব মান্ডি, অল ইন্ডিয়া জন সুরক্ষা কমিটির পক্ষে অবিনাশ হাঁসদা, ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল থেকে বুদ্ধেশ্বর হাঁসদা এবং সারা ভারত কৃষি ও গ্রামীণ মজুর সমিতির জেলা সভাপতি বাবলু ব্যানার্জি। সভায় সকল বক্তাই বলেন সারা দেশ জুড়ে আজ আদিবাসীদের জমি ও বাসস্থান থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। এজন্য সরকার ও প্রশাসন, বিশেষ করে বিজেপি, স্থানীয় মানুষদের মধ্যে ঝগড়া লাগিয়ে দিচ্ছে। এটা মহেশানায় যেমন দেখা যাচ্ছে তেমনি মনিপুরে কুকিদের উচ্ছেদের জন্য মেইতিদের সাথে প্রাণঘাতী দাঙ্গা লাগিয়ে দিয়েছে। এতেও না পেরে বনের জমি বড় বড় কর্পোরেটদের হাতে তুলে দিতে বন সংরক্ষণ সংশোধিত আইন এনেছে। মহেশানা থেকে শুরু করে দেশের সর্বত্র বিজেপির এই বিভাজন-বিভেদ-দাঙ্গার রাজনীতির বিরুদ্ধে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়াতে হবে।

mass-deputation-at-forest-range-office

শুধু জমি থেকে উচ্ছেদ নয়, আজ শিক্ষার জগত থেকে আদিবাসীদের বের করে দিতে প্রথমে সরকারি হোস্টেল তুলে দিল। আর এখন বলছে ৩০’র কম ছাত্রছাত্রী আছে এমন সব প্রাথমিক স্কুল তুলে দিবে। এতে আদিবাসী ছেলেমেয়েরা স্কুল শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবে। আমাদের মতো গরিব মেহনতি মানুষের শ্রম শোষণের জন্য আমাদের রাজ্যে আজ ২ বছর ১০০ দিনের কাজ বন্ধ, মজুরি বকেয়া। এইসব শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্ণায়ক লড়াই লড়তে হবে। বক্তারা আরো বলেন, কয়েকদিন আগে উত্তর দিনাজপুর জেলার চোপড়া থানার আমবাড়ি চা বাগানে আদিবাসীদের বাসস্থানের জায়গা দখল করার জন্য পুলিশের সামনে জমি মাফিয়ারা তাদের ওপর গুলি চালিয়ে ১২ জনকে আহত করে এবং পুরো বস্তিতে আগুন লাগিয়ে দেয় যার মধ্যে কয়েকজন গুরুতর আহত। এতে ৫০’র বেশি বাড়ি আগুনে পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। এরফলে কয়েক শত আদিবাসী মানুষ আজ নিরন্ন নিরাশ্রয় হয়ে পড়েছে। কিন্তু প্রশাসন সম্পূর্ণ নির্বিকার। আজ পর্যন্ত ‘আদিবাসীপ্রেমিক’ রাজ্য সরকার এঁদের জন্য ত্রাণের কোনো ব্যবস্থাই করেনি। আদিবাসী অধিকার ও বিকাশ মঞ্চ এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করছে এবং অবিলম্বে দোষী জমি মাফিয়াদের উপযুক্ত শাস্তি এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণের দাবি জানাচ্ছে।

খণ্ড-30
সংখ্যা-30