খবরা-খবর
কাঁচরাপাড়ায় রেল ধর্মঘটের শহীদ স্মরণে সভা
martyrs-in-kanchrapara

১৯৬৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর একদিনের রেল ধর্মঘটে ১৫ জন রেল শ্রমিক শহীদ হয়েছিলেন। সেই শহীদদের স্মরণে ইআরইডব্লু এবং এআইআরইসি-র কাঁচরাপাড়া শাখা লোকো গেটে স্মরণসভার আয়োজন করে। সকাল সাড়ে এগারোটায় শহীদ বেদীতে মাল্যদান করে সভার কাজ শুরু হয়। কমরেড রবি সেন তাঁর ভাষণে ১৯৬৮ সালের ধর্মঘটের পরিপ্রেক্ষিত তুলে ধরেন এবং আজকের দিনে মোদি সরকারের বেসরকারিকরণ ও কর্পোরেটের কাছে দেশকে বিকিয়ে দেওয়ার বিরোধিতা করেই এগিয়ে চলার আবেদন রাখেন। নয়া পেনশন স্কিমের মাধ্যমে শ্রমিক কর্মচারি ও সরকারের অর্থ আদানি আম্বানিদের মতো কর্পোরেট ঘরানার হাতে বাজারে খাটবে। তিনি আরো বলেন দেশজুড়ে এনএমওপিএস এবং এফএএনপিএসআর যে পুরনো পেনশন বহাল করার আন্দোলন করে চলেছে তার ফলেই ৭টি রাজ্যে তা চালু হচ্ছে। আগামী ১ অক্টোবর দিল্লির রামলীলা ময়দানে সর্বস্তরে ওল্ড পেনশন স্কিম চালু করার দাবিতে যে ঐতিহাসিক সমাবেশ হতে চলেছে, সেখানে সকলকে অংশগ্রহণ করার আবেদন রাখেন।

এআইআরইসি-র কাঁচরাপাড়া শাখার পক্ষ থেকে কমরেড অসিত সরকার বলেন, আজ যে বোনাস, মহার্ঘ ভাতা পাওয়া যাচ্ছে তা সবই ১৯৬০, ৬৮, ও ৭৪ সালের লড়াই ও শহীদদের অবদান। আমরা ৭৪ সালের ঐতিহাসিক রেল ধর্মঘটের সময়ে সামরিক বাহিনী ও তাদের দোসরদের নৃশংসতা দেখেছি। আজ আবার নতুন লড়াইয়ের সময় এসেছে।

ইআরইইউ কাঁচরাপাড়া শাখার পক্ষ থেকে কমরেড উত্তম সাহা বলেন, আজকের দিনে যখন বেসরকারি হাতে রেলকে পৌঁছে দেওয়াই বর্তমান সরকারের মূল এজেন্ডা তখন রেলে চাকরিরত যুবদের যারা এনপিএস-এর আওতায় আছেন তাদেরকেই বেশি বেশি করে এগিয়ে আসতে হবে এবং গড়ে তুলতে হবে নতুন ধরনের সংগ্রাম। তাহলেই এই প্রশাসনিক হামলা থেকে রেলকে তথা সরকারের এই কর্পোরেটাইজেশনকে রোখা সম্ভব, এছাড়াও তিনি বর্তমান অবস্থায় শূন্য পদ পূরণের বিশেষ করে সেফটি ক্যাটাগরিতে শূন্য পদ পূরণের দাবিকে তুলে ধরেন। সকলেই আগামী ১ অক্টোবর দিল্লির জমায়েতকে সফল করার আবেদন রাখেন।

১৯৬৮ সালের রেল ধর্মঘট

১৯৬৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর কনফেডারেশন অফ সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ, অল ইন্ডিয়া ডিফেন্স ফেডারেশন এবং এআইআরএফ-কে নিয়ে কাউন্সিল অফ জয়েন্ট অ্যাকশন গঠিত হয়, সভাপতি নির্বাচিত হন এম এন যোশি। কমিটির পক্ষ থেকে সরকারের কাছে ১৯ সেপ্টেম্বর ১ দিনের জন্য ধর্মঘটের নোটিশ জমা দেওয়া হয়। ধর্মঘটের দাবিগুল ছিল,

১) মহার্ঘ ভাতা কে বেতন হিসাবে মান্যতা দিতে হবে,
২) প্রয়োজন ভিত্তিক নূন্যতম বেতন দিতে হবে,
৩) মূল্যবৃদ্ধির সম্পূর্ণ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে,
৪) পঞ্চাশ বছরে বাধ্যতামূলক অবসরের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করতে হবে।

সরকার এসমো জারি করে ধর্মঘটকে বেআইনি ঘোষণা করে। (উল্লেখ্য যে সরকার এই এসমোকেই ১৯৭৪ সালের ধর্মঘট দমন করার জন্য এসমা-তে পাল্টে নেয়, অর্থাৎ অর্ডিন্যান্স টা আইনে পরিবর্তন করে) ধর্মঘটে অংশগ্রহণের জন্য ৬ মাস থেকে ১ বছরের জেল অথবা এক হাজার টাকা জরিমানা অথবা একসাথে উভয় শাস্তি প্রয়োগ হবে — এই ধারা এসমো-তে যুক্ত করা হয়। ধর্মঘট সরকারের নৃশংস আক্রমণের শিকার হয়। পুলিশের আক্রমণে ১৫ জন শহীদ হন। এবং দশ হাজার কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়, হাজার হাজার কর্মী সাময়িক বরখাস্ত হন। উপযুক্ত প্রস্তুতি ছাড়াই এই ধর্মঘট শুরু করা হয়েছিল বলে অনেকে মনে করেন।

প্রখ্যাত লেখক ও গবেষক বি ভি করোণিক তাঁর “ইন্ডিয়ান লেবার : প্রব্লেমস অ্যান্ড প্রসপেক্টস” বইয়ে উল্লেখ করেন যে ধর্মঘট সংঘটিত করার আকাঙ্ক্ষার তুলনায় ধর্মঘটে যাবার সিদ্ধান্ত গ্রহণের মধ্য দিয়ে সরকারের উপরে চাপ সৃষ্টি করায় দিকটিই প্রাধান্য মূলক অবস্থানে ছিল।

চিরাচরিত ঐতিহ্য অনুযায়ী এনএফআইআর এবং আইএনটিইউসি অনুমোদিত বিভাগীয় সংগঠনগুলি ধর্মঘট ভাঙার সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। রেল বোর্ড এআইআরএফ-এর মান্যতা প্রত্যাহার করে নেয়, যে সমস্ত এআইআরএফ অনুমোদিত সংগঠন ধর্মঘটে যোগ দেয়নি তাদের মান্যতা বজায় থাকে। অবশ্য পরবর্তীতে এআইআরএফ মান্যতা পুনরুদ্ধার করে।

এই ধর্মঘট ১৯৭৪-এর ঐতিহাসিক রেল ধর্মঘটের পটভূমিকা তৈরি করেছিল এবং এই ৬৮ সালের ১ দিনের ধর্মঘটের ধারাবাহিকতায় ১৯৭৪-এর ২৯ দিনের ঐতিহাসিক ধর্মঘট সংগঠিত হয়েছিল যা তৎকালীন সরকারের পতনের অন্যতম কারণ হয়েছিল।

১৯৬৮-র ১৯ সেপ্টেম্বর ধর্মঘটের ৯ জন শহীদের তালিকা পাওয়া যায়। এঁরা হলেন -- (১) পরেশ সান্যাল (উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেল), (২) রমেন আচার্য (উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেল), (৩) কিষেন গোপাল (উত্তর রেল), (৪) লক্ষণ সাহ (উত্তর রেল), (৫) রাজ বাহাদুর (উত্তর রেল), (৬) দেবরাজ (উত্তর রেল), (৭) গুরদীপ সিং (উত্তর রেল), (৮) গামা (উত্তর রেল), (৯) অর্জুন সিং (সিপিডব্লুডি, নয়া দিল্লি)

খণ্ড-30
সংখ্যা-33