প্রতিবেদন
নতুন তৈরি একগুচ্ছ জাতীয় আইনের প্রভাব প্রসঙ্গে
new-set-of-national-laws

নতুন তৈরি একগুচ্ছ জাতীয় আইনের প্রভাব পড়বে অর্থনীতি, পরিবেশ ও নাগরিক অধিকারের মতো নানা বিষয়ে।

ভারতীয় সংসদের সদ্য সমাপ্ত বর্ষাকালীন অধিবেশনে আমরা একের পর এক বিল উত্থাপন করতে দেখেছি মোদী সরকারকে। ২৩ দিনের অধিবেশন পর্বে লোকসভায় ২০টি ও রাজ্যসভায় ৫টি বিল মিলিয়ে মোট ২৫টি বিল উত্থাপিত হয়েছে এই অধিবেশন পর্বে। তারমধ্যে নতুন পুরনো বিল মিলিয়ে লোকসভায় ২২টি বিল আর রাজ্যসভায় ২৫টি বিল পাশ হয়ে গিয়েছে। ২৩টি বিল বিজ্ঞপ্তি জারীর মধ্যে দিয়ে ইতোমধ্যেই আইনে পরিণত হয়েছে। যে সমস্ত বিল সংসদের বর্ষাকালীন অধিবেশনে তড়িঘড়ি পাশ করানো হয়েছে, সেগুলি এরকম,

  • জীব বৈচিত্র্য (সংশোধন) বিল, ২০২১। এর উদ্দেশ্য বনাঞ্চলের জমি অধিগ্রহণের সময় বনবাসীদের সম্মতির গুরুত্বকে কমিয়ে দেওয়া।

  • মাল্টিস্টেট কো-অপারেটিভ সোসাইটি বিল, ২০২৩। এর উদ্দেশ্য কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নিয়মাবলী তৈরি।

  • তফসিলি উপজাতি আদেশ (পঞ্চম সংশোধন) বিল, ২০২২। ছত্তিশগড়ের তালিকায় আরো কিছু গোষ্ঠীকে উপজাতি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা এর উদ্দেশ্য।

  • তফসিলি উপজাতি আদেশ (তৃতীয় সংশোধন) বিল, ২০২২ বন (সংরক্ষণ) সংশোধনী বিল, ২০২৩। এর উদ্দেশ্য বনভূমির জমি অধিগ্রহণের নিয়মাবলীকে শিথিল করা। বনভূমিতে প্রথাগতকাজের বাইরে কিছু অন্যরকম কার্যকলাপকে স্বীকৃতি দেওয়া।

  • জন বিশ্বাস বিল, ২০২২। এর উদ্দেশ্য ব্যবসা করার সুবিধে বাড়াতে ৪২টি আইনের ১৮৩টি নিয়মকে অপরাধমুক্ত করা।

  • খনি ও খনিজ (উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ) সংশোধনী বিল, ২০২৩। এর উদ্দেশ্য নিলামের মাধ্যমে খনির বন্টন ব্যবস্থাকে প্রসারিত করা।

  • জাতীয় নার্সিং এবং মিড ওয়াইফারি কমিশন বিল, ২০২৩। এর উদ্দেশ্য নার্সিং শিক্ষা ও পরিষেবার মান উন্নত করা।

  • জাতীয় ডেন্টাল কমিশন বিল, ২০২৩। এর উদ্দেশ্য দন্তচিকিত্সার মান নিয়ন্ত্রণের জন্য জাতীয় ডেন্টাল কমিশন এবং বোর্ড গঠন।

  • সিনেমাটোগ্রাফ (সংশোধনী) বিল, ২০২৩। এর উদ্দেশ্য অনলাইন ফিল্ম পাইরেসির সমস্যা দূর করা।

  • উপকূলবর্তী এলাকার খনিজ (উন্নয়নও নিয়ন্ত্রণ) সংশোধনী বিল, ২০২৩। সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলের খনিজ সম্পদের অনুসন্ধান ও বাণিজ্যিক ব্যবহার এর উদ্দেশ্য।

  • সংবিধান (তফসিলি জাতি) আদেশ (সংশোধন) বিল, ২০২৩।

  • মধ্যস্থতা (মিডিয়েশন) বিল, ২০২১। আদালতের দারস্থ হবার আগে বিভিন্ন সংস্থার মধ্যেকার বিতর্ক মেটানোর উদ্দেশ্যে এই বিলটি তৈরি। দু’টি মীমাংসা সভার পরে কেউ সন্তুষ্ট না হলে তারপর কোনও পক্ষ আদালতে যেতে পারবে। প্রাক আদালত মীমাংসা বিতর্কের পর্বটি ১৮০ দিনের মধ্যে মেটাতে হবে।

  • জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন (সংশোধনী) বিল, ২০২৩। রাজ্য ও জাতীয় স্তরে জন্ম-মৃত্যুর হিসাব নিকাশ রাখার উদ্দেশ্যে এই বিলটি তৈরি। 

  • অ্যাডভোকেটস (সংশোধনী) বিল, ২০২৩। এই বিলটি বিচার বিভাগীয় কর্তৃপক্ষকে দালালচক্রর তালিকা প্রকাশ করার ক্ষমতা দেয়।

  • দিল্লীর ন্যাশনাল ক্যাপিটাল টেরিটরি গভর্নমেন্ট (সংশোধন) বিল, ২০২৩। দিল্লী সরকারের আধিকারিকদের নিয়োগ ও বদলির ওপর দিল্লীর নির্বাচিত সরকারের বদলে কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণ বাড়ানোর লক্ষ্যে এই বিলটি তৈরি। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য দিল্লীর কেজরীওয়ালের সরকারের করা এই সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্টে এই সংক্রান্ত মামলায় কেন্দ্রীয় সরকার হেরে যায়। সর্বোচ্চ আদালতের রায়কে উলটে দিয়ে নিজেদের মর্জিমত দিল্লীর নির্বাচিত রাজ্য সরকারকে চালানোর জন্য কেন্দ্র এই আইন করে। এর বিরুদ্ধে কংগ্রেস সহ ইন্ডিয়া জোটের সব দল একত্রে মোদী সরকারকে ভোট দেয় লোকসভা ও রাজ্যসভায়। রাজ্যসভায় বিজেপির নিজেদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকলেও ওয়াইএসআর কংগ্রেস, বিজু জনতা দল ইত্যাদির সমর্থনে এই বিলটি মোদী সরকার সেখানে পাশ করিয়ে নিতে সমর্থ হয়।

  • দ্য ইন্টার সার্ভিসেস অর্গানাইজেশনস্ (কমান্ড কন্ট্রোল ডিসিপ্লিন) বিল ২০২৩। এই আইন অফিসার-ইন-কমান্ডকে সমস্ত শৃঙ্খলামূলক এবং প্রশাসনিক ক্ষমতা দেয়।

  • দ্য ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট অ্যামেনমেন্ড বিল, ২০২৩। এটি রাষ্ট্রপতিকে ‘IIM’গুলির কার্যকারিতা নিরীক্ষা করার ক্ষমতা দেয়।

  • দ্য ডিজিটাল পার্সোনাল ডেটা প্রোটেকশান বিল, ২০২৩। বৈদ্যুতিন তথ্যের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত অধিকার রক্ষার লক্ষ্যে এই বিলটি তৈরি।

  • দ্য ফার্মেসি অ্যামেনমেন্ট বিল, ২০২৩। জম্মু ও কাশ্মীর ফার্মেসি অ্যাক্ট, ২০২১’র অধীনে নিবন্ধিত বা যোগ্য ব্যক্তিদের সম্পর্কিত একটি বিশেষ বিধান রয়েছে এই বিলটিতে।

  • দ্য কোস্টাল অ্যাকোয়া কালচার অথরিটি (অ্যামেনমেন্ট) বিল ২০২৩। একাধিক সংস্থার কাছ থেকে CRZ ছাড়পত্র পাওয়ার প্রয়োজনীয়তা এড়িয়ে যেতে ছোট মাছচাষিদের সাহায্য করতে এই আইনটি সাহায্য করবে বলে কেন্দ্রের দাবি।

  • দ্য অনুসন্ধান ন্যাশানাল রিসার্চ ফাউন্ডেশন বিল, ২০২৩। প্রাকৃতিক বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য এবং কৃষিতে গবেষণা এবং উদ্ভাবনের জন্য কৌশলগত দিকনির্দেশ প্রদানের দিকে লক্ষ্য রেখে এই বিলটি তৈরি করা হয়।

দ্য রিপিলিং অ্যান্ড অ্যামেন্ডিং বিল, ২০২২ লোকসভায় পাশ হয়েছে, কিন্তু রাজ্যসভায় এখনো পাশ হয়নি। দ্য প্রেস অ্যান্ড রেজিস্ট্রেশন অফ পিরিওডিকাল বিল, ২০২৩ রাজ্যসভায় পাশ হয়েছে ৩ অগস্ট ২০২৩, কিন্তু লোকসভায় এখনো পাশ হয়নি।

যে বিলগুলি সংসদে উত্থাপিত হয়েছে কিন্তু এখনো পাশ হয়নি তারমধ্যে আছে জম্মু কাশ্মীর সংক্রান্ত চারটি বিল। সেগুলি হল — জম্মু ও কাশ্মীর সংরক্ষণ (সংশোধন) বিল, ২০২৩; জম্মু ও কাশ্মীর পুনর্গঠন (সংশোধন) বিল, ২০২৩; জম্মু ও কাশ্মীর তফসিলি জাতি আদেশ (সংশোধন) বিল, ২০২৩; জম্মু ও কাশ্মীর তফসিলি উপজাতি আদেশ (সংশোধন) বিল, ২০২৩। এছাড়াও দুটি বিল — প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার (নিয়োগের শর্তাবলী এবং অফিসের মেয়াদ) বিল, ২০২৩; পোস্ট অফিস বিল, ২০২৩ — সংসদে উত্থাপিত হয়েছে, কিন্তু কোনও কক্ষেই এখনো পাশ হয়নি।

অর্থনীতি, পরিবেশ, নাগরিক অধিকারের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ কিছু কিছু দিককে এই নতুন আইনগুলি প্রবলভাবে প্রভাবিত করবে। সেজন্য এই বিলগুলি নিয়ে তাড়াহুড়ো না করে ধৈর্য ধরে গভীরভাবে আলোচনা করা দরকার ছিল বলে বিরোধী শিবিরের রাজনৈতিক নেতা থেকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বিশেষজ্ঞরা মনে করেছেন। কিন্তু সেটা করা হয়নি।

- সৌভিক ঘোষাল

খণ্ড-30
সংখ্যা-31