দুঃশাসনের দিনলিপি অবসানের লক্ষ্যে
aiming-to-end-the-diary-of-misrule_0

এত হিংস্র, এত প্রতিশোধ পরায়ণ কেন্দ্রীয় শাসককে দেশবাসী আগে কখনও দেখেনি। নিজের দলীয় তহবিলে বিপুল টাকা আদায়ের জন্য মোদী সরকার কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলোকে লেলিয়ে একের পর এক কর্পোরেট সংস্থার তল্লাশি ও হয়রানি করিয়ে যে ঘোর অপরাধ করছে, সেই কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলোকেই বিরোধীদের দমনের হাতিয়ারে পরিণত করল মোদী সরকার। ঝাড়খন্ডের মুখ্যমন্ত্রীর পর দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করল দুর্নীতির অভিযোগে, আপ’এর দলীয় অফিস সিল করে দেওয়া, মহুয়া মৈত্র’র বাড়ি সহ দলীয় কার্যালয়ে হানা ও তল্লাশি দেখিয়ে দেয় বিরোধী দমনে গণতন্ত্রকে পুরোপুরি হত্যা করতে কী মারাত্মক মরিয়া হয়ে উঠেছে মোদী সরকার ঠিক নির্বাচনের আগে। শুধু তাই নয়, শতাব্দী প্রাচীন পার্টি কংগ্রেসের দলীয় তহবিল ফ্রিজ করে দেওয়ার পেছনে রয়েছে আর্থিকভাবে ওই দলটিকে পঙ্গু করার ভয়ঙ্কর দুরভিসন্ধি। এদিকে, দুর্নীতিগ্রস্ত বিজেপির একজন নেতার ঘরেও কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলোকে কড়া নাড়তে দেখা যাচ্ছে না। বরং ওই সম্ভাবনা থাকলেই তারা বিজেপিতে যোগ দিয়ে সমস্ত তদন্ত অনুসন্ধান থেকে পার পেয়ে যাচ্ছে।

দেশের সংবিধানকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে, সমস্ত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুমড়ে মুছড়ে, কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলোর গলায় বকলশ পরিয়ে এবার দেখা গেল দেশের বৃহত্তম ব্যাঙ্ক — স্টেট ব্যাঙ্ককে অনুগত প্রজা বানিয়ে নির্বাচনী বন্ড সংক্রান্ত তথ্য চেপে রাখার নোংরা খেলায় শরিক বানিয়ে ফেলল। নেহাত সুপ্রিম কোর্টের ধমকের পর স্টেট ব্যাঙ্ক সুড়সুড় করে সব তথ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে তুলে দিতে বাধ্য হল।

যে তথ্যগুলো প্রকাশ করতে জুন মাসের ৩০ তারিখ পর্যন্ত স্টেট ব্যাঙ্ক সময়সীমার আবেদন করে, দেখা গেল তা উদ্ধার করতে সময় লাগে কয়েকটা মিনিট মাত্র! বন্ডগুলোর সাথে যে ইউনিক আল্ফা নিউমেরিক নম্বর ছিল স্টেট ব্যাঙ্কের আস্তিনে, তাকেও অন্যায় ভাবে কাজে লাগিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। প্রতিটি বন্ড কেনার ১৫ দিনের মধ্যে তা ভাঙানোর শেষ সময়সীমা এসবিআই নির্দিষ্ট করে দেয়। কিন্তু দেখা গেল বেশ কিছু বন্ড সেই নির্দিষ্ট মেয়াদের পর ভাঙানো হয়েছে, যা দেখিয়ে দেয় এ প্রশ্নেও বিজেপি সরকার পুরোপুরি অন্যায় সুযোগ নিয়েছে, স্টেট ব্যাঙ্কের নিয়ম লঙ্ঘন করে।

নিজেদের হাজারো কুকর্ম ও দুর্নীতিকে পুরোদমে চালাতে ও বিপরীতে বাছাই করে বিরোধীদের দমন করতে কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলোকে ব্যবহার করা, নাগরিক সমাজের উপর নামিয়ে আনা হামলা, প্রতিবাদ — ভিন্ন স্বর ও বিরোধী মতামতকে কণ্ঠরুদ্ধ করা, গোটা দেশকে জেলখানায় পরিণত করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে আপাদমস্তক এক ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করল মোদী সরকার। সাংবিধানিক গণতন্ত্র আজ ফ্যাসিবাদের পায়ের তলায় ক্ষতবিক্ষত, মুমূর্ষু।

এর বিরুদ্ধে গোটা দেশকে রুখে দাঁড়াতে হবে ঘোর তমসাচ্ছন্ন নিথর রাত্রি ঘনিয়ে ওঠার আগে।

খণ্ড-31
সংখ্যা-11