খবরা-খবর
ভয় দেখিয়ে জয়! ঘৃণা ছড়িয়ে বিষ!! এরই নাম সিএএ : নাগরিকত্ব সংশোধনের আইন বিধি বাতিলের দাবিতে নদীয়ায় প্রতিবাদী সভা
citizenship-amendment-act

গত মাসেই অসংখ্য মানুষের আধার কার্ড বাতিল করে দিয়ে নাগরিকত্ব এ্যাজেন্ডা নতুন করে সামনে আনা হয়েছিল। নদীয়া জেলা, যেখানে জনসংখ্যার প্রায় ৪৫ শতাংশ মানুষ মতুয়া বা নমশূদ্র সম্প্রদায়ের। যারা জীবন-জীবিকার তাগিদে বাংলাদেশ থেকে এদেশে এসে নাগরিক অধিকার অর্জন করে বসবাস করছেন। প্রধানত এই জনগোষ্ঠীকে টার্গেট করে নির্বাচনের প্রাক্কালে আধার কার্ড বাতিল করা হয়েছিল। এরই প্রেক্ষিতে রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত কৃষ্ণগঞ্জ ব্লকের বগুলা তারকনগর এলাকায় পার্টির এক প্রতিনিধিদল সরেজমিন তদন্ত অনুসন্ধান চালায়। যাদের নাগরিকত্ব প্রশ্নের মুখে ফেলে দেওয়া হয়েছে সেই ধরনের অসংখ্য আতঙ্কিত মানুষজনের সাথে কথাবার্তা চালায়।

কিছুদিন আগেই সিএএ বিধি লাগু করা হয়েছে। অসহায় মতুয়া সমাজকে প্রথমে বেনাগরিক করে দিয়ে তারপর তাঁদের নাগরিকত্ব প্রদানের টোপ দেওয়া হচ্ছে। এটা কেবলমাত্র নির্বাচনে আশু ফললাভের জন্যই নয়! বিজেপির লক্ষ্য আরও সুদুরপ্রসারী। উদ্বাস্তু মানুষের এদেশে চলে আসার নানাবিধ কারণকে একমাত্রিক করে তুলে তাকে একটা ধর্মীয় বিদ্বেষে জারিত করবার গভীর চক্রান্ত বিজেপি করছে। সিএএ বিধিতে একটি মাত্র ধর্মীয় সম্প্রদায় তথা মুসলিমদের বিযুক্ত করে তাঁদের শত্রু বলে পরিগণিত করা হয়েছে। যা সম্পূর্ণ সংবিধান-বিরোধী। এর ধারাবাহিকতায় আসছে এনআরসি। এসবের যুক্তিসঙ্গত পরিণতি হিসাবে হিন্দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথে তারা এগিয়ে যেতে চাইছে।

এই বিষয়গুলিকে তুলে ধরে গত ২৪ মার্চ তারকনগর রেলস্টেশনের পার্শ্ববর্তী এলাকায় এক প্রচারসভা সংঘটিত হয়। বিভিন্ন গণসংগঠন যথা এআইপিএফ, আরওয়াইএ, এআইসিসিটিইউ’এর ব্যানারে অনুষ্ঠিত প্রচারসভা এলাকার ব্যাপক মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। বহু মানুষ দীর্ঘ সময় ধরে চলা সভার বক্তব্য শোনেন। অনেকেই সহমর্মিতা জানান। শুরুতে মলয় তেওয়ারি ভারতবর্ষে নাগরিকত্ব আইনের মূল মর্মবস্তুকে বিভিন্ন পর্যায়কে ধরে ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন সংবিধান প্রণীত নাগরিকত্বের মৌলিক ধারণাকেই বিজেপি পাল্টে দিতে চাইছে। কেড়ে নিতে চাইছে সমস্ত নাগরিক অধিকার। এটা জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ব্যাপক মানুষের জীবনে চরম বিপর্যয় ডেকে  আনবে। সংবিধানের ১৪ নম্বর ধারা লঙ্ঘন করে কেবলমাত্র ধর্মীয় নিপীড়নকেই নাগরিকত্ব প্রদানের শর্ত রূপে গণ্য করা সংবিধান বিরোধী।

তমাল চক্রবর্তী বিজেপি  নেতাদের তীব্র আক্রমণ করে বলেন, আইন ও বিধি অনুযায়ী কেউই কাগজপত্র দেখাতে পারবে না। সেই লক্ষ কোটি মানুষের কি হবে? এর জবাব বিজেপি নেতাদের কাছ থেকে চাইতে হবে। কারণ এটা স্পষ্ট যে সমস্ত আবেদনকারীকে আগেই নিজেকে অনুপ্রবেশকারী হিসেবে ঘোষণা করতে হবে এবং এযাবৎ কাল পর্যন্ত পাওয়া সমস্ত আইনী অধিকার ত্যাগ করে দিতে হবে। শাসকদের কাছে আত্মসমর্পণ করতে হবে। সেই আবেদন সমাধানের জন্য অনির্দিষ্টকাল অপেক্ষা করতে হবে। সমস্ত নাগরিক অধিকার হারিয়ে তাদের স্থান কোথায় হবে এখনো অজানা। তারা ডি-ভোটার হয়ে যাবে কিনা সেটাও ঠিক নেই। প্রশাসন ইচ্ছে করলেই নানা রকম হয়রানি করতে পারবে। তাদেরকে ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানো হবে কিনা, সেটাও বোঝা যাচ্ছে না।

বাসুদেব বসু বলেন, ১৯৫৫ সালের জন্মসূত্রে  নাগরিকত্ব আইন পাল্টে দিয়ে উত্তরাধিকার সূত্রে নাগরিকত্বের আইন নিয়ে এসে সংশোধন করা হয়েছে। সকলকেই নথিপত্র দিয়ে নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে হবে। যাকে বলা হচ্ছে এনআরসি। অন্য দেশ থেকে এসে এদেশে বসবাসকারী সকলকেই বলা হবে অনুপ্রবেশকারী। অর্থাৎ সকলকেই অনুপ্রবেশকারী বলার মধ্য দিয়ে তাদের মাথায় ঝুলিয়ে দেওয়া হবে এনআরসির খাড়া। জয়তু দেশমুখ বলেন, দেশের শাসকদল মানুষকে অসহায় করে দিয়ে জোর করে আনুগত্য আদায় করতে চাইছে। যারা কৃষকের ফসলের লাভজনক দামের গ্যারান্টি দিতে পারেনা, উল্টে শ্রমজীবী মানুষের কাজ খাদ্য শিক্ষার অধিকার কেড়ে নিচ্ছে, কেন্দ্রের ফ্যাসীবাদী সরকারের বিরুদ্ধে এক হয়ে লড়তে হবে। দিকে দিকে আওয়াজ তুলতে হবে বিজেপিকে পরাস্ত করুন। সভা সঞ্চালনা করেন জীবন কবিরাজ।

খণ্ড-31
সংখ্যা-11