বাংলাদেশের অন্যতম বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী আনিসুজ্জামান প্রয়াত হলেন ১৪ মে, ২০২০ তারিখে। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল চুরাশি বছর। ৫২ র ভাষা আন্দোলনে তিনি অংশ গ্রহণ করেন। ৬৯ এর গণ অভ্যুত্থান ও ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে তিনি বিশেষ ভূমিকা রেখেছিলেন।
১৯৩৭ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারী আনিসুজ্জামানের জন্ম হয় ২৪ পরগণা জেলার বসিরহাটে। কোলকাতার পাক সার্কাস হাইস্কুলে তাঁর পড়াশুনো শুরু। পরে পরিবারের সঙ্গে তিনি চলে যান খুলনা জেলায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন ১৯৫৭ সালে। ১৯৫৯ সাল থেকে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে শিক্ষাকতা শুরু করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করার পর পোস্ট ডক্টোরাল গবেষণা করেন আমেরিকার শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। বিষয় ছিল “বাংলার সাংস্কৃতিক ইতিহাস : ইয়ং বেঙ্গল ও সমকাল”। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও তিনি পড়িয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে।
গবেষণার কাজ ও অতিথি অধ্যাপক হিসেবে আনিসুজ্জামান যুক্ত ছিলেন নানা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে। ১৯৭৪-৭৫ সালে কমনওয়েলথ অ্যাকাডেমি স্টাফ ফেলো হিসেবে তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান ষ্টাডিজে গবেষণা করেন। জাতিসংঘ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা প্রকল্পে অংশ নেন ১৯৭৮ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত। ১৯৮৫ সালে তিনি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে আসেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর নেন ২০০৩ সালে। তিনি মওলানা আবুল কালাম আজাদ ইনষ্টিটিউট অব এশিয়ান ষ্টাডিজ কলকাতা, প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয় এবং নথ ক্যারোলিনা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে ভিজিটিং ফেলো ছিলেন। এছাড়াও তিনি নজরুল ইনষ্টিটিউট ও বাংলা একাডেমির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি শিল্পকলা বিষয়ক ত্রৈমাসিক পত্রিকা যামিনী এবং বাংলা মাসিকপত্রকালি ও কলম এর সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। ১৯৬১ সালে রবীন্দ্র জন্মশতবর্ষ অনুষ্ঠানে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ নেন।
আনিসুজ্জামান ছিলেন বাংলার অগ্রগণ্য প্রাবন্ধিক। তাঁর উল্লেখযোগ্য বইগুলির মধ্যে আছে “মুসলিম মানস ও বাংলা সাহিত্য” (১৯৬৪) “মুসলিম বাংলার সাময়িকপত্র” (১৯৬৯) পুরোনো বাংলা গদ্য (১৯৮৪) আমার একাত্তর (১৯৯৭) মুক্তিযুদ্ধ এবং তারপর (১৯৯৮) আমার চোখে (১৯৯৯)। তাঁর শিক্ষক মহম্মদ শহীদুল্লাহ ও মুনীর চৌধুরীর জীবনীগ্রন্থও তিনি রচনা করেছিলেন। তাঁর সম্পাদনাতেও অনেকগুলি মূল্যবান গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৭০ সালে তিনি পেয়েছিলেন বাংলা একাডেমি পুরষ্কার, ১৯৯৩ সালে পান আনন্দ পুরষ্কার।
ঢাকার বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে তাঁর অবদান ছিলো বিশেষ উল্লেখযোগ্য। অসংখ্য গবেষণাগ্রন্থ এবং কোষগ্রন্থ প্রণয়নে এই সময়ে ঢাকার বাংলা একাডেমি উল্লেখযোগ্য নজির রাখে। এই সমস্ত কাজে দুই বাংলার সারস্বত সমাজকে তিনি একসঙ্গে এনেছিলেন।
কদিন আগে আমরা হারিয়েছিলাম কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক রুশ ইতিহাসের বিশেষজ্ঞ হরি বাসুদেবনকে। তাঁর অনতি পরেই আমরা হারালাম অধ্যাপক আনিসুজ্জামানকে। আরো রিক্ত হলো বাংলার সাংস্কৃতিক জগত।
বাংলার বিশিষ্ট লেখক ও বুদ্ধিজীবী আনিসুজ্জামানের প্রতি রইলো আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা।
ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী লেনিনবাদী) লিবারেশন
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি
১৪/০৫/২০২০