অতিমারীকে কাজে লাগিয়ে মোদী সরকার দেশব্যাপী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। বিজেপি শাসিত রাজ্য গুজরাট, উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা, মধ্যপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা ৮ ঘণ্টা কাজের সময়কে বাড়িয়ে ১২ ঘণ্টা করেছে। স্বল্পকালের চুক্তি ভিত্তিক মেয়াদি শ্রমিক নিয়োগের ছাড়পত্র দিয়েছে। তিন বছর সব সামাজিক সুরক্ষা (পিএফ, গ্রাচুইটি ইত্যাদি) স্থগিত থাকবে। পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর অকথ্য অত্যাচার চলছে। শ্রমিকদের উপর অত্যাচারের বিরুদ্ধে এআইসিসিটিইউ ১২-১৩ মে বিক্ষোভের ডাক দেয়।
এআইসিসিটিইউ-এর ডাকে সারা ভারত প্রতিবাদ দিবসের প্রথম দিনে জিএসএফ ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের (কাশীপুর গান অ্যান্ড শেল ফ্যাক্টরিজ) সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পথে নেমে দুরত্ব বজায় রেখে কেন্দ্রীয় সরকারের শ্রমিক বিরোধী নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।
উত্তর ২৪ পরগণার চটকল শ্রমিকরা আগরপাড়া জুটমিল গেটে বেঙ্গল চটকল মজদুর ফোরাম-এর নেতৃত্বে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। জেলার বিভিন্ন অংশে প্রতিবাদের খণ্ড চিত্র বেলঘরিয়া, বারাসাত, কামারহাটি চটকল ইউনিয়ন, অশোকনগর, নৈহাটি, শিবদাসপুর ইটভাটা ইউনিয়ন, বসিরহাট নির্মাণ শ্রমিক ও গাইঘাটা।
শ্রম আইন সংশোধনের বিরুদ্ধে এআইসিসিটিইউ ১২-১৩ মার্চ সারা ভারত প্রতিবাদ দিবসের কর্মসূচীর অঙ্গ হিসাবে কলকাতায় বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ সংগঠিত হয়।
ক্রীক রো-র সামনে পালিত হয় এই কর্মসূচী। বিরসুলহাটের হকার কমরেড দের সাথে এই কর্মসূচীতে অংশ নেন বাসুদেব বোস, প্রবীর দাস, অতনু চক্রবর্তী। এদিন বেহালার কালিতলায় শ্রম আইনের সংশোধনের বিরুদ্ধে, প্রচেষ্টা প্রকল্পে সমস্ত অসংগঠিত শ্রমিকদের অন্তর্ভুক্ত করতে, ও অন্যান্য দাবিতে বিক্ষোভ হয়।
যাদবপুর ঢাকুরিয়ার গাঙ্গুলিপুকুরে এই কর্মসূচী পালিত হয়। যাদবপুর লোকাল কমিটির সম্পাদকের উপর তৃণমূলী হামলার সাথে উক্ত বিষয়টি যুক্ত হয়। এলাকার অনেক কমরেড লকডাউনের মধ্যে ও এই কর্মসূচীতে সামিল হয়ে খুব সফলতার সাথে তা সম্পন্ন করেন। বর্ষীয়ান নেতা এ বি চৌধুরী, বাবুন চ্যাটার্জি সহ এলাকার অনেকেই এই বিক্ষোভে অংশ নেন।
বাঁশদ্রোণীতে নির্মাণ শ্রমিকদের সাথে অন্য কমরেডরা এখানে যুক্ত হন। রামগড়ে স্কীম কর্মীদের নিয়ে এই কর্মসূচী সম্পন্ন হয়।
হুগলি জেলা
শহর ও শিল্পাঞ্চলের সংগঠিত ও অসংগঠিত শ্রমিকেরা সেই কর্মসূচীতে সামিল হন। কোন্নগরে নির্মাণ শ্রমিকেরা রাস্তার ধারে পোস্টার ও ঝান্ডা হাতে স্লোগান তোলেন নির্মাণ শ্রমিকসহ সমস্ত অসংগঠিত শ্রমিকদের দশ হাজার টাকা লক ডাউন ভাতা দিতে হবে, ভদ্রেশ্বর এঙ্গাস জুট মিলের শ্রমিকেরা মিল গেটে শ্রম আইন বদলে ৮ ঘন্টার জায়গায় ১২ ঘণ্টা কাজ চালু করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সামিল হন, প্রতিবাদে সামিল হন চুঁঁচুড়ার অসংগঠিত শ্রমিকেরা। পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরানোর জন্য কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারকে ব্যবস্থা নেওয়া, বিনা পয়সায় সমস্ত শ্রমিককে রেশন দেওয়ার দাবি জানিয়ে খালি গলায় বক্তব্য রাখা হয়।
১৩ মে এআইসিসিটিইউ-র পক্ষ থেকে রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটকের সাথে সাক্ষাত করে ১৪ দফা দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি পেশ করা হয়। উপস্থিত ছিলেন রাজ্য সভাপতি অতনু চক্রবর্তী, রাজ্য সাধারণ সম্পাদক বাসুদেব বসু, রাজ্য সদস্য প্রবীর দাস। শ্রম দপ্তরের সব কাজ কর্ম বন্ধ। রোটেশনে ২ জন করে অফিসার দপ্তরে আসেন। প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিভিন্ন রাজ্য সরকার কোভিড ১৯ র অছিলায় একের পর এক যেভাবে শ্রম আইন সংশোধন করছে, রাজ্য সরকার যেন সেখান থেকে নিজেকে বিরত রাখে। লকডাউন পর্যায়ে মজুরী দেওয়ার যে বিজ্ঞপ্তি রাজ্য সরকার দিয়েছিল তা যে অনেকেই অমান্য করেছে তা তুলে ধরা হয়। “প্রচেষ্টা” প্রকল্পের ত্রুটি যুক্ত অ্যাপ, তা নিয়ে নানা জটিলতার বিষয়টি ও সামনে আনা হয়। পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনা, নির্মাণ শ্রমিকদের আর্থিক অনুদান প্রভৃতি বিষয় গুলো ও সামনে আনা হয়। মন্ত্রী জানান, অত্যন্ত কম সংখ্যক কর্মী ও হাতে গোনা আধিকারিকদের নিয়ে এখন কাজ চলছে। তাই, সরকারি সিদ্ধান্তগুলোকে কার্যকর করতে প্রশাসনিক সমস্যা হচ্ছে। তিনি নিজেও কয়েকটা দিন অল্প সময়ের জন্য অফিসে আসেন। সময়ের অভাবে বিস্তারিত আলোচনা করা যায়নি। তিনি সরকারি কতগুলো সিদ্ধান্তের কথা প্রতিনিধিদলকে জানান –
১। এই রাজ্যে শ্রম আইন সংশোধন হবে না।
২। লক ডাউন পর্যায়ের মজুরি যারা দেননি তাদের দিতে হবে। ১৭ মে-র পর লকডাউনের পরবর্তী অবস্থা বুঝে এব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
৩। প্রচেষ্টা প্রকল্প নিয়ে তিনি বলেন, অ্যাপের জটিলতা ছিল। তবে এখন পর্যন্ত ১৫ লক্ষ আবেদন জমা পড়েছে। অর্থ প্রদান ও শুরু হয়েছে। তিনি আরও বলেন এটা একটা লিমিটেড ফান্ড। টাকা দেওয়া শুরু হয়েছে। এই প্রকল্প নিয়ে আমাদের অবস্থান ও উদ্বিগ্নতার কথা জানানো হয়।
৪। তিনি জানান নির্মাণ শ্রমিকরা সবাই ১০০০ টাকা করে পাবেন। অফিস বন্ধ তাই জটিলতা হচ্ছে। নির্মাণ শ্রমিকদের নিয়ে নির্দিষ্ট বক্তব্য স্মারকলিপিতে আছে।
৫। পরিযায়ী শ্রমিকদের ১০০ ট্রেনে সবাই কে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে বলে প্রতিনিধিদলকে তিনি অবহিত করেন। তবে, কবে কোন ট্রেন আসবে তা রেল মন্ত্রকই সিদ্ধান্ত নিয়ে জানাবে বলে তিনি প্রতিনিধিদলকে বলেন। মন্ত্রী কেন্দ্রের অসহযোগিতার কথা তুলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
কোভিড-১৯ সরকারী দপ্তর হাতে গোনা কর্মীদের নিয়ে চলছে। সরকারী বিভিন্ন প্রকল্প ঘোষণা হচ্ছে, কিন্তু দপ্তরগুলো চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। এমন কি স্মারকলিপি জমা নেওয়ার কেউ নেই। দপ্তর বন্ধ। স্বাভাবিকভাবেই প্রকল্পগুলো সুবিধা অল্পদিনে মানুষের কাছে পৌঁছবে না।
আগামীদিনে লকডাউনের পরিস্থিতি বুঝে আবার পরবর্তী কর্মসূচীর রূপ ও পদ্ধতি ঠিক করতে হবে।