প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে নির্বিচার প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ ভারতের প্রতিরক্ষা ক্ষমতাকে দুর্বল করে তুলবে : প্রধানমন্ত্রী এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে চিঠি লিখল সিপিআই(এমএল)
hhh

প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত অনুমতি দানের যে সিদ্ধান্ত সম্প্রতি নেওয়া হয়েছে, তা পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়ে সিপিআই(এমএল) সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন। ঐ চিঠিতে বলা হয়েছে, “কেন্দ্রীয় সরকারের তথাকথিত ২০ লক্ষ কোটি টাকার প্যাকেজ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার সময় অর্থমন্ত্রী প্রতিরক্ষা শিল্প সম্পর্কে যে দুটি অত্যন্ত আপত্তিকর ঘোষণা করেছেন তা লক্ষ্য করে আমরা স্তম্ভিত হয়ে গেছি। আগের প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের দেওয়া এবং অতি সম্প্রতি ২০১৯ সালের আগস্ট মাসে প্রতিরক্ষা শিল্পে যুক্ত কর্মীদের ঐতিহাসিক ধর্মঘটের পর দেওয়া প্রতিশ্রুতির খেলাপ করে অর্থমন্ত্রী অস্ত্রশস্ত্র তৈরির কারখানাগুলোর কর্পোরেটিকরণ করার নীতির ঘোষণা করেন। এই প্যাকেজকে ‘আত্মনির্ভর ভারত’ নির্মাণের এক উপায় রূপে উপস্থাপিত করা হলেও অর্থমন্ত্রী স্ট্র্যাটেজিক গুরুত্বের এই ক্ষেত্রকে প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগের কাছে ৭৪ শতাংশ পর্যন্ত খুলে দেওয়ার কথা ঘোষণা করলেন।”

“এই দুই পদক্ষেপ যেমন অস্ত্রশস্ত্র নির্মাণ শিল্পের কাছে মারাত্মক ধাক্কা হয়ে দেখা দেবে, তেমনই সেই বোঝাপড়ার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা বলেও প্রতিপন্ন হবে যার ভিত্তিতে প্রতিরক্ষা শিল্পের কর্মীরা তাঁদের ২০১৯ সালের ঐতিহাসিক ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। গোটা দেশই এখন ভাইরাস ঘটিত ভয়ানক মহামারীর কবলে এবং প্রতিরক্ষা শিল্পের কর্মীরা সমস্ত ঝুঁকি এবং প্রতিকূলতাকে অগ্ৰাহ্য করে জাতীয় স্বার্থে তাঁদের যথাসাধ্য অবদান রাখছেন, বাড়তি ভূমিকা পালন করে পিপিই এবং জীবন সুরক্ষার অন্যান্য সামগ্ৰী উৎপাদনে নিজেদের নিয়োজিত করছেন। এমন সময়ে লকডাউনকে লাইসেন্স করে তুলে এই পশ্চাদমুখী পদক্ষেপগুলো ঘোষণা করে সরকার প্রতিরক্ষা শিল্পের কর্মী এবং জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতাই করল।

“আপনার সরকারের তরফে বিশ্বাসভঙ্গের এই ঘটনার পর প্রতিরক্ষা শিল্পের কর্মীদের ইউনিয়নগুলির ফেডারেশন যে ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নিতে ব্যালট প্রয়োগের ডাক দিয়েছে, সে সম্পর্কে আমরা অবহিত আছি। আমরা তাই অবিলম্বে আপনাকে হস্তক্ষেপ করতে বলছি, যাতে এই দুই পদক্ষেপকে ফিরিয়ে নিয়ে এবং আগের বোঝাবুঝির স্পিরিটকে সম্মান জানিয়ে কর্মীদের উদ্বেগের নিরসনে উদ্যোগ নেন। প্রতিরক্ষা শিল্পের কর্পোরেটিকরণ এবং স্ট্র্যাটেজিক গুরুত্বের এই ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগকে নির্বিচারে এগিয়ে নিয়ে গেলে তা ভারতের প্রতিরক্ষা কুশলতাকে দুর্বল করেই তুলবে। আর ভারতের জাতীয় স্বার্থের পক্ষে সুস্পষ্টরূপে হানিকর একটা পদক্ষেপের কথা ভারতকে আত্মনির্ভর করে তোলার নামে যে বিবেচনা করা হচ্ছে তা আমাদের কাছে নিতান্তই অসমীচীন হয়েই দেখা দিচ্ছে। আশা করি, আপনি কর্মচারিদের মতামতে এবং দেশপ্রেমিক ভারতবাসীদের ব্যাপকতর অভিমতে গুরুত্ব দিয়ে ওই পশ্চাদমুখী পদক্ষেপগুলোকে কার্যকরী করা থেকে বিরত করবেন।”

প্রতিরক্ষা শিল্পের কর্মচারীদের ইউনিয়নগুলো ধর্মঘট সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে ব্যালট-ভোটের উদ্যোগ নিয়েছে এবং এর মধ্যে দিয়ে তাদের যে উদ্বেগ প্রকাশ পেয়েছে, সিপিআই(এমএল) তার প্রতি সংহতি জানিয়েছে।

খণ্ড-27