সম্পাদকীয়
ধর্মঘট বুঝিয়ে দিল
eee

২৬ নভেম্বরের ধর্মঘট সাফল্যের মুখ দেখেছে। ধর্মঘটের দাবিগুলো মানুষের মন ছুঁয়েছে, তাই বিরাট সমর্থন মিলেছে। এই ধর্মঘট কেন্দ্রের বিরুদ্ধে। কেন্দ্রকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে। অথচ মোদীর 'মন কী বাত' একে বানচাল করার যুক্তি-তর্কের আসরে নামতে পারল না। দেখা গেল না অমিত শাহ বা বিজেপি'র তাবড় তাবড় নেতাদের প্রচারযুদ্ধে নামার দুঃসাহস। বরং ক্ষমতার দাপট দেখাতে দেশের কোনো কোনো অংশে কৃষকদের ওপর দমন-পীড়নের পন্থা নিয়েছে। ওরা সংসদে গরিষ্ঠতার গায়ের জোরে স্বেচ্ছাচারিতার সিদ্ধান্তগুলো পাশ করিয়ে নিয়েছিল। কিন্তু পাল্টা প্রতিবাদ-প্রতিরোধের মুখে পড়েছে সড়কে, কলে কারখানায়, ক্ষেত খামারে, অফিস কাছারিতে। সফল ধর্মঘট তার অভিনব বহিঃপ্রকাশ। বিজেপি এর বিরুদ্ধে কোন প্রচার নামাতে পারেনি। এর দাবিগুলোকে খন্ডন করা তো বহু দূরের ব্যাপার। এমনকি বিজেপি-র আই টি সেলও ফেল মেরেছে। নেয় 'নীরবতার কৌশল'। উপরন্তু জনগণের দৃষ্টি ঘোরাতে চালাকির আশ্রয় নেয়, 'আয়ুস্মান ভারত' প্রকল্পের তথাকথিত 'জনকল্যাণকর' আলোচনার অবতারণা করে, আর এই প্রশ্নে রাজ্যের মমতা সরকারের অবস্থান গ্রহণ কত অসহযোগিতামূলক সেই চর্বিত চর্বণ জমানোর চেষ্টা করে। ধর্মঘটে তোলা হয়েছে যে প্রশ্নগুলো, যেমন দৈনিক ১২ ঘন্টা শ্রম দেওয়ার বাধ্যতামূলক নীতি চাপিয়ে দেওয়া, যা বস্তুত শ্রমদাসত্বেরই নামান্তর; তার সাথে 'চুক্তি চাষ' প্রথার প্রবর্তন, যা আদতে বিগত ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলের নীল চাষ প্রথাকে আবার লাগু করার অভিসন্ধি; কিংবা ক্রমাগত চরম মূল্যবৃদ্ধি, রেকর্ড পরিমাণে জিডিপি হ্রাস বা বেকারি বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নে, মোদী সরকারের চূড়ান্ত ব্যর্থতা ও নিস্পৃহতা প্রদর্শন; অথবা বেসরকারীকরণের পলিসি যখন লক্ষ্য — তার জন্য সরকারে যাওয়া-থাকার কি যুক্তি আছে(?)— এই সমস্ত জ্বলন্ত প্রশ্নগুলোর প্রত্যুত্তর দেওয়ার মুরোদ নেই। তাই সাধারণ মানুষের সামনে সাফাই গাইবে কি করে? এসব বিতর্ক থেকে বিজেপি বরং বিরত থাকতে চায়। তাই পথে-ঘাটে-প্রান্তরে মুখোমুখি প্রচারে-বিতর্কে নামতে পারেনি। যে ধর্মঘট কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সংগঠিত হল তা আগামীদিনে আরও বড় লড়াইয়ের আগমনী বার্তা দিতে এক রণদামামা। বিশেষ করে ২০২১-এর পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে প্রধান প্রতিপক্ষ ফ্যসিবাদী বিজেপিকে রুখে দেওয়ার নির্দিষ্ট লক্ষ্যে।

অন্যদিকে রাজ্যের শাসকদল টিএমসি বা মমতা সরকার ধর্মঘটের অধিকারের বিরোধিতা করলেও ধর্মঘট ভাঙতে রাস্তায় নামবে না বলেছিল, ধর্মঘটের ইস্যুগুলোকে সমর্থন ঘোষণা করেছে। এই দ্বৈততার পরিণামবশত যদিও ধর্মঘট ভাঙতে নামেনি, তবে ধর্মঘটী প্রচারকদের ওপর কোথাও তৃণমূলের লোকেরা, কোথাও পুলিশ বলপ্রয়োগ করেছে। এর উৎস রয়েছে ধর্মঘটের অধিকারকে নীতিগতভাবে বিরোধিতার অনড়ত্বের মধ্যে। তৃণমূলকে এই অগণতান্ত্রিক অবস্থানটি পুরোপুরি বিসর্জন দিতে হবে। আর ধর্মঘটের বিষয়গুলোকে সমর্থন করার ধারা বজায় রাখতে হবে, লড়াই একদিনের ধর্মঘটে শেষ হয়ে যাবে না, এই লক্ষ্যে পরবর্তী আন্দোলনের ধারার বিরোধিতায় নামা চলবে না, বিষয়গুলোর পক্ষে দাঁড়িয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সংঘাতে নামতে হবে। এই লক্ষ্যে রাজ্য বিধানসভায় বিশেষ অধিবেশন ডেকে কিছু বিকল্প আইন ও নিয়মাবলী প্রণয়ন করতে হবে। রাজ্যে বাম ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অধিকারকে অবারিত রাখার পরিবেশ অক্ষত থাকা চাই। নাহলে তৃণমূল নিজের পরিণাম নিজেই ডেকে আনবে।

খণ্ড-27
সংখ্যা-42