আবেদন
দীপাবলি এবার দূষণহীন হোক
dipa

‘জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরস’-এর পক্ষ থেকে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে একটি চিঠিতে আবেদন জানানো হয়েছে, এই মুহূর্তে আমাদের রাজ্যে কোভিডের দাপট বেশ চিন্তাজনক পর্যায়ে! গত ছ’সপ্তাহ ধরে ক্রমেই বেড়ে চলেছে সংক্রমণ এবং মৃত্যু!

সারা দেশে যে রাজ্যগুলিতে দৈনিক সংক্রমণ (এবং মৃত্যু) সবচেয়ে বেশি, অতীব দুঃখ ও বেদনার সাথে আমরা দেখতে পাচ্ছি সেই তালিকায় এখন প্রায় শীর্ষে চলে আসছে আমাদের রাজ্য।

চিকিৎসাবিজ্ঞান-এর নিয়ম অনুযায়ী এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে যাঁরা কোভিডের শিকার হন, তাঁদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষেরই সমস্যাটা বাসা বাঁধে ফুসফুসে। তাঁদের শ্বাস নিতে কষ্ট হয়।

যারা করোনা থেকে নিষ্কৃতি পেয়ে সুস্থ হয়ে ওঠেন তাদেরও পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে উঠতে অনেক সময় লাগে।

শীত আসছে। ঠিক এই সময়ে জ্বর-সর্দি-কাশির প্রকোপ প্রতিবছরেই কম বেশি হয়েই থাকে, সঙ্গে দোসর পরিবেশ দূষণ! গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো এবছর তার ওপর আবার সর্বব্যাপী এই কোভিড অতিমারীর করাল ছায়া !

এই পটভূমিতে দাঁড়িয়ে আমরা আপনাকে অনুরোধ করছি এই বছর কালীপুজো, দীপাবলির সময় কোনো রকম পটকা ও আতসবাজি জ্বালানোর ঘটনা যাতে না ঘটে তার জন্য রাজ্য প্রশাসন যথাযথ সক্রিয় ভূমিকা নিয়ে রাজ্যবাসীকে সমূহ বিপদ থেকে রক্ষা করে দেশের অন্যান্য রাজ্য তথা বিশ্বের কাছে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পথিকৃতের দাবিদার হয়ে উঠুক।

পটকা, আতসবাজি থেকে নির্গত হওয়া বিষাক্ত গ্যাস বাড়িতে বা কোয়ারান্টিনে বা হাসপাতালে থাকা রোগীদের জন্য খুব মারাত্মক। পটকা বা আতসবাজি খুব অল্প সময়ে বিপুল পরিমাণ বায়ু দূষণের কারণ হয়ে যায় তার মধ্যে থাকা ধাতব কণা, বিপজ্জনক টক্সিন, সালফার বা কার্বনের মতো ক্ষতিকারক রাসায়নিকের কারণে! এই মারাত্মক সূক্ষ্ম দূষণকণাগুলির প্রভাবে কাশি, শ্বাসকষ্ট, হাঁপানির আক্রমণ এবং এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। এই বিপদ থেকে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি হৃৎপিণ্ড বা ফুসফুসের রোগী, বয়স্ক ও শিশুদের।

অতিসুক্ষ বায়ুবাহিত দূষণকণা (যেমন পিএম ২.৫) বিশেষভাবে বিপজ্জনক কারণ তারা ফুসফুসের গভীরে প্রবেশ করতে পারে এবং বিভিন্ন ধরনের প্রতিকূল প্রভাব ফেলতে পারে। ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্ট তাঁর রায়ে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের (সিপিসিবি) গবেষণার উল্লেখ করে রায় দেন “দিওয়ালি চলাকালীন পটকা ফাটানো অবশ্যই বায়ু দূষণে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে।” এতে আরো বলা হয়েছে, পটকা ফাটানোতে দূষণকণা পিএম ২.৫ যথেষ্ট পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা “স্বাস্থ্যের পক্ষে একটি গুরুতর ঝুঁকি।”

গতবছর (২০১৯) ভারতে ১৬ লক্ষ ৭০ হাজার মানুষ মারা গেছেন কেবলমাত্র বায়ু দূষণের কারণে হওয়া বিভিন্ন রকমের অসুস্থতায়! গতবছর কিন্তু কোভিড ছিল না! কিন্তু এটা কোভিডের বছর!

সরকারী তথ্য অনুযায়ী আমাদের রাজ্যে  এপর্যন্ত প্রায় তিনলক্ষ বাষট্টি হাজার মানুষ কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন।

তাদের মধ্যে প্রায় চল্লিশ হাজার মানুষ এখন এ রাজ্যে কোভিড জনিত কারণে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন! তাঁদের অনেকেরই ফুসফুস পুরোপুরি কাজ করছে না, কারো অক্সিজেন চলছে, কেউ বা আবার ভেন্টিলেশনে!

প্রায় তিনলক্ষ আঠেরো হাজার জন সুস্থ হয়ে ওঠার বিভিন্ন পর্যায়ে। কেউ এখনো অত্যন্ত দুর্বল, কেউ মৃত্যুমুখ থেকে ফিরে আসার অপরিসীম মানসিক-শারীরিক ক্লান্তি নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন, অনেকেরই শ্বাস-কষ্টের সমস্যা থেকে গেছে। আইসোলেশনে-কোয়ারান্টানে মানসিকভাবেও অনেকে বিপর্যস্ত !

অর্থনৈতিক ভাবে তো বটেই !

ধুঁকতে থাকা, একটু মুক্ত বাতাসের জন্য হাঁফাতে  থাকা অসংখ্য অসুস্থ মানুষ আমাদের চারপাশে !

কিছু মানুষের আনন্দের জন্য বাজি ফাটিয়ে আতসবাজি জ্বালিয়ে সেই মানুষগুলির প্রাণসংশয়ের কারণ হওয়ার বিষয়টি নিশ্চয়ই প্রশ্রয় পেতে পারেনা। আমরা নিশ্চিত রাজ্যের প্রশাসনিক অভিভাবক হিসেবে আপনিও এবিষয়ে সহমত।

দীপাবলির সময় আতসবাজির বিষাক্ত ধোঁয়া এবার যে কোনোভাবে এড়াতে হবে এবং যারা লড়াই করছেন বা করোনায় ভুগছেন তাঁদের আরও কষ্টের হাত থেকে বাঁচাতেই হবে।

কারণ, তাঁদের কেউ আপনার কাছে মা, কেউ বাবা, ভাই, বোন, সন্তানসম। এমনকি তাঁদের কেউ কেউ এই রাজ্যের চিকিৎসকও!

পাড়া, বস্তি, বাড়ি, বিল্ডিং কমপ্লেক্স, সোসাইটি, পার্ক, বাগান, প্রতিষ্ঠানে সবরকম আতসবাজি-পটকা এবছর বর্জন করার জন্য হাতজোড় করে আমরা অনুরোধ করছি। আপনার নেতৃত্বে রাজ্য প্রসাশনও আমাদের সহযাত্রী হলে এই কাজে অনায়াস সাফল্য আসবে।

এই বছর অন্তত পটকা আতশবাজির থেকে রাজ্যবাসীকে দূরে রাখা যাবে। এলাকার প্রত্যেককে বোঝাতে এবং চেষ্টা করতে পরিবেশকে যথাসম্ভব দূষণমুক্ত রাখতে।

আপনার নেতৃত্বে প্রশাসনের সহযোগিতায় এই পদক্ষেপটি গ্রামে, গঞ্জে, শহরে আমাদের প্রতিবেশীদের কাছেও সচেতনতার একটি দারুণ উদাহরণ হয়ে উঠবে।

অসংখ্য মানুষের প্রাণরক্ষা পাবে। সকলকে সচেতন করতে আপনি আমাদের সহায়তা করুন।

করজোড়ে আমাদের সবিনয় নিবেদন, দীপাবলি এবার দূষণহীন হোক।

খণ্ড-27
সংখ্যা-39