প্রতিবেদন
নিকিতা তোমার হত্যাকাণ্ড : বদল চাই দৃষ্টিকোণে
nikita

২৬ অক্টোবর হরিয়ানার ফরিদাবাদের এক নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনার খবর সামনে আসতেই আলোড়ন উঠল ভারতের বুকে। ‘নিকিতা তোমার’ নামে এক কলেজ ছাত্রীকে তৌসিফ নামের এক যুবক সেদিন প্রথমে অপহরণ করার চেষ্টা করে, তারপর সেই কাজে ব্যর্থ হয়ে একদম কাছ থেকে গুলি চালিয়ে হত্যা করে। প্রকাশ্য রাস্তায় ঘটা এই হত্যাকাণ্ড জনৈক প্রত্যক্ষদর্শীর মোবাইল ফোন ক্যামেরায় বন্দী হয়ে ভিডিও চিত্র হিসেবে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।

এই নৃশংস ঘটনাটির অনুসন্ধান সূত্রে জানা যায় তৌসিফ অনেকদিন থেকেই নিকিতাকে প্রেম প্রস্তাব দিয়ে আসছিল ও নিকিতা বারেবারেই তা প্রত্যাখ্যান করেছিল, জানিয়েছিল অভিযোগও। তৌসিফ তা সত্ত্বেও জোর খাটিয়েই যেত এবং শেষমেষ মরীয়া হয়ে অপহরণের চেষ্টা করে ও তাতে ব্যর্থ হয়ে খুন করে নিকিতাকে।

মুসলিম যুবক এক হিন্দু মেয়েকে জোর করে বিয়ে করতে চাইছে এবং তারপর তাতে ব্যর্থ হয়ে তাকে খুন করছে – এই ঘটনাধারাকে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি প্রত্যাশিতভাবেই তাদের সুপরিচিত লাভ জেহাদ ছকে ব্যাখ্যা করে ও এই সোচ্চার প্রচারে সামিল হয়। যেটা চাপা পড়ে যায় সেটা হল এই ধরনের ‘স্টকিং’ ও যৌন উৎপীড়নের ঘটনায় পুলিশ ও প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গীর সমস্যা, যা এই ধরনের সমস্যাকে ক্রমশ ভয়ংকর আকার দিচ্ছে।

আমাদের সমাজের একাংশ এগুলিকে যৌন উৎপীড়ণের বদলে প্রেম ভালোবাসার সমস্যা হিসেবেই দেখার পক্ষপাতী এবং পুলিশ প্রশাসনও সেই দৃষ্টিভঙ্গীতে সামিল হন। তারা এই ঘটনাগুলিতে অভিযুক্তকে যথাযথ শাস্তি দেবার বদলে প্রায়শই আপোষ মীমাংসার রাস্তায় হাঁটতে চান ও অপরাধ এইভাবে লঘু হয়ে যায়। সেইসঙ্গে তৈরি হয় এই ধরনের মারাত্মক পরিণতির সম্ভাবনা। আমাদের পপুলার সংস্কৃতিতেও বিষয়টিকে প্রেমের এক অদ্ভুত প্রকাশ হিসেবে দেখার চল আছে। বিখ্যাত বলিউডি ছবি ‘ডর’ সিনেমাটির মধ্যে, তার ‘তু হাঁ কর ইয়া না কর তু হে মেরি কিরণ’ গানটির মধ্যে যার প্রকাশ খুব স্পষ্ট।

আগেকার ও সমকালের আরো অসংখ্য ঘটনার মতো (যেগুলিতে নারী পুরুষ প্রায়শই একই ধর্মগোষ্ঠীর) নিকিতা তোমার হত্যাকাণ্ড আরো একবার স্পষ্টভাবে দেখিয়ে দিল স্টকিং-কে ভালোবাসার বিচিত্র প্রকাশের পরিবর্তে একটি যৌন উৎপীড়নমূলক অপরাধ হিসেবে দেখাটা ও সেই অনুযায়ী আইনি ব্যবস্থা নেওয়াটা কতটা জরুরি। আইনের একটি ধারাকেও এই প্রসঙ্গে পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন। স্টকিং-এর ঘটনা প্রথমবার আসলে তাকে জামিনযোগ্য বিষয় ও দ্বিতীয়বার থেকে তাকে জামিন অযোগ্য বিষয় হিসেবে দেখার দরকার আছে। কারণ কোনো মেয়েকে কোনও পুরুষ প্রথম প্রেম প্রস্তাব দিলে সেটি নিয়ে কেউ পুলিশে অভিযোগ জানাতে যায় না। তখনি অভিযোগ আসে যখন বারবার একই ঘটনার মধ্যে দিয়ে তাকে বিরক্ত করা হয়, ভয় দেখানো হয়। স্টকিং-এর প্রথম অভিযোগটি অপরাধ বেশ কিছুটা এগিয়ে যাওয়ার পরেই যেহেতু করা হয় তাই প্রথম থেকেই একে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা করে অভিযোগকারিণীকে সুরক্ষা দেওয়া প্রয়োজন। সমাজ ও বিশেষ করে পুলিশ প্রশাসনের তরফে স্টকিং নিয়ে দৃষ্টিকোণ বদলই নিকিতা তোমারদের মর্মান্তিক পরিণতি রুখতে পারে।

- সৌভিক ঘোষাল    

খণ্ড-27
সংখ্যা-39