আবেদন
২৭ ডিসেম্বর মোদীর ‘মন কি বাত’ চলাকালীন দেশ জুড়ে ‘থালি বাজাও’ কর্মসূচীর আহ্বান
hhhh

আগামী ২৭ ডিসেম্বর সর্বনাশা কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে কৃষকদের ‘দিল্লি চলো’ অভিযানের এক মাস পূর্ণ হতে চলেছে। ব্যারিকেড – লাঠি – কাঁদানে গ্যাস – জল কামান সমস্ত বাধা অতিক্রম করে দেশের রাজধানীর বুকে গত এক মাস যাবত চলছে পৃথিবীর ইতিহাসের অন্যতম বড় কৃষক আন্দোলন। প্রবল ঠাণ্ডার মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার ও গোদি মিডিয়ার সব আক্রমণ, ষড়যন্ত্র, বাধা, প্রলোভন, মিথ্যা প্রচারের মোকাবিলা করে পূর্ণ উদ্যমে সাহসী লড়াইয়ের এক অনন্য নজির সৃষ্টি করেছেন দেশের অন্নদাতারা। পাঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান, উত্তরাখণ্ড, উত্তরপ্রদেশ সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের কৃষকরা এই মুহূর্তে দিল্লি – হরিয়ানার সিঙ্ঘু ও তিকরি বর্ডার, দিল্লি – উত্তরপ্রদেশের গাজীপুর বর্ডার, হরিয়ানা-রাজাস্থানের শাহাজাহানপুর বর্ডারে সমস্ত প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে শান্তিপূর্ণ অবস্থান চালাচ্ছেন। ইতিমধ্যেই ৩৪ জন কৃষক এই আন্দোলন চলাকালীন শহীদের মৃত্যু বরন করেছেন। দেশের কৃষিকে আম্বানি আদানির কর্পোরেটরাজের গ্রাস থেকে বাঁচাতে, কৃষি আইন ও বিদ্যুৎ সংশোধন বিল ২০২০ বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন থেকে এক পা পিছু হটবেন না সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তাঁরা। সারা দেশের সমস্ত বাম গণতান্ত্রিক দল, বিভিন্ন ছাত্র যুব শ্রমিক মহিলা সংস্কৃতিক গনসংগঠনগুলিও এই লড়াইয়ে সক্রিয় সমর্থন জানিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছে। ৮ ডিসেম্বর দেশ জুড়ে কৃষি আইন বাতিলের দাবিকে সামনে রেখে ঐতিহাসিক ভারত ধর্মঘট হয়েছে। যে কর্পোরেটদের সুবিধা করে দিতে মোদী সরকার এই আইন এনেছে, আন্দোলনস্থল থেকে সংযুক্ত কিষান মোর্চা ও সারা ভারত কৃষক সংঘর্ষ সমন্বয় কমিটি দেশবাসীর কাছে সেই আম্বানি আদানির সমস্ত পণ্য বয়কট করার আহবান জানিয়েছে। ১৪ ডিসেম্বর সারা দেশের রিলায়েন্স, আম্বানি, আদানির বিপণির সামনে চলেছে বিক্ষোভ, ব্যাপক হারে জিও সিম বয়কট চলছে এর সাথেই। ২৩ ডিসেম্বর কৃষকদের ডাকে সারা দিয়ে দেশের মানুষ অনশনে সামিল হয়েছেন। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কৃষকরা দিল্লির বুকে পৌঁছে যাচ্ছেন, নয়া উদ্যমে ক্রমেই জোরদার হচ্ছে  আন্দোলন। শিশু থেকে মহিলা, কিশোর থেকে বৃদ্ধ বিভিন্ন বয়সের আন্দোলনকারীদের প্রতিবাদের ধরনেও রয়েছে অভিনবত্ব। বক্তব্য, স্লোগান, গান, কবিতা, গ্রাফিতি, ওয়াল আর্টের পাশেই ছাত্র সংগঠন AISA-র উদ্যোগে চালু হয়েছে ‘শহীদ ভগত সিং’ লাইব্রেরী। সিপিআই(এমএল)-এর চিকিৎসক কমরেডদের সহযোগিতায় চলছে মেডিকেল ক্যাম্প।

এই সংবেদনশীল পরিস্থিতিতেও গঙ্গাবক্ষে প্রমোদ ভ্রমণ ও রাজে রাজ্যে বিধায়ক সাংসদ কেনা বেচা করতে ব্যস্ত দেশের প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী। একবারের জন্যও আন্দোলন স্থলে গিয়ে কৃষকদের সাথে কথা বলার সময় তাঁদের হয়নি। এই পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলনের এক মাস পূর্তিতে আগামী ২৭ ডিসেম্বর নরেন্দ্র মোদীর ‘মন কি বাত’ চলাকালীন দেশ জুড়ে ‘থালি বাজাও’ কর্মসূচীর ঘোষণা করা হয়েছে সংযুক্ত কিষান মোরচার পক্ষ থেকে। মার্চ মাসে কোভিড অতিমারী ছড়াতে শুরু করার প্রথম দিকে মোদী সরকার অপরিকল্পিত লকডাউন, থালি বাজাও আর প্রদীপ জ্বালাও এর ঘোষণা মনে আছে দেশবাসীর। বধির কেন্দ্র সরকারের কাছে নিজেদের ন্যায্য দাবি পৌঁছে দিতে সেই ‘থালি বাজাও’ কেই প্রতিবাদের এক অভিনব হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছেন কৃষকেরা। আসুন অন্নদাতাদের পাশে দাঁড়াই। এ লড়াই বাঁচার লড়াই, এ লড়াই জিততে হবে।

খণ্ড-27
সংখ্যা-46