প্রতিবেদন
ভারত বনধ তুলে ধরেছে দেশব্যাপী প্রতিরোধ ও সংহতির বার্তা
bbar

মাত্র তিনদিন আগে ঘোষিত ভারত বনধ যেভাবে সর্বাত্মক মাত্রায় সফল হয়েছে সেটা প্রমান করেছে যে, কৃষক আন্দোলনের প্রতি দেশের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে গড়ে উঠেছে বিপুল সমর্থন ও সংহতি। বনধকে সফল করে তুলতে সারা দেশে এবং এই রাজ্যের বুকে হাজার হাজার কৃষকরা পথে নেমেছেন, অসংখ্য মিছিল,সমাবেশ,সড়ক ও রেলপথ অবরোধ প্রভৃতি আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তারা তুলে ধরেছেন মোদী সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের বার্তা। চরম কৃষি সংকটে আক্রান্ত দেশের কৃষকদের মূল মূল দাবিগুলি,যথা ফসলের ন্যায্য দাম গ্যারান্টি, কৃষি পণ্যের বিপণনে সরকারের ভুমিকা বাড়িয়ে তোলা, ক্ষুদ্র কৃষি সহ সমগ্র কৃষি পরিকাঠামো উন্নয়নে সরকারের বিনিয়োগ বৃদ্ধি -- এ সমস্ত প্রশ্নকে সমাধান না করে সেগুলিকে উল্টো দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া চলবে না। কর্পোরেট পুঁজিপতিদের কৃষকের ত্রাণকর্তা বানিয়ে সরকারী ভুমিকাকে উঠিয়ে দেওয়া চলবে না। কৃষির কর্পোরেটমুখী পুনর্গঠন অর্থাৎ কৃষি উৎপাদন - বানিজ্য, কৃষিজমি, বিদ্যুৎ ক্ষেত্র এ সমস্ত কিছুকে কর্পোরেটদের হাতে তুলে দেওয়া মানছি না।

রাজ্যে রাজ্যে কৃষির বৈচিত্র বা ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ঠ রয়েছে কিন্তু সারা দেশের কৃষকরা তাঁদের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে এই সাধারণ দাবির ভিত্তিতে পথে নেমেছেন। খুলে দিয়েছেন মোদী সরকারের মিথ্যাচারের মুখোশ। প্রমাণিত হয়েছে কৃষকদের এই আন্দোলন কেবল পাঞ্জাব হরিয়ানার নয়, সমগ্র দেশের মানুষের। কোন সন্ত্রাসবাদীদের দ্বারা নয়, আন্দোলনের প্রতি দেশের কৃষক ও শ্রমজীবী মানুষের রয়েছে বিপুল সমর্থন। পাঞ্জাব কিংবা বাংলা, বিহার বা তামিলনাড়ু সমস্ত রাজ্য থেকেই সামনে উঠে এসেছে দেশের কৃষক সমাজের এক সংগ্রামী একতা। পাঞ্জাবের চাষিরা ফসলের সরকারী দর পায়। অথচ বাংলার কৃষকরা সেটা আদৌ পায় না। পাঞ্জাবে সরকারী ক্রয় কেন্দ্র তথা কিষাণ মান্ডি ব্যবস্থা রয়েছে, এর বিপরীতে পঃ বাংলার ক্ষুদ্র ভারত বনধ তুলে ধরেছে দেশব্যাপী প্রতিরোধ ও সংহতির বার্তা চাষিরা সেসব কিছু চোখেই দেখেনি। কিন্তু নয়া কৃষি আইনের ফলে আগামীতে ফসলের সরকারী দর নির্ধারণ বা ক্রয় ব্যবস্থাটাই যে উঠে যাবে এবং তার ফলে সমস্ত চাষিরাই যে এক সাথে-একই রকমভাবে আক্রান্ত হবেন -- এই প্রশ্নে গড়ে উঠেছে এক সাধারণ উপলব্ধি। তাই বনধের দিন দেখা গেলো রাস্তায় নেমে পঞ্জাব হরিয়ানার চাষিদের সুরে সুর মিলিয়ে বাংলার চাষিরা বলেছেন, ফসলের দাম পড়ে যাওয়া ঠেকাতে সরকারের ভুমিকা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, হিমঘর বা ফসল সংরক্ষণের পরিকাঠানো সরকারকেই করতে হবে। চাষিদের স্বার্থ রক্ষায় এসব কাজ পুঁজিপতিরা আদৌ করবে না। চুক্তি চাষ নিয়ে কৃষকদের মধ্যে রয়েছে প্রবল বিরোধীতা। কৃষকের চাষ করার স্বাধীনতা চলে যাবে, অদুর ভবিষৎ এ তাদের জমি হাতছাড়া হয়ে যাবে এ জায়গা থেকেই তারা কৃষি আইন বাতিলের দাবি তুলে ধরেছেন। এনআরসি বা কাশ্মীর নিয়ে কেন্দ্রীয় শাসক দলের পান্ডাদের যে মাত্রায় আক্রমণাত্মকভাবে বিষাক্ত প্রচার করতে দেখা গিয়েছিল। কিন্তু কৃষি আইন নিয়ে তাদের ব্যাপক মানুষের বিরোধীতার মুখে পড়তে হচ্ছে। শ্রেণীর প্রশ্নে বিভাজনের রাজনীতি কিছুটা বেকায়দায় পড়েছে এটা নিশ্চিত।

বনধের দিনে দেশের বড় বড় শহর থেকে শুরু করে শিল্পাঞ্চল কিংবা মফস্বল গঞ্জ-শহর সর্বত্রই ব্যাপক শ্রমিক শ্রেণী সহ মেহনতি মধ্যবিত্ত মানুষ কৃষকদের আন্দোলনের প্রতি সহানুভূতি ও সংহতি জানিয়েছেন। তথ্য প্রযুক্তি কর্মী থেকে শুরু করে শিক্ষক অধ্যাপক, আইনজীবী সমাজের সর্বক্ষেত্রেই অন্নদাতাদের আন্দোলনের প্রতি সমর্থন দেখা গেছে। সব মিলিয়ে যে গণরায় উঠে এসেছে তা হলো মোদী সরকারকে অবিলম্বে নয়া কৃষি আইন প্রত্যাহার করতে হবে। সরকার যতই গায়ের জোরে কর্পোরেট স্বার্থবাহী নয়া কৃষি আইন পাশ করুক না কেন, কৃষকের জীবন-মরণের প্রশ্নগুলির ফয়সালা রাস্তার লড়াইয়ের মাধ্যমেই করতে হবে। মোদী সরকারকে এই গণরায়কে মেনে নিতেই হবে।

- জয়তু দেশমুখ    

খণ্ড-27
সংখ্যা-44