খবরা-খবর
সাবিত্রীবাই ফুলের জন্মবার্ষিকী : ভালোবাসা-বিরোধী ও কৃষক-বিরোধী আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ
sa

৩ জানুয়ারী ২০২১ ছিল সাবিত্রীবাই ফুলের ১৯০তম জন্মবার্ষিকী। ভারতে নারীশিক্ষা ও জাতবিরোধী লড়াইয়ের অগ্রদূত সাবিত্রীবাই। দেশজুড়ে মেয়েরা ঐদিন প্রতিবাদী জমায়েত সংগঠিত করে ভালোবাসা-বিরোধী ও কৃষক-বিরোধী আইনগুলি প্রত্যাহারের দাবিতে। উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, হরিয়ানা, মধ্যপ্রদেশ, কর্ণাটক সহ বিভিন্ন রাজ্যের বিজেপি সরকারগুলি কোথাও ইতিমধ্যেই আইন এনেছে বা আইন আনার প্রকৃয়া শুরু করেছে ধর্ম-পরিচিতির গণ্ডির বাইরে ভালোবাসা ও বিবাহকে নিষিদ্ধ করতে। এই আইনগুলি নাৎসি জার্মানির ‘রক্তের বিশুদ্ধতা’ আইনের অনুকরণে লাগু হচ্ছে এবং এগুলি নারীস্বাধীনতার ওপর এবং মুসলমান নারী-পুরুষের সমমর্যাদা ও সমানাধিকারের ওপর হিংস্র আক্রমণ। সারা দেশে কৃষকেরা তিনটি কৃষক-বিরোধী আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে। ভালোবাসা-বিরোধী ও কৃষক-বিরোধী এই আইনগুলি ভারতের সংবিধানের ওপর আক্রমণ।

৩ জানুয়ারী থেকে ৯ জানুয়ারী সাবিত্রীবাই ও তার সহযোদ্ধা তথা সহশিক্ষিকা ফতিমা শেখের স্মরণে ব্রাহ্মণ্যবাদ, পিতৃতন্ত্র ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সারাভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতি (সাভাপ্রমস) অভিযানের ডাক দেয়। বিজেপি ও আরএসএস আজ সাবিত্রী-ফতিমার বন্ধুত্ব, ঐক্য ও প্রগতিশীল মূল্যবোধের ঐতিহ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। ব্রাহ্মণ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে সাবিত্রী ও ফতিমা তাঁদের দুঃসাহসিক জীবন ও সংগ্রামে যে অধিকার অর্জন করেছিল তা রক্ষা করতে শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছে সাভাপ্রমস।

বিহারের সবকটি জেলায় এবং পাটনা শহরের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিবাদসভা সংগঠিত হয় যেখানে বালিকা ও মহিলারা জমায়েত হয় ও সাবিত্রী-ফতিমার স্মরণে গ্রন্থাগার গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। বারানসী শহরে সাভাপ্রমসের কর্মীরা গভমেন্ট গার্লস স্কুলের ছাত্রীদের সাথে এক আলোচনার আয়োজন করে তাদের ব্রাহ্মণ্যবাদ, পিতৃতন্ত্র ও সাম্প্রদায়িকতা সম্পর্কে বোধ গড়ে তোলার জন্য চর্চা চালায়। রাজস্থানের উদয়পুরে সাভাপ্রমসের নেতৃত্বে অনুরূপ শপথ নেওয়া হয়।

ve

 

৩ জানুয়ারী ছিল সংবিধানসভার অন্যতম সদস্য জয়পাল সিং মুণ্ডারও জন্মবার্ষিকী, যিনি দলিত আদিবাসী ও মহিলাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিশেষ সোচ্চার ছিলেন। পশ্চিমবঙ্গে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরে আইসা ও সাভাপ্রমস একযোগে প্রতিবাদ সভা সংগঠিত করে। সিপিআই(এমএল) বাঁকুড়া জেলা কমিটির সদস্য ফারহান হোসেন খান, আইসা নেতা বিল্টু ক্ষেত্রপাল ও ক্লাস সেভেনের ছাত্রী আসপিয়া খাতুন সাবিত্রীবাই ও ফতিমার জীবন ও সংগ্রাম ও জয়পাল সিং মুণ্ডার কথা তুলে ধরে সেই সংগ্রাম এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন।

কলকাতায় ৬ জানুয়ারী যাদবপুরের মন্ডলপাড়া ও ঢাকুরিয়ার গাঙ্গুলিপুকুরে দুটি আলোচনা সভা হয়। মণ্ডলপাড়ায় কমরেড মমতা ঘোষের নেতৃত্বে আলোচনা চলে। সাবিত্রীবাই ফুলে ও ফতিমা শেখের বিপ্লবী ঐতিহ্যো ও আদর্শের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে মূখ্য বক্তা ছিলেন কল্যাণী ঠাকুর চাড়াল। তিনি বলেন, ভারতের ইতিহাস চর্চা সাধারণত উচ্চবর্গের মনীষীদের নিয়েই সীমিত থাকে, বাবসাহেব আম্বেদকার বা হারচাঁদ গুরুচাঁদ বা জোতিরাও ফুলে সাবিত্রীবাই ফুলেদের কী ভুমিকা ছিল ভারতের ইতিহাসে তা নিয়ে চর্চা করা দরকার। তিনি দলিতদের নিপীড়নের ইতিহাস তুলে ধরেন। ভীমা কোরেগাঁওয়ের কথা বললেন। এই বাংলাতেও যে নীচু জাতের মানুষদের ছায়া মারান হত না এইসব কথা বলতে গিয়ে তিনি তার নিজের পারিবারিক অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। ভাষার মধ্যে লুকিয়ে থাকা জাতিহিংসার কথা বলেন এবং সাবিত্রীবাই ফুলের জীবন ও সংগ্রামের কথা তুলে ধারেন। সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতির রাজ্য সম্পাদিকা ইন্দ্রাণী দত্ত সহ অন্যান্য বক্তারা সাবিত্রী-ফতিমার ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের ঐতিহ্য রক্ষার আহ্বান রাখেন ও ভালোবাসা-বিরোধী আইন ও কৃষক-বিরোধী আইনগুলি প্রত্যাহারের দাবি তোলেন।

খণ্ড-28
সংখ্যা-1