বিবৃতি
দিল্লী পুলিশের “টুলকিট এফআইআর” প্রসঙ্গে সিপিআই(এমএল)
FIR by Delhi Police

(১৭ ফেব্রুয়ারী জারি করা এই বিবৃতিটিতে দিল্লী পুলিশের হাতে পরিবেশ কর্মী দিশা রবির অবৈধ গ্ৰেপ্তারির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এবং অবিলম্বে তাঁর ও গ্ৰেপ্তার হওয়া অন্যান্যদের মুক্তির দাবি জানানো হয়েছে। বিবৃতিটির ভাষান্তর করে ছাপানোর উদ্যোগ যখন চলছে, প্রাপ্ত শেষ খবরে তখন জানা গেল, দিল্লীর একটি আদালত দিশা রবির জামিন মঞ্জুর করে তাকে মুক্তি দিয়েছে।)

দিল্লী পুলিশের “টুলকিট এফআইআর” মোদী সরকারের চালানো টুলকিট-এরই অংশ, যার উদ্দেশ্য হল বিরোধী মতকে দমন করা ও শাস্তি দেওয়া এবং ভারতে গণতন্ত্রের কণ্ঠ রোধ করা। “টুলকিট” বস্তুত কোন বিষয়ে সমর্থনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার এক নথি, যাতে কৃষক আন্দোলন সম্পর্কে অবহিত না থাকা মানুষদের জন্য কৃষক আন্দোলনের মূল বিষয়গুলোর ব্যাখ্যা থাকে এবং হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করা, ভিডিও তৈরি করা এবং প্রতিবাদ সংগঠিত করার মধ্যে দিয়ে আন্দোলনে সমর্থন জানাতে উৎসাহিত করা হয়। এগুলো সবই গণতান্ত্রিক প্রতিবাদের অপরিহার্য কার্যকলাপ। এই সমস্ত সক্রিয়তাকে ফৌজদারি অপরাধ বলে দাগিয়ে দেওয়াটা মোদী সরকারের স্বৈরাচারী চরিত্রকেই প্রকটিত করে।

দিল্লী পুলিশ সরাসরি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণাধীন। তারা চরম বেআইনিভাবে বেঙ্গালুরুতে পরিবেশ কর্মী দিশা রবির বাড়িতে জোরজবরদস্তি ঢুকে তাকে কর্নাটক থেকে দিল্লীতে নিয়ে আসে, এবং এই পথে একগুচ্ছ বৈধ ও সাংবিধানিক সুরক্ষাবিধির লঙ্ঘন ঘটায়। দিল্লীতে করা তুচ্ছ কোনো এফআইআর-এর অছিলাকে মোদীর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক যদি ভারতের যে কোনো প্রান্তের যে কোনো নাগরিকের গ্ৰেপ্তারির অস্ত্র করে তোলে তবে তা যুক্তরাষ্ট্রীয়তা ও গণতন্ত্রের ওপর এক কদর্য আঘাত হয়েই দেখা দেয়। কর্নাটকের বিজেপি সরকার যে কর্নাটকের জনগণের অধিকার ও স্বাধীনতাকে জলাঞ্জলি দিয়ে এই ঘটনায় দিল্লী পুলিশ ও কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি মদত যোগায়, তা গোটা বিষয়টাতে আরো কলঙ্ক লেপন করেছে।

আমরা দাবি জানাচ্ছি — দিশা রবি, নিকিতা জেকব ও অন্যান্য পরিবেশ কর্মীদের বিরুদ্ধে এবং কৃষক আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে দায়ের করা সমস্ত মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করে নিতে হবে, এবং এই ব্যাপারে গ্ৰেপ্তার হওয়া সমস্ত ব্যক্তিকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে।

মোদী সরকার এই যুবা পরিবেশ কর্মীদের শত্রু বলে গণ্য করে, কেননা, তাঁরা আদানি ও আম্বানির মালিকানাধীন স্যাঙাতি কোম্পানিগুলোর সুবিধা করে দিতে পরিবেশ বিধিসমূহকে লঘু করে তোলার মোদী সরকারের নীতিকে ধারাবাহিক ও সফলভাবে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন।

অহিংস প্রতিবাদ এবং আইন অমান্যকে ফৌজদারি অপরাধ বলে দাগানো চলবে না। বিপরীতে, ঘৃণা ও হিংসার পক্ষে চালানো প্রণালীবদ্ধ প্রচারের বিরুদ্ধেই ফৌজদারি অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ দায়ের করতে হবে। আমরা দাবি জানাচ্ছি — দিল্লী পুলিশকে এই প্রশ্নের জবাব দিতে হবে যে, হিংসায় যুক্ত থাকা ভিড়কে উস্কিয়ে তুলেছিলেন ও পরিচালিত করেছিলেন যাঁরা সেই কপিল মিশ্র ও কোমোল শর্মার মতো বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে এখনও অভিযোগ দায়ের করা বা তাদের গ্ৰেপ্তার করা হচ্ছে না কেন? কপিল মিশ্র সোশ্যাল মিডিয়ায় কারখানা খুলে ঘৃণার যে কারবার চালাচ্ছেন, তার বিরুদ্ধে দিল্লী পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন? দিল্লী পুলিশ ভারতের সংবিধানের কাছে দায়বদ্ধ এবং “আমরা, ভারতের জনগণ”-এর কাছে জবাবদিহি করতে তারা বাধ্য।

- সিপিআই(এমএল) কেন্দ্রীয় কমিটি 

খণ্ড-28
সংখ্যা-7