বিবৃতি
বাংলার প্রতিটি কৃষক পরিবারের সাথে বঞ্চনা করছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি
bengal

কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা পাওয়ার শর্ত হিসেবে বাংলার নির্বাচনে বিজেপির জয়কে যুক্ত করার হীন প্রচেষ্টা চালালেন প্রধানমন্ত্রী। কিছুদিন আগে হলদিয়ায় একটি নির্বাচনী জনসভায় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা করেছেন যে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পরই কিষাণ স্কিমে বাংলার কৃষকের বকেয়া অর্থ মিটিয়ে দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ধিক্কার জানিয়ে অখিল ভারতীয় কিষাণ সংঘর্ষ সমন্বয় কমিটি (এআইকেএসসিসি)র পশ্চিমবঙ্গ শাখা ৯ ফেব্রুয়ারী ২০২১ একটি প্রেস বিবৃতিতে দাবি জানিয়েছে যে, কেন্দ্রের কিষাণ সম্মান নিধি প্রকল্পে বাংলার প্রতিটি কৃষক পরিবারের পাওনা ১৪০০০ টাকা রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের সমন্বয়ে অবিলম্বে ও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মিটিয়ে দিতে হবে। পাওনা টাকা আদায়ের দাবিতে এআইকেএসসিসি’র শরিক সংগঠনেরা কৃষক অধিকার যাত্রা শুরু করছে, পঞ্চায়েত, ব্লক ও জেলা স্তরে কৃষকদের নিয়ে গণ-বিক্ষোভ সংগঠিত করবে এবং প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী সহ বাংলার সব সাংসদ ও বিধায়কদের দাবিপত্র পাঠাবে।

প্রেস বিবৃতিতে বলা হয়, কিষাণ নিধি স্কিম জনগনের অর্থে কেন্দ্রীয় সরকারের একটি প্রকল্প যা ১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯ তারিখে ঘোষিত হয়েছিল। কিন্তু এটা প্রযোজ্য করা হয় ১ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখ থেকে, অর্থাৎ ঘোষণার তারিখের আগের থেকে। এই স্কিমের আওতায় ভারতের সমস্ত কৃষক প্রতি বছর ৬০০০ টাকা আর্থিক সহায়তা পাওয়ার যোগ্য। ২০০০ টাকার ৩ কিস্তিতে এই সহায়তা দেওয়া হবে, যার নির্দিষ্ট তারিখ ১ এপ্রিল, ১ আগস্ট  এবং ১ ডিসেম্বর। দুর্ভাগ্যক্রমে, শুরু থেকেই বাংলার কৃষকরা এই স্কিমের অর্থ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছেন কারণ রাজ্য সরকার আবেদনকারী কৃষকদের তথ্য যাচাই করে দেয়নি। কেন্দ্র সরকারও তার নিজস্ব তথ্যভাণ্ডার এবং ব্যবস্থার সাহায্যে বাংলার কৃষকরা যাতে এই অর্থ পান তা নিশ্চিত করার জন্য কোন চেষ্টা করেনি। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী রাজ্য বিধানসভায় বলেছেন যে রাজ্য সরকার কেন্দ্র সরকারকে চিঠি লিখে জানিয়েছে যে রাজ্য সরকার তথ্য যাচাই প্রক্রিয়া দ্রুততার সাথে করে দিতে সম্মত হয়েছে। তিনি আরও বলেছেন যে রাজ্য সরকার ৬ লাখ কৃষকের তথ্য কেন্দ্র সরকারের কাছ থেকে পেয়েছেন যাচাইয়ের জন্য এবং ইতিমধ্যে ২.৫ লাখ কৃষকের দাবি যথাযথ বলে রাজ্য সরকার কেন্দ্র সরকারকে জানিয়ে দিয়েছে। তবু টাকা আসছে না কেন। কিষাণ স্কিমে বাংলার কৃষকের আবেদনের সংখ্যা এবং তথ্য এবং কৃষকদের তথ্য যাচাইয়ের সঠিক পরিসংখ্যান ইত্যাদির সঠিক চিত্র প্রকাশ করার দাবি এআইকেএসসিসি রাজ্য এবং কেন্দ্র, উভয় সরকারের কাছেই জানাচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর এই বিবৃতি সত্ত্বেও দেখা যাচ্ছে এখনও অবধি বাংলার কোনো কৃষক কেন্দ্র সরকারের থেকে কিষাণ স্কিমের এক পয়সাও আর্থিক সাহায্য পায়নি। এআইকেএসসিসি’র দাবি যে রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্র সরকার অবিলম্বে এবং যুদ্ধকালীন তৎপরতায় একে অপরের সাথে সমন্বয় সাধন করুন এবং : (১) রাজ্য সরকার ১৫ দিনের মধ্যে সমস্ত যোগ্য কৃষকদের নিবন্ধনের জন্য পঞ্চায়েত স্তরে শিবির স্থাপন করুন (২) নিবন্ধনের ৭ দিনের মধ্যে রাজ্য সরকার যোগ্য কৃষকদের সমস্ত নথি যাচাই সম্পূর্ণ করুন (৩) কেন্দ্র সরকার বাংলার কৃষকদের বকেয়া দেবার জন্য কিষাণ প্রকল্পে যথাযথ পরিবর্তন করুন (৪) কেন্দ্র সরকার, রাজ্য সরকারের তথ্য যাচাই সম্পূর্ণ হওয়ার ৭ দিনের মধ্যে সমস্ত নিবন্ধিত ও যোগ্য কৃষকদের ১২০০০ টাকার পুরো বকেয়া অর্থ প্রদান করুন।

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য অনৈতিক, অবৈধ, অসাংবিধানিক ও রাজনৈতিক সুবিধাবাদের জঘন্য নিদর্শন। এর আগে বিহার নির্বাচনের সময় কোভিড ভ্যাক্সিন ফ্রি পাওয়া না পাওয়া প্রসঙ্গেও একই কথা বিজেপি বলেছিল। সারা ভারতের সব কৃষক যাকে খুশি ভোট দিয়ে কিষাণ স্কীমের অর্থ পাওয়ার যোগ্য হয়েছেন ও পেয়েছেন, তাহলে প্রশ্ন উঠছে বাংলার কৃষকরা শুধুমাত্র বিজেপির পক্ষে ভোট দিলে তবেই এই স্কীমে অর্থ পাওয়ার যোগ্য হবেন, এটা কি করে হতে পারে? কেন্দ্র সরকারের একটি যোজনার বকেয়ার টাকা পাওয়ার বিষয়টা রাজ্যে বিজেপি’র নির্বাচনী সাফল্যের সাথে কিভাবে জুড়ে দিতে পারেন প্রধানমন্ত্রী? বকেয়া মিটিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে রাজ্য সরকারের কোনো ভুমিকা বা করণীয় নেই – একমাত্র প্রধানমন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণের কেন্দ্র সরকারই সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন বাংলার ২২ লক্ষ কৃষক কিষাণ স্কিমে নিবন্ধন করিয়েছেন – প্রধানমন্ত্রী তাদের কীভাবে বঞ্চিত করার অধিকারি হলেন?

খণ্ড-28
সংখ্যা-5