আবেদন
কেন্দ্রের নয়া কৃষি আইন, শ্রম কোড ও দেশ বেচার বিরুদ্ধে ২৭ সেপ্টেম্বর ভারত বনধ্ সর্বাত্মক সফল করুন
27th of September India Bandh

৭৫ বছরের স্বাধীন ভারতবর্ষ নজীরবিহীন এক ঘটনার স্বাক্ষর রাখতে চলেছে আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর।

এই প্রথম কৃষকদের ডাকে, তাঁদের নেতৃত্বে সংগঠিত হতে চলেছে ভারত বনধ্। পৃথিবীর বুকে সবচেয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা কৃষক আন্দোলন কেন্দ্রের ফ্যাসিস্ট বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে গত দশ মাসেরও অধিক সময় ধরে যে হার-না-মানা অদম্য মনোবল নিয়ে দাঁত কামড়ে লড়াই জারি রেখেছে, তা আজ নতুন এক রাজনৈতিক উচ্চতায় প্রবেশ করছে। সংযুক্ত কিষাণ মোর্চার ডাকে ২৭ সেপ্টেম্বর ভারত বনধকে সক্রিয় সমর্থন করতে, তাঁদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মোদীর বিরুদ্ধে দুর্ভেদ্য ব্যারিকেড গড়ে তুলতে এগিয়ে এসেছেন ভারতবর্ষের শ্রমিকশ্রেণি, ছাত্র-যুব ও নারী সমাজ, সর্বস্তরের আম জনতা, বিজেপি বিরোধী প্রায় সমস্ত রাজনৈতিক দল।

গোটা দেশ ও দেশবাসী যখন কোভিড অতিমারিতে বিধ্বস্ত, বিপর্যস্ত, তখন এই মোদী সরকার জাতি ও জনগণের গভীর দুঃসময়ে ফায়দা তুলতে মাঠে নেমে পড়ে। সংসদে বর্বর সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে আস্তিন গুটিয়ে জবরদস্তি পাস করিয়ে নেয় নতুন কোম্পানিরাজের স্বার্থবাহী তিনটি কৃষি বিল, শ্রমিকদের নতুন করে দাসে পরিণত করতে চারটি শ্রম কোড, চরম জনবিরোধী বিদ্যুৎ আইন (সংশোধনী), কর্পোরেটদের স্বার্থে নয়া শিক্ষা বিল। সংসদীয় রীতিনীতিকে তামাশায় পরিণত করে কোনো ধরনের আলাপ আলোচনা ছাড়াই ঝড়ের গতিতে পাস করালো ওই সমস্ত বিল — কাঠপুতুল রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে সই করিয়ে যা আজ আইনে পরিণত। সংসদের অধিবেশন শেষ হতে না হতেই দেশবিক্রির নতুন প্রকল্প ন্যাশানাল মানিটাইজেশন পাইপলাইন ঘোষণা করা হল। গোটা কৃষক সমাজ যে কৃষি আইনকে কর্পোরেটমুখী কৃষি ব্যবস্থা ধ্বংসকারী হিসাবে আখ্যা দিয়েছে, মোদী সরকার তাকেই কৃষি ও কৃষক স্বার্থবাহী বলে মেনে নেওয়ার জন্য গা-জোয়ারি করছে। একদিকে, নিজের কর্পোরেট দোস্তদের দরাজ হাতে দিয়েছে বিপুল কর ছাড়, আর অন্যদিকে গত একবছরে সাধারণ মানুষদের জন্য বরাদ্দ রান্নার গ্যাসে যে ভর্তুকি ছিল সেই খাতে ২০ হাজার কোটি টাকা গায়েব করে সরকার নিজের কোষাগারে ভরেছে। মাত্র একবছরে ভোজ্য তেলের দাম বাড়ল ৫২ শতাংশ। পেট্রোপণ্য সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সমস্ত জিনিসের দাম হল আকাশ ছোঁয়া। তার সাথে আছে কাজ হারা মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি। গত ৭০ বছর ধরে স্বাধীন ভারত আমার আপনার শ্রম, মেধা ও করের টাকায় যে সরকারি সম্পত্তি তিলে তিলে গড়েছিল, আজ মোদী সেই সমস্ত কিছু জলের দরে বেচে দিচ্ছে কর্পোরেটদের ভোগ করতে। আগামী প্রজন্মের অধিকার ও প্রয়োজনগুলিকে বন্ধক রেখে দেশের সম্পদকে তুলে দেওয়া হচ্ছে মোদী মিত্রদের হাতে। বিনিময়ে বিজেপির নির্বাচনী তহবিল ফুলে ফেঁপে ওঠা।

ঝুঠা জাতীয়তাবাদের স্লোগান তুলে গোটা দেশটাকেই কর্পোরেটদের কাছে বেচে দেওয়ার মরিয়া অভিযানে নেমেছে মোদী সরকার। এরজন্য গণতন্ত্রের সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে তছনছ করে, বুনিয়াদি সাংবিধানিক নাগরিক অধিকারগুলোকে শিকেয় তুলে কায়েম করেছে এক ফ্যাসিস্ট রাজ। কর্পোরেটদের দাপটে সংসদে তৈরি হচ্ছে চরম জনবিরোধী সব আইন। প্রতিবাদ করলে ইউএপিএ নতুবা দেশদ্রোহ আইনে কারাবন্দী। পেগাসাসের গোয়েন্দাগিরি। আছে বিভাজনের রাজনীতি।

তাই, রাস্তাই আজ একমাত্র রাস্তা। জনতার দুর্বার গণসংগ্রামের গর্ভেই আবার জন্ম নেবে নতুন আইন। আর, স্বাধীনতার ৭৫ বছরে দেশ ও গণতন্ত্র বাঁচাতে মোদী জমানাকে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করেই অবসান ঘটাতে হবে এই ফ্যাসিবাদী রাজত্ব। সেই লক্ষ্যেই আসুন আমরা সকলে মিলে আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর ভারত বনধ্কে সর্বাত্মকভাবে সফল করে তুলি। আমাদের দাবি হল,
    • তিনটি কৃষি আইন বাতিল কর।
    • চারটি শ্রম কোড ফিরিয়ে নাও।
    • বাতিল কর নয়া বিদ্যুৎ আইন।
    • জাতীয় মানিটাইজেশন পাইপলাইন প্রকল্প বন্ধ কর।
    • ২৭ সেপ্টেম্বর ভারত বনধ্ সফল কর।

সংগ্রামী অভিনন্দন সহ,
ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী লেনিনবাদী) লিবারেশন,
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি

খণ্ড-28
সংখ্যা-33